হাফ মুন
- ফয়জুল মহী ১৭-০৪-২০২৪

নরম, শান্ত আরব সাগর, পানি দেখে বুঝা মুসকিল-চলমান না স্থির। নীল আকাশের ছায়ায় পানিটাও নীল দেখায়। হাওয়ার কারণে কখনো কখনো উচু নিচু ঢেউ খেলে। একঝাক গাঙচিল কিচিরমিচির শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। ওয়াসিফ ভাবতে থাকে গাঙচিলের দেশ কোনটা, বাহারাইন নাকি সৌদি আরব। আয়মন পাশে থেকে মুচকি হাসি বলে এই গাঙচিল গুলির বাড়ী বাংলাদেশ। ঠিক এই সময় একটা চিল উপর থেকে আয়মনের গায়ে বিষ্ঠা ছুড়ে দেয়। তোমার গায়ে বিষ্টা ছুড়ে দিয়ে, দারুণ একটা কাজ করেছে গাঙচিল। তোমাকে একটা উষ্টা মারা দরকার তুমি আমার জন্মভূমিকে অসম্মান করে কথা বলতে চাও। আরে, ওয়াসিফ তুমি রাগ করছো কেন, আমি একটু মজা করেছি।

আয়মন আমি কি তোমার সাথে এমন মজা করতে পারবো? আমি শুনেছি শীত থেকে বাঁচতে সাইবেরিয়া হতে প্রচুর পাখি বাংলাদেশ আসে, কিন্তু অর্ধেকও পরে ফেরত যেতে পারে না পাখিগুলা শিকার হয়। আর ওই গুলা মানুষের রসনা পূজার কাজে লাগে। তোমার দেশের মানুষ কি একবার চিন্তা করে দেখে না এই পাখিগুলি কত হাজার মাইল দূর হতে শুধু শীত থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশ এসে শিকারে পরিণত হচ্ছে?

হাফমুন নৈসর্গ সাগরের জলতরঙ্গ জলের ভিতর মাছের নৃত্য মেঘমুক্ত আকাশ। প্রেয়সী তুমি প্রিয়তমা জন্মভূমি, সাগরের জল তরঙ্গ দারুণ এক নতুন দৃশ্য যেন। ছোট ছোট অচেনা মাছদের নৃত্য দেখতে খুব ভাল লাগছে। মাথার উপর যে আসমান ঠিক যেন বাংলাদেশের মত। কিন্তু সাগরটার কোন মিল নাই পদ্মা মেঘনার সাথে। যেমন মিল নাই রাজনৈতিক রাজাদের। সাগরের ভিতর দেশ (বাহারাইন) চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিতে রাতে মনে হয় যেন পানির ভিতর জান্নাত। ভাবতে গিয়ে মাথায় যেন ঝিমঝিম করে। প্রতি বছর মেঘনা কিংবা পদ্মায় বিলীন হয় হাজার মানুষের বসত ভিটাসহ হাজারো স্বপ্ন। আর ভিটাহারা স্বপ্নহারা মানুষ নিয়া রাজনীতি করে দেশের মালিক নামক স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা।

আমি কেন মরবো সাগরে ঝাঁপ দিয়ে আমি কেন মরবো অন্য কোন দেশের জঙ্গল কিংবা মরু প্রান্তরে? আমি তো কোন রাজনীতি বুঝি না। আমি বুঝি মা যে তার বাবার বাড়ীর সম্পত্তি বিক্রি করে আমাকে ভরণপোষন করেছে তার ঋণ শোধ করতে হবে। আমি বুঝি ঘরে বিয়ের উপযুক্ত যে বোন আছে তাকে বিয়ে দিতে হবে ধর্ষিত হওয়ার আগে। আমি বুঝি প্রিয়তমার ভালবাসা পেতে হবে। কেন দেশটা স্বাধীন হল, আমার অধিকার কোথায়? আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা বলে পাকিস্তানি আর্মি এসে দাদি কে প্রচণ্ড জোরে বন্দুক দিয়ে কোমরে আঘাত করে, যার ব্যথা নিয়া দাদি বেঁচে ছিল অনেক বছর। আবার মরেও ছিল সেই ব্যথা নিয়ে। দাদীর সেই ব্যথা যেন আমার বুকটাতে সংক্রমিত হয়েছে। আজ-কাল সেই ব্যথাটা আমাকেও পীড়িত করে। আর কত কাল দেশান্তর থাকতে হবে? চোখ থেকে এক ফোটা, দু'ফোটা করে ফোটা ফোটা নোনা জল আরব সাগরে ভেসে দেয় ওয়াসিফ। তা দেখে আয়মন দ্রুত এসে ওয়াসিফকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমা দিতে থাকে। আমি আন্তরিক দুঃখিত ওয়াসিফ। তোমার দেশপ্রেম দেখে আমি অভিভূত। কিন্তু তোমার দেশের কিছু লোক ও নেতাদের দূর্নীতি, চরিত্রহীন, মিথ্যা, লোভ এবং লালসা তাদের যেন গলার মালা। ওই যে বাড়ী চাই, গাড়ী চাই, কাড়ি কাড়ি টাকা চাই, আসমান চাই, জমিন চাই দুনিয়াতে স্বর্গ বানাই মন মানসিকতা।

আমরা লড়াই করে ভাষা পেয়েছি। আমরা লড়াই করে জমিন পেয়েছি যার নাম বাংলাদেশ। এখন আমরা লড়াই করছি অর্থনৈতিক মুক্তির। তাই দরকার হলে আমরা মাহাথির হবো। দরকার হলে লি কুয়ান ইউ হবো। যেমন লি কুয়ান ইউ যাযাবর জাতিকে খুঁজে দেয় স্থানীয় ঠিকানা। যদিও আমরা হয়ে পড়ি যাযাবর সাইবেরিয়া হতে সাহারা মরুপ্রান্তর বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের ঘর। একটু খানি জননীর হাসি মুখ দেখতে, প্রিয় প্রিয় মানুষগুলি থেকে দূরে সরে অর্থনৈতিক যুদ্ধে আমরা লিপ্ত, এই যুদ্ধে আমাদের জিততে হবেই, হবে।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।