একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা?
- ফয়জুস সালেহীন ২৫-০৪-২০২৪
ট্রাফিক সিগন্যালে পাজেরো গাড়িতে বসে আছে একজন ধনকুবের।
সিডি প্লেয়ারে মৃদু ভলিউমে বাজছে ভূপেন হাজারিকার "মানুষ মানুষের জন্য।"
ধনকুবের খবরের কাগজে চোখ বুলাতে বুলাতে দৃষ্টি দেয় বাম দিককার আধখোলা জানালায়।
দেখতে পায় একটি পরিত্যক্ত ডাবের খোঁসা নিয়ে তিনটি পথশিশুর কাড়াকাড়ি।
শরীরে তাদের স্হায়ী ময়লা দাগ।যেনো না তাড়ানোর আস্কারা পেয়ে ময়লাগুলো স্হায়ীভাবেই বসবাস করা শুরু করেছে তাদের শরীরে।
দৃশ্যটি ছুঁতে পারেনি ধনকুবের এর হৃদয়,বালিকণার মতো সূক্ষ দৃশ্যটি হৃদয় ছুঁয়ার আগেই চালুনির সূক্ষ ছিদ্র দিয়ে গলিয়ে পড়লো।
আর তাইতো ধনকুবের রইলো ভাবলেশহীন, হলোনা এতটুকু বিচলিত।
এবার ধনকুবের এর দৃষ্টি গিয়ে পড়লো ডান দিককার জানালায়।
দেখলো একখানা মার্সিডিজ বেজ থেমে আছে পাশে। তৎক্ষনাৎ পুড়তে থাকে সে আফসোসে।
তোমার নিজের শিশুটিকে রেখেছো কতোইনা যত্ন আত্তিতে।
১৪/১২ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে টুইন্কল টুইন্কল লিটল ষ্টার আর ভোর হলো দোর খোল আউরাচ্ছে।
মুখরোচক রেসিপির জন্য করে আবদার।
আর এই পথশিশুরা বেড়ে উঠছে খোলা আকাশের নীচে খিস্তিখেউর আউরাতে আউরাতে,
উচ্ছিষ্ট খাবার নিয়ে কাড়াকাড়িতে।
আর কন্যাশিশুগুলো ভুগছে কতোইনা নিরাপত্তাহীনতায়!
হা করে থাকা হায়েনাদের মুখের সামনেই দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে দিবানিশি।
একবার ভেবে দেখেছোকি তাদের কথা মিঃ ধনকুবের?
জানি তোমার ভাবনার রাজ্যে অনুপ্রবেশ ঘটবেনা এসবের।
তোমার ভাবনার রাজ্যেতো বিত্তবাসনার একচেটিয়া রাজত্ব।
বিত্তের এভারেষ্টের চূড়ায় আরোহণের জন্য হয়ে আছো তুমি উন্মুখ।
তুমি আজ দেউলিয়া আমিত্বের করাল গ্রাসে।
অযত্ন অবহেলায় বেড়ে উঠা এই শিশুগুলো থেকে কিইবা পাবে আগামি প্রজন্ম?
আর আমিত্বের রাজ্যে বেড়ে উঠা রাজপুত্র আর রাজকন্যাগণ কতোটুকুই বা পারবে ঘুচাতে ব্যাবধান?
অতঃপর সবুজ বাতিটা জ্বলে উঠলো,ছুটে চললো ধনকুবের এর পাজেরো।
সিডি প্লেয়ারে তখন বাজছে গানটির শেষ লাইন-
"একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা?"
২১|০৪|২০১৫ খ্রীষ্টাব্দ
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।