রাণী ফেরদৌসী
- আল আমীন - (অখন্ড) ২৬-০৪-২০২৪

কাঁচা হলুদ চিনেন?
ছোটোবেলায় খেলনা-বাড়িতে রান্না করতাম—
কাঁচা হলুদ ভেঙে!
আমার খুব হাতে নিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে!
যেরকম আস্ত—কাঁচা হলুদ-ভাঙা-মুখে
আঙ্গুল বুলালে রং লেগে যায়—হাতের তালুতেও!...
আমারও মন বলে ওঠে,—ওই বাহুতে
হাত ডললেই বুঝি উঠে আসবে রং—আমার হাতে।
কন্ঠের সুর,—কথা বলার সময় টান টান মুখের চামড়া;
মাপা হাসি,—কেঁপে কেঁপে ওঠা কানের দুলগুলো
দেখলেও বড্ড হিংসে হয় আমার;
রাণী, তোমাকে পরাবো আমি চালতার ফুল—
কানের কাছের চুলগুলোয় গুঁজে দেবো;
আমার ছেলে-মানুষি খেয়ালে সাঁজাবো তোমায়!
উহু! তোমায় এতজনে চায় কেন?—
তোমাকে গোপন করে ফেলবো আমি!
অতগুলো চোখ তোমাকে গিললে
সহ্য হয়না আমার; কানের ভেতর যে স্বাদ তুমি;
মহুয়ার বনে শন্-শন্ শোনাবো তোমায়!
নজরুলের গান খুঁজেছিল যে পিয়ারে,
আমি লালন করেছি যে ফেরদৌসী মুখ—
বুকের ভেতরে, সেই রাণী তুমি;
আপনিই—“তুমি” আমার, শতবার জন্মাবার খায়েশ!
খোদার কাছে করছি পেশ—আমার এ হৃদয়বৃত্তিক সাধ:
“রাণী’র জন্য আমি আরও যৌবণ চাই”!

রাণী, আপনি যখন কথা বলতে থাকেন;
নতজানু বৃদ্ধ হয়ে আমি—মাথা মুড়ে বসি হাঁটুতে,
অবশ হয়ে থাকি আমি,—যেন অসহায়;
এ মুগ্ধতা-ই এক অসহায়ত্ব;—মুখের কথা কেড়ে নেয়!
তোমার গায়ে আমের মুকুলের ঘ্রাণ;
তুমি তো সদাই নববসন্তের ঘামে ভিজে থাকো!
আমি বেলফুল আনতে যাই,—
ছোট্ট-বাচ্চাটির মত খুঁটে আনি কতক—
বেল ফুলের বুলি; হারিয়ে ফেলি আবার!
বকুলের মালা তোমাকে পরাবো—
সে আমার আর সাধ্য আছে কই!
ইচ্ছে হয় আবারও তোমার জঠরে নিষিক্ত হই!
পাগলামি বেড়ে যায়;
তোমার জননে তো অন্য কারো অধিকার!
আমি শুনি তোমাকে—রাণী, দেখি...
আর আমি নিজেকেই করি বারণ!
তোমার মুকুটে যে যৌবণ,
তোমার পোষাকে যে মাতৃঘ্রাণ,
তবু তো তুমি আমার প্রেমিকা নও!
তোমার শরীরের অভিযোজনে—
যে গম্ভীর উত্তাপ; তোমার হাঁটার, শোয়ার
দেহরেখায়, যে পথহারা নদীর বাঁক,—
পাড় ভেঙে একাকার হয়ে যায়,
আমার খুব ইচ্ছে করে খোঁজ নিয়ে দেখতে...
তুমি সুস্থির-আঁট-সাঁট এক মূর্তি,
আমি শোনার প্রয়োজনে কাছে যাই,—
তোমার সকল অঙ্গেই সুর!
গোপনে দেখার কামনায় আড়ালে বসি;
তোমার সবটুকুই মহিয়সী, নিবীড় আতিশয্যে—
তুমি আবার আমায় জন্ম দাও—
হয়তো প্রেমিক রূপে,—না-হয় সন্যাসীর কাপড়ে!
আমি তোমার জন্য আরও যৌবণ চাই ।।

আপনি কী ভীষন তরল নিঃশ্বাসের অধিকারিণী,
রাণী, ফুলে ফুলে ওঠা আপনার নাসিকা-রন্ধ্রে
কত অভিজাত ফোঁস ফোঁস ধ্বনি কাটে!
এত ঐশ্বর্য্যেও—তোমাকে আমি
আকাশের চাঁদ ভাবতে পারিনা;
দূরে থাকা জিনিস আমার হবে কী করে?
ঠোঁটের কাঁপন দেখে যার—
হাওয়ারা বাদ্যযন্ত্র হয়ে বাঁজে;
মন্ত্র ভোলানো চোখের ইশারায় যার—
গলে যায় লৌহদন্ড-বীরের মনও;
যার মুখের প্রতিচ্ছায়ায় মুখোমুখি হলে আগুন—
হয়ে যায় জমাট স্বর্ণ; রাণী,
তোমারে পরাবো কী দিয়ে বানানো মুকুট!
আমার সুধু আছে যৌবণ এতটুক!
কত শৌর্য তোমার বুকে লুটিয়ে দিলে তুমি খুশি?—বলো!
আমি এই যৌবণে দাস হয়ে সেবা করতে পারলেই,
পরের যৌবনে তোমার সম্রাট হবো;
বলো,—কী চাও!
তোমার মাঝেই প্রেম, আদরিণী মা!
তুমি স্বামীর দরদে কত সোহাগিনী!
আমি তোমার জন্য আরও প্রেম চাই!
—প্রেমাস্পদ! এত অহংকারেও কাঁদেন আপনি?
আর কাঁদতেও এত অভিব্যক্তি ধরে রাখেন!
বুঝি না,—কিসের এমন কান্না?
জীবনের সব চেয়ে—বিপদজনক অবস্থায় পড়েছি
—মনে হয়! তোমার চোখের জলকে
দুনিয়াবী বলে ভাবতে বড় দুঃসাধ্য লাগে ।
সোনালী কপোল লেপে যায় নির্ভীক জলের বকুল ফুল,
হেনা-মালঞ্চের সুঘ্রাণ তোমার গালে
আমি একটু হাত বুলিয়ে দিতে পারি না!
ধ্বসে যাই আমি নিজের ভেতর বিপাক নৈঃশব্দে!
বলো কাঁদতে কী প্রয়োজন তোমার মা?
আমাকে বলো; পারলে তোমার কান্না হয়ে যাই!
তোমার ঔরসে জন্ম নেয় কালের জোয়ান,
যুগের অধিপতি—সূর্যচোখা-মহাপুরুষ;
আর তুমি কাঁদো কোন্ অসহায়ত্বে?
গর্ভধারিণী, যখন দেখি—
তোমার মুখে ছিটকে পড়া বেহেস্তের দুয়ারী আলো;
ধুতরা ফুল অমৃত হয়ে যায় তোমার কথায় ।
সত্যিই অসহায় লাগে মহিয়সী,
দিক্-বিদিক জ্ঞান হারাই আমি—
তোমার মুখে অন্য কোনো ছায়া দেখলে ।
স্বর্ণ-ললনা তুমি! সুখ তোমারে দেখে জ্বলে মরুক!

আপনিই জান্নাত এই দুনিয়ার বুকে—
জান্নাতুল ফেরদৌস,—হে “রাণী ফেরদৌসী”!
আপনাতেই মাতৃত্ব, আপনাতেই প্রেম,
আপনাতেই সুখ, আপনাতেই রমণ,—
মোহিণী আপনি—সুখদায়িনী; শীতলতা আপনি
রূপ-বিবসিনী; আপনাতেই জন্মসুখ,
মৃত্যুশোক আপনিই; গর্ভধারিণী, রত্নপ্রসবিণী—
মায়া-বিহ্বলতা আপনিই—সহিষ্ণু মৃত্তিকায় গড়া মা!
আদুরে-আহ্লাদী কন্যা কখনো; বুক জুড়ে থাকা প্রিয়মুখ!
এ জীবনে যে আপনারই খোপায় পরাতে ফুল,
চুরি করে আনে কুমারী হে!
আপনারই কন্ঠে ধারণের লাগি বুঝি নজরুলী যত সুর!
এই সুর যত সুন্দর, রূপসী...
তোমাতেই মরি-বাঁচি আমি আবার!
তোমাতেই সুষমা, তোমাতেই করুণা;
মা তুমি, মেয়ে তুমি, কারো ঘরের ঘরণী ওগো—
জান্নাত-রূপিনী নারী!
আপনি জন্মে জন্মেই জান্নাত;
আজন্মটা-কালই রাণী!
জানেন কি?—আপনি যখন জন্ম নেন মহামানী,
দুনিয়া ঈর্ষার আগুনে কেঁপে কেঁপে পোড়ে সেইক্ষণে;
অসহায় ধরণী ক্রুর নয়নে হয়ে ওঠে স্বার্থপর;
সেই ভূবনের কাছেই জানতে পারি আমি ।
স্রষ্টা তোমাকে সৃষ্টি করেছেন দুনিয়ার—
সকল সৌন্দর্যবোধের পূর্ণ যোগানে ।
আমি কোন চোখে দেখি তোমারে বিদূষিনী,
তুমি তো জগতের সমস্ত রূপ-রসের বহুল-সমষ্টি!
তোমাতেই প্রেম, কাম, মোহ, গন্ধ, রূপ!
জগৎ তোমার চোখেতে লুটায়!
জল-সমুদ্রে ভেজা-ফাল্গুন তুমি,
বাতাসে তোমার চুলের-ছোঁয়া লেগে—
শীতলতা আসে গরবিণী!
আগুনে তোমার শরিরী জোয়ার,
রূপে জ্বালায় ধরিত্রীর সব সুন্দর!
জগৎ-জোড়া খ্যাতি তোমারই পায়ের তলায় ছড়ায় ।
পুরুষ— যে সূর্য তোমাতেই উৎসর্গ করে,
চাঁদ সাঁজায় তোমারে ।
কবর হয় তীর্থস্থান তোমার কামিনী,
কোন বুকে ধরি আমি তোমায়!
পঞ্চাশোর্ধ তোমারে দেখেও যে যুবক
আত্মহুতি দেয়—তোমারইরূপে
—পতঙ্গের মতন:
সেই যৌবণের চোখে তুমি বারবারই
কিশোরী হয়ে ওঠো!
সতী-পদ্ম তোমার বৃন্তস্খলিত হোক—
সে কখনো চাইনা আমি;
তোমার জন্য আরও পদ্ম ফুটুক!


১১.০২.১৬
ঢাকা

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

Roudro
২২-০৪-২০১৬ ১৯:৫৬ মিঃ

bes valo ee laglo.