পোতনায়ক
- ফয়জুল মহী ২৮-০৩-২০২৪

প্রথম পর্ব)--------------------পোতনায়ক----------------- আম গাছের নিচে চৈতালী গরমে সরু দক্ষিনা হাওয়ায় আমার ঘুম এসে যায়.কাল রাত পাশের হিন্দু বাড়ীতে চৈত্র মাসের যাত্রা (স্হানীয় নাম ডাই) দেখে সারা রাত কাটাতে অনেক ঘুম চোখে. রাম-লক্ষনের হ্রদয় ছোয়া কাহিনী ভাবতে ভাবতে ঘুমের ঘরে ডুকতে স্বপ্নে আসে মালতি.মায়াবি হাতে মালতি দম দম বাজনা বাজায় বুকটার মাঝখানে. কিন্তু মালতির ভালবাসা মার কাছে কেন এত তিতা লাগে বুঝি না. আসমান জমিনের ভিতর যেত জ্ঞানী আছে তাদের হতেও বেশী জ্ঞানী হয়ে আমাকে বুঝায়. তাও আবার ভাত খেতে দিয়ে চুপি চুপি যেন বাবা ও অন্যরা না শুনে.আমি মার কথায় মাথা এদিক সেদিক করি. তোর বাপ চাচারা জানলে তোর সাথে সাথে আমাকেও ঘর থেকে বাহির করে দিবে. কেন মা, আপনার কি দোষ?মা আমাকে ভাত খেতে দিয়ে কেন এইসব বলেন, মানুষ বলে ভাত খাওয়া আর ইবাদত করা সমান. আমি কি সারা দিনে তোরে আর কাছে পাই. হা হা হা আমি কি চাঁদের দেশে থাকি মা?মা আমার,চোখ মুছে শাড়ীর আচল দিয়ে আমি তাকিয়ে দিখি মার শাড়ীর করুন অবস্হা. পুরানো টেপ রেকড়িংটার অবস্হা যেন মায়ের শাড়ী হতেও করুন. তারপরও ঘ্যার ঘ্যার করে বেজে উঠে ' বন্ধু আমার রেলগাড়ীর ড্রাইভার" ।(চলবে) (দ্বিতীয় পর্ব)--------------------পোতনায়ক----------------ঘরে আসতে হয় বলে আসা রাত কয়টা বাজে কোন দিন দেখি না.দরজাটা ধাক্কা দিতে খোলে যায় দেখে মনে হয় দরজা খোল যা বলার সাথে সাথে খোলে যায়. গায়ের ঘামযুক্ত গন্দময় শার্টটা ছুটে ফেলে নিভু নিভু হারিকেন হাতে নিয়ে ঘুনে ধরা টেবিলের উপর রাখা খাবারটা পেট নামক ড্রামে ঢালি. হারিকেনের টিম-টিম আলোর মত আমার বাবার আয় রোজগার.বাবা ভবঘুরে বলে দাদা বিয়ে দিল মার সাথে, বিয়ের কিছু দিন পর চার কেজি চাল দিয়ে দাদা মাকে বললো তুমি আলাদা খাও. তারপরও মা আমাকে জম্ন দিলেন. মা বলেন আমিও নাকি বাবার মত নিকর্মা তাই মা যে কোন মুল্যে আমাকে বিদেশ পাঠাতে চান. অনেক পুরাতন একটা গামছা তাও পাচ্ছি না মা যে কি করে আমার জিনিসগুলা. এই গরমে ঘুম আসবে না তারপরও ক্লান্ত অবসাদ শরীলটা বিছানায় এলিয়ে দিই. চালের টিনে ঠিক আমার নাক বরাবর এক বড় ছিদ্র. আর ওই ছিদ্র দিয়ে আকাশের বড় তারাটা আমার কপাল আলো করে. আবার বর্ষায় বৃষ্টির অণুকনায় আমার কপাল ধৌত হয়.সারা শরীল ঘামে একাকার,একটা ফ্যান আছে তাও চলে না কেমন করে চলবে পাঁচ মাসের যে বিদ্যুতের বিল বাকী তাইতো সংযোগ বিচ্ছিন্ন. আর কোন দিন পরিশোধ করাও সম্ভব না,করে লাভ কি এই আছে এই নাই তার নাম বিদ্যুত.পুরাতন জগটা মা ধৌত করতেও ভয় পান যদি ভেঙ্গে যায়. আমিও পানি পান করতে জগটা ধরতে ডর করে. কত করে মাকে বললাম একটা কাচের গ্লাস রাখতে,মা শুধু শুনে কিনেও না রাখেও না আসলে সে টাকা পাবে কোথায় তারপরও আগে একটা প্লাস্টিকের গ্লাস রেখে ছিল তাতে পানি পান করতে মন চায় না. জগের মুখে আমি ডগ ডগ করে গলায় পানি ঢালি যেন শরীলটায় প্রান আসে. আর্সেনিক থেকে আমাকে বাঁচাতে অন্য বাড়ীর নলকুপ হতে নানা প্রতিকুলতায়ও পানি আনে রাখে মা. মায়ের রং রুপ যে কোন মানুষকে বিমোহিত করার মত. অথচ মা আমাকে আর বাবাকে পৃথিবীর সব ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে. বাবা খুব নিরহ মানুষ,আমার সাথে কবে কথা হয়েছে মনেও নাই. সামনে ফেলে খায় না হয় চুপচাপ থাকে. মা বলে বাবা প্রথম এমন ছিল না তবে কাজ-কাম করতে চাইতো না যে দিন থেকে দাদা আলাদা করে দিল সেই থেকে চুপচাপ হয়ে গেল. রুপবতী মা আমার বাল্যকালেই স্বামীর সেবায় মগ্ন হয়. মার কাছে মাঝে মাঝে আমি জানতে চাই কেন তোমাকে এমন লোকের সাথে বিয়ে দিল,মার কান্না কান্না মুখ করে বলে কপালে ছিল. তখন আমি মুখ খোলে অট্রহাসি আর মা রাগ করে. মার কোন অভিযোগ নাই,তবে কথায় বুঝা যায় মা অর্থনৈতিক কিংবা মানসিক কোনটাতে সুখী নয় তারপরও কেন মার অভিযোগ নাই. কারন প্রথম ছিল স্বামী নামক অচল লোকটাই তার দেবতা, ঘটনাচক্রে দেবতার পুত্র জম্নে মা সংসারি,আর পুত্রই এখন মার একমাত্র আরধনা. (চলবে) (তৃতীয় পর্ব)-------------পোতনায়ক-----------মা দশটা টাকা লাগবে. কেন টাকা লাগবে তোর, দুইদিন আগেও তো দশ টাকা দিলাম. আমার কাছে সেলুন দোকানে বাকী ছিল সেটা শোধ করছি. একবার বললে মা কখনো টাকা দেয় না, একবার সে রান্না ঘরে যাবে,এক বার পুকুরে যাবে পানি আনতে আর আমি মার পিছনে পিছনে থাকি. অনেক একদিক সেদিক করে তারপর রান্না ঘরে রাখা পুরাতন একটা কোটা হতে টাকা বাহির করে দেয়. আমি আজও কোনদিন বন্দ্বুদের এক কাপ চা পান করাতে পারিনি বলে সবাই আমাকে দেখলে খানেওয়ালা বলে এই কথা মাকে কেঁদে কেঁদে বলেও কোন লাভ হয়নি. আসলে মা কোথায় পাবে টাকা কিন্তু আমার কি অপরাধ আমিতো চলমান সমাজে বন্দ্বুদের সাথে চলতে হয়.মালতির সাথে দেখা নাই কয়েক দিন হল খুব মনে পড়ছে তাকে. একটা প্যান্ট ধার নিতে হবে তার সাথে ঘুরতে গেলে.রোমান তুমি একটু স্মার্ট হয়ে চলতে পারো না .কেন কি হয়েছে? প্যান্টটা তোমাকে ঠিকভাবে মানানসই হয় নাই.ফেনী রেল স্টেশানের প্রথম শ্রেনী যাত্রীদের বিশ্রামগার .আমি মালতির পাশে বসলাম,তার ব্যবহার করা পারফিউম আমাকে স্বর্গে নিয়ে যায় আরেক বার ধপাস করে দোজখের আগুনে ফেলে আর আমি জ্বলে যাই. পাতলা সিল্ক শাড়ী লেপটে আছে মালতির দেহে.আমি দেখি তাকে ও দেখি তার..আর মরে মরে বেঁচে উঠি. রোমান তোমাকে ভালবাসি. কারন আমি সুদর্শন ও সুপুরুষ. তা ঠিক, তুমি যে ধুমপান করো না তাই আমি অনেক খুশী.তাহলে যে আমি একটা আদর পেতে পারি. আমার খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা যেখানে দুরহ ব্যাপার সেখানে ধুমপান করার মত কাজ কিকরে করি.গরীব মানুষ বিড়ি টানে ইচ্ছে করলে তুমিও টানতে পারো কিন্তু আদর পাবে না কোনদিন কথাটা যেন মনে থাকে.স্টেশান ক্যান্টিনের ধোয়া উঠা সিঙ্গাড়া ও চা পাশে মালতি. (চলবে) ( ৪র্থ পর্ব)------------------পোতনায়ক-----------------তোর বাবার শরীরটা আজ আরো খারাপ হয়েগেছে. শুনে আমার বুকটা কম্পিত হয় বার বার. বাবা কখনো ভাবেনি দাদা এমন করে আলাদা করে দিবে,দাদা ভেবেছিল আলাদা করে দিলে বউ বাচ্চার জন্য হলেও কাজ-কারবারে মন যোগ দিবে.কিন্তু তার বিপরিত হল,বাবা দাদার এমন আচরন মেনে নিতে পারিনি হয়তো. এক চাচার মার প্রতি কুনজর দাদা আর বাবাকে আরো দুরে সরে যেতে সাহায্য করে. সংসার এক বিশাল মহাসাগর আর আমরা ছোট নৌকার যাত্রী মাত্র. অনেক জ্ঞানী-গুনীও সংসার নামক মহাসাগরে ডুবে মরে যায়. সংসারে বউ হয়ে আসা নারীদের খুব কম মানুষ আপন করে নিতে পারে.যদি আমার দাদা আপন করে নিত,যদি আমার দাদা মনে করত তার কবরের পাশে আমার মারও কবর হবে,তার মেয়ে এখন আমার মাও তাহলে কখনো মন বলত না আলাদা করে মাকে অবলা হতেও অবলা করে দিতে. বাবা চুপচাপ থাকলেও,বাবা ঘরের কোনে বিবর্ন বিছানা চাদরে শুয়ে থাকলেও আমার জন্য আমার মার জন্য শীতল নীড় সে. চাচা চায় আমি শহরে থেকে ভাল কোন কলেজে পড়ি.চাচা চায় বাবার জলদি যেন মরন হয়. আমি জানি আমার মা সীতা হতেও সতি.তাই হয়ত মা মালতি হতে আমাকে দুরে সরাতে চায়. মা বাবা কে ভাল একটা ডাক্তার দেখাও না. তোর মামারাও এখন আর টাকা পয়সা দিতে চায় না. তারা বলে তোদের ফেলে চলে যেতে. চলে যাও মা,অন্তত খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারবে. মা থাপ্পড় মারে আমার মুখে.মা ছেলে দুইজনেই হু হু করে কেঁদে উঠি. নারীর জিবন আসলে এক সাহিত্য. স্বামী সন্তান আছে,বেঁচে থাকার অন্ন নাই, রুপ যৌবনে স্বামীর নজর নেই কুনজর পড়ে পরপুরুষের যেখানে ভালবাসার চিহ্ন থাকে না.তা দেখে মনে হয় পুরা আসমান নারীর দুশমন যেখান যাবে শেষ নাই. মা তুমি যদি বলো আমি মালতির কাছে টাকা চাইতে পারি. খবরদার রোমান আর কোন দিন ওই বাজে মহিলার নাম আমার সামনে নিবি না. কিন্তু বাবা? ডাক্তার না দেখালে বাবার অসুখ যে আরো বেড়ে যাবে. যাক,বেড়ে যাক তারপরও মালতির কাছে হাত পাতনোর দরকার নাই. কারন ওই টাকা মালতির না তার স্বামীর টাকা. (চলবে) ( ৫ম পর্ব)--------------------পোতনায়ক-------------------ফজর নামাজ পড়ে মা প্রতিদিন কোরান তেলাওয়াত করে আজও মা তাই করছে,মার সুরেলা কন্ঠে কোরান শুনতেই আমি উঠে যাই. মা রোজ রোজ আমার উজ্জল দিনের জন্য দোয়া করে শুনতে আমার ভালই লাগে. কোন দিনই সকালে নাস্তা করা হয়নি যে ঘরে কিন্তু সে ঘরে আজ মা পিঠা বানাচ্ছে দেখে আমার মন খুশীতে বাকবাকুম করে. আসলে নারীর মহত্ব এখানেই একদিকে স্বামীর সুস্থতার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছুটে চলা,আরেক দিকে সন্তানের ক্ষুধা নিবারণ জন্য রান্না ঘরেও ছুটে যাওয়া. পিঠা নিয়ে আমি বাবার কাছে ছুটে গেলাম তা দেখে বাবা উঠে বসে আমি এক টুকরা পিঠা বাবার মুখে তুলে দিতেই বাবা আমার হাত থেকে পিঠা নিয়ে আমার মুখে পুরে দিলেন. মালতি আমার ছোট কালের খেলার সাথী. চলতে চলতে বড় হয়ে আমি তার জিবন হতে হারিয়ে যাই.আমার সাথে ভালবাসার কারনে তাকে তার মামার বাড়ী রেখে ইটালি প্রবাসীর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়.বিয়ের এক বছরে মধ্যে মালতি আবার নিজ বাড়ী ফিরে আসে কারন মালতি ইটালি গিয়ে দেখতে পায় সে ওই লোকের দ্বিতীয় স্ত্রী.আমার বন্দ্বু রিয়াজ বলে মালতি হল ফটো হতে বাহির হয়ে আমার ভাগ্য বদলকারী. বাবার অসুখটা চিন্তার কারনে অনেটা বেড়েছে বলা যায় তাই আমি সকালে বাবাকে ঘর হতে বাহির করে পুকুর পাড়ে নিয়ে যাই.বাপ-বেটা বসে কিছু সময় গল্প করি. একটা হলুদ পাখী আম গাছের মগডালে বসে থাকে বাবার মুখপানে চেয়ে. হয়তো পাখীটা বাবাকে সহানুভূতি জানাতে আসে. দুই/তিন দিন পর থেকে বাবা পাখীটার সাথে বিড়বিড় করে কথা বলা শুরু করে আমি বাবার হাত ধরে বসে থাকি. কথা বলার সময় হলুদ পাখী একডাল হতে অন্য ডালে লাফালাফি করে. তাহলে পাখীটা কি বাবার দুঃখের কথা বুজতে পারে. হায়রে দুনিয়া মানুষ হয়ে মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুজেনা আর পশু পাখী বুজলে কি হবে.রিয়াজ তুই আমার একটা উপকার করবি ? বলে তো দেখ একবার. বাবা কে ডাক্তার দেখানো দরকার, এই কয়েকদিন বাবা মানসিকভাবে ভাল কিন্তু শাররিক খুব খারাপ আমার মনে ভাল ডাক্তার দেখালে ভাল হয়ে যাবে. কিন্তু এত টাকা....তুই টাকা দিতে হবে না,সব টাকা মালতি দিবে তুই শুধু মাকে বলবি তোর টাকা আমি ধার নিচ্ছি. ঠিক আছে তাই হবে. (চলবে) ( ৬ষ্ট পর্ব)-------------------পোতনায়ক--------------------মা এইবার আর না করা চলবে না. আগে বল কি এমন এমন কথা যে আমি না করতে পারবো না. রিয়াজ বাবার জন্য টাকা ধার দিবে.কিন্তু সে পাবে কোথায়,আর পরে তাকে বা কেমন করে শোধ দিবো? মা এত কিছু ভাবতে গেলে বাবার আর এই জিবনে ডাক্তার দেখানোই হবে না. ঔষুধতো খাওয়াচ্ছি কিন্তু কেন যে ভাল হচ্ছে না. মা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঔষুধ খেলে মানুষ বাঁচেও না আবার মরেও না.ওইখানে গেলে যারা টাকা দেয় তাদের একটু সরকারী ঔষুধ মিলে না হয় দেখেন না সব রোগের জন্য সাদা বড় বড় ট্যাবলেট দেয়. সরকারী বাসায় থেকে ওইখানে ব্যক্তিগত রোগী দেখে ডাক্তার. আপনি কতবার নিলেন বাবাকে, মাথা ব্যথাও জ্বরের জন্য এই ডাক্তার বড় কোন রোগের জন্য না. অশিক্ষিত ও স্বাস্থ্যসচেতনহীন গরীব মানুষ ওখানে না গিয়ে আর কিবা করবে. যারা দেশ চালায় তারা যেত দিন সঠিক পরিকল্পনা নিয়া গ্রামীন মানুষ কে উন্নত স্বাস্থসেবা পৌছে দিবে না তেতদিন আমার মায়েরা ইউনিয়ন স্বাস্হ্য কেন্দ্রে ছুটে যাবে আর ডাক্তার সাদা বড় বড় ট্যাবলেট দিবে.যেন গ্রামীন মানুষের জিবন গোলাপী এখন ট্রেনের ডাক্তার কদম আলীর হাতে. এই এমন করে কি দেখছো? তুমি ছাড়া আমার পাশে আর অন্য কোন জরিনা সুন্দরী আছে যে তাকে দেখবো. এই সত্য করে বল জরিনা আবার কে. ও হে আমার প্রানের মালতি তুমিই আমার জরিনা সুন্দরী বুঝলে. মালতি তুমি কিন্তু আগে থেকে মোটা হয়ে যাচ্ছো. এই যে দুষ্ট রাজা আপনি এত কিছু দেখেন কেন. কি যে বলো আমি তো দেখবো তোমায়. মালতি একটা বুব্দি বাহির করছি টাকা নেওয়ার মা মোটা মোটি রাজি. তুমি টাকা রিয়াজের কাছে দিও আর রিয়াজ মাকে দিয়ে আসবে. তবে মা জানবে এটা রিয়াজের টাকা. দয়া করে তুমি কিছু মনে .. . আরে এতে মনে করার কি আছে. রোমান মিয়া তোমার জন্য দরকার হলে বৈরাগনী হবো .আর গলা উজাড় করে গান গাইবো "স্বাদের লাউ...............ঠুকঠুকি". তা হওয়ার দরকার নাই,শুধু রাধুনী হলে চলবে. আসলে মালতি তুমি সব ছেড়ে ফেরত আসার পর পৃথিবীটা জোসনাময় হল আমার কাছে . আমি তো মনে করছি তুমি ভুল বুঝে দুরে সরে যাবে. না, মালতি তুমি তো ইচ্ছা করে এমন করো নাই .তোমার পরিবার এখন বুঝছে যে তাড়াহুড়া করে জোর জবর বিয়ে দিয়ে তোমার জিবন এলোমেলো করে দিয়েছে এখন যা করবে তুমি স্বাধীনভাবে চিন্তা করে করবে. (চলবে) (৭ম পর্ব)---------------------পোতনায়ক----------------টাকা হাতে পেয়ে মা শাড়ীর আচলে কপালের ঘাম মুছে,কত অল্পতে বিধাতার সৃষ্টি মানুষ খুশী হয় মাকে দেখলেই বুঝা যায়. মানুষ সৃষ্টি করে গরিব বানিয়ে রাখার যে রহস্য বিধাতা তোমার হাতে রেখেছ তা ভেদ করা যাবে না হয়ত কোন দিন. কিন্তু তোমার রহস্যকে পুজি করে তোমারিই সৃষ্টি ধনবান শ্রেনী প্রতিনিয়ত পৃষ্ঠ করছে নিরহ শ্রেনীকে তার বিচারকও তুমি. ফেনী সরকারী হাসপাতালের গেইট পার হযে ভিতরে আসতেই বাবার মুখটা শ্রাবন মাসের কালো মেঘে ঢেকে যায় তা আমার আর মার নজর এড়ায় না. শিক্ষিত বাবা কোন কাজ না করে আজ লজ্জিত ও অ্নুপ্ত তা বুঝা যায়. আমি বাবার হাত ধরে অভয় দিই,মা দেয় চোখের ইশারায়. সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে মনে মনে খুব খুশী হলাম. মা বাড়ী হতে কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে পুরানা বিছানা-পত্র (কাথা ও বালিশ) নিয়ে আসায় অনেক ভাল হল. যদিও এইসব আনতে দিতে আমার প্রবল আপত্তি ছিল এবং শেষমেষ মন ও মুখ কালো করে মেনে নিতে হয়. কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম মা বুব্দিমতী বলে এইসব আনতে চাইল. দোতালায় দক্ষিন পাশে বারিন্দার মেজেতে বাবাকে রাখা হল. দোতালায় গিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দম বন্দ করা গন্দময় পরিবেশে আমি থমকে যাই,গন্দটা যেন লেমুয়া বাজারে যে পাবলিক টয়েলেট আছে তার থেকে কিছুটা হালকা,এক জটকায় আমি স্বরণ করলাম গরিব মা-বাবার সন্তান জম্ন বাংলাদেশে,যার পতাকা লাল সবুজের আর লাল হল মানুষের রক্তের নিশানা এবং সবুজ হল শান্তি ও সমৃদ্ধিশালীর্ . স্বাধীনতার এত বছর পরও বুকের রক্ত এখনো ঝরছে আর সমৃদ্ধি সেইতো শুধুই স্বপ্ন. বাহির থেকে বিল্ডিং দেখে হাসপাতাল মনে হলেও ভিতরে এসে শংকায় পড়ে গেলাম. এত ময়লা আর্বজনার ভিতর কিসের চিকিত্সা করে এবং কিভাবে মানুষ ভাল হয়ে উঠে. এখানের রোগী সব হয়ত সমাজের নিচ তলার তাহলে ডাক্তার কোন তলার হবে? মা বাবার পাশে বসে ঝিমুনি দিচ্ছে,এই ফাকে আমি পুরা রুমটা একটা চক্কর মেরে আসি. অতিদুরে বার বছরের একটা বাচ্চা কান্না করে উঠে আমি তার কাছে যাই এবং দাড়িয়ে থাকি. একটা মেয়েও আমার পাশে এসে দাড়ায়,আমি তার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাই. আমার ছোট ভাই. কি হয়েছে তার? নেতার মোটর সাইকেলে আকস্মিক বিপত্তি ঘটে যায়.বাড়ী কোথায় তোমাদের. দাউদপুর ব্রিজের পাশে বস্তিতে থাকি.আজ কতদিন এখানে ও নেতা টাকা পয়সা দেয় নাই. আমার এমন প্রশ্নে মেয়েটা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে. বুঝতে আমার বাকি রহিল না বস্তির এই ছেলের রক্ত আমাদের পতাকায় নাই. দিন শেষ হতে যেন অন্দ্বকার গুহায় প্রবেশ করলাম. এশার নামাজ শেষে ডাক্তার আসলেন সাথে মোমবাতি ধরা সেবিকা নিয়ে.একটু পরে আমার এক বন্দ্বু আসলো সাথে ক্ষমতাধর এক ছাত্র নেতাকে নিয়ে. মার হাতে জোর করে দুইশত টাকা দিয়ে বললেন আমি দেখবো ভাল চিকিত্সা হয় কিনা.ছাত্রনেতা যাওয়ার একটু পরেই বাবাকে সিটে তুলেন এবং ডাক্তারও এসে দেখে যান,সেবিকার আচরনেও যেন বিদ্যুতের ঝলকানি আসে. (চলবে) (৮ম পর্ব)---------------------পোতনায়ক--------------------শহরে বাসা বলে বড় মামনি ও মেঝ মামনি পরের দিন সকালেই বাবা কে দেখতে আসে. রাতে আমার আর মার তেমন কিছু খাওয়া হয়নি টাকা খরচ হবে বলে,তাই ভাল হল দুইজনে খাবার ও ফলফুট্র নিয়ে আসায়. আশে পাশের রোগীদের লোকজন আড়চোখে আমাদের দেখতে লাগলো,হয়ত ভাবছে রাতে নামকরা একছাত্র নেতা এখন পরিচ্ছন্ন পোশাকের আত্নীয় তাহলে তারা কেন সরকারী হাসপাতালে.আমি কয়েকটা আপেল ও কমলা নিয়ে দিতে গেলাম দাউদপুরের মেয়েটিকে যে কিনা বাবার কথা মুখে উচ্চারন করতেও শুনি না কারন বাবার শুধু নামটাই এখন মনে আছে আর তার বাবা চলমান,হয়ত অন্য কোন শহরে অন্য কারো রিক্সার চালক,অন্য কোন বস্তিতে সন্তান উত্পাদের কারিগর. এইগুলা তোমাদের জন্য,কি হল নাও.না লাগবে না আর মা আসলে বকা দিবে. আমার রাগ এবং হাসি দুটাই আসলো কিন্তু নিজেকে সংবরন করলাম. কিছু হবে না তুমি নাও জিজ্ঞাস করলে বলবে রোমান ভাই দিছে,একটু চুপ থেকে হাত বাড়ায় আনোয়ারা.সুর্যের কিরন আমার আর আনোয়ার মুখ আলোকিত করে,ছেলেটার মুখেও আলো পড়ে কিন্তু মুখটা আলোকিত হয় না একটা বড় মাছি ছেলেটার কপালে ঘুরে ঘুরে বসে.একটা কেন হাজার হাজার মাছি ঘুরে এখানে, খাবারের উপর এমনভাবে বসে যেন দেখলে মনে হয় মৌমাছির বাসা. পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মী হতে হাসপাতালের সাথে জড়িত সবাই মধূ চাষী তাদের সবার খাঁটি মধু চাই.আনোয়ারা তুমি পড়া-লেখা করো ? জ্বী, আমি অষ্টম শ্রেনীতে আর আমার ভাই ৬ষ্ট শ্রেনীতে. ওয়াও, ভাল খুব ভাল . আমার কথার শব্দে মা আর মামনিরা হাসে. একটু পরে মা আসলে আমি স্কুলে চলে যাব. মা একটা বাসায় রান্নার কাজ করে,রাতে বিড়ি বানায় কখনো কখনো আমিও মার সাথে বিড়ি বানাতে বসি. মা বলে আমাদের উচ্চ শিক্ষিত বানাবে আমার ভাইটাও খুব মেধাবী ছাত্র আর এখন সে ! আপনার মা-বাপ দুইজনে আছে আপনারা শিক্ষিত সবাই তবুও এখানে কেন আসছেন?আমার বাবা কোথায় তাও জানি না. মা বলে শিক্ষিত হলে চাকুরী হবে টাকা হবে তখন বাবাকেও ফেরত পাবে.তাই যেন হয়. তার কথা শুনে আমি আনমনা হয়ে যাই বার বার কানে বাজতে থাকে এখানে কেন আসছেন.হাসপাতালের বারিন্দার গ্রিল ধরে সুর্যটাকে দেখি. অনেক আগে পড়া একটা কথা মনে পড়ে যায়, সুইজারল্যান্ড এবং ফিলিস্তনে মানুষ সবচেয়ে আত্মহত্যা বেশী করে. সুইজারল্যান্ডের মানুষের জীবনে কোন ট্যাজেড়ি নাই বলে যুব সমাজ হতাশ হয়ে আত্নহত্যা করে. আর ফিলিস্তনের মানুষের জীবন ট্যাজেড়িপূর্ণ বলে হতাশ হয়ে আত্নহত্যা করে. ফিলিস্তনের স্বাধীন সৌর্ভমত্বের হুমকি ঈসরালের গুলি হতে বাঁচতে মানুষ আত্নহত্যার পথ বেচে নেয়. আজকাল আমার খুব মরে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু মা,বাবা আর মালতি এসে দাড়ায় সামনে. মালতি যখন আদর করে বলে তোমার জন্যই তো ইটালি হতে পালিয়ে এসেছি সোনামনি তখন মনে হয় আমিতো রাজা এই দুনিয়ার .(চলবে) (৯ম পর্ব)---------------পোতনায়ক----------------রোমান তোমার বাবা এথন কেমন আছে? আস্তে আস্তে ভাল হয়ে উঠছে মনে হয়. তোমার জন্য অবশ্যই খুশির খবর. হ্যা, আমি এইবারে বিয়ে করে বাবাকে একটু খুশি দিতে চাই. তোমার মত রামছাগলকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে. মেয়ে আমার জানাশুনা আছে শুধু আমি হ্যা বললে আমার গলায় মালা পরাবে কারন আমি যে রামগরু হা হা হা. মাঠ ভরা ধান গাছে সবুজের জলুস,সব জমিনের ধান গাছ এক সমান হওয়ায় বাতাসে অপরুপা হয়ে দোলচ্ছে,মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে মহাসড়ক যেখানে চলে ট্রাক বাস. ট্রাকের গায়ে লিখা আছে সমগ্র বাংলাদেশ তাই সে অভিনিবেশ নয় অন্য জীবনের. তুলা গাছের মগডালে দুইটি শালিক পাখী কল্পনামদির হয়ে বসে আছে যেমন আমি আর মালতি. আমি মালতি কে পাখীগুলা দেখাতে মালতি আমার হতে একটু দুরে সরে বসে আমিও তার কানের চুমকায় আলতো করে টোকা মারি. এক ঝটকা হাওয়া মালতির চুল এলোমেলো করে দেয় সরু সিলকি চুলগুলা যেন হাওয়া হাওয়া করে উঠে. মালতিকে শাড়ী পরা দেখলেই আমি নাকি বোকা বোকা রুপ ধারন করি তাই মালতি শাড়ী পরে আমার সাথে ঘুরতে আসতে প্রচন্ড অনিহা.ভালবাসার মানুষের সাথে চলতে শালীনতা থাকা উচিত,থাকা উচিত বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা. ঠিক বলছো আমার পিরিতির মশাই. যাদের শানীলতা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোদ নাই তাদের জন্য প্রেম পিরিতি আসে নাই. এমনকি যাদের সংসারে এইসব নাই তাদের সংসারে সুখ হল ক্ষীণ আলো কি বল রোমান মিয়া. জ্বী জনাবা. তেল দেওয়ার দরকার নাই চল উঠতে হবে প্রদোষকাল ঘনিয়ে এল. হুম, চল যাই. একটু আগে শালিক জোড়াও উঠাল দেয়. হাত দাও আমি ধরি তুমি টেনে উঠাও,মা নাই ঘরে সন্ধ্যা বাতি দিতে হবে. তাই,(মুচকি হাসে মালতি). মার রেখে যাওয়া কেরোসিন তেলের বোতলটা খালি পড়ে আছে, হারিকেনের চিমনিটা পরিস্কার করাও কম দুরহ নয়,একটু জোর-জবর করলে চিমনিটি যাবে শেষ হয়ে. কত বিচিত্র কাজ করতে হয় নারীদের. জানা শুনাহীন লোকটা বিয়ের প্রথম দিন থেকে শুরু করে নিজের শক্তি দিয়ে ধাবিয়ে রাখার চেষ্টা যেন নিজের জমিতে ফসল ফলাতে দেরি না হয়. লজ্জ্যাবতী নতুন বউর মনে যে ভয় ডুকে তার কারনে স্বামীকে সারা জীবন ভগবান মনে করে বন্দ্বু নয়. এই ভয়ের কারনে অনেক স্বামী-স্ত্রী আলাগ আলাগ থাকে তারপরও স্ত্রী নিজের অজান্তেই ওই স্বামী নামক অসুরটার বাচ্চার মা হয়ে জীবনাপাত করে একই ছাউনির নিচে.(চলবে) (১০ম পর্ব)--------------------পোতনায়ক-----------------বাবা,ওবাবা উঠে বসলে ভাল হতো. চোখ খুলে বাবা আমার পানে তাকায়, আমার চোখে পড়তে চায় আমার জীবন নাকি বাবার জীবন,কি জানি? বাবা বালিশ পিঠে ঠেস দিয়ে বসে. আমি তাঁর লুঙ্গী পায়ের দিকে টেনে দিই. ধপদপে সাদা লুঙ্গীই বাবার প্রথম পছন্দ,সাদা শরীরে সাদা লুঙ্গী পরে চলার সময় দেখলে আমি যেন সারস হয়ে বাবা কে আগলে রাখতাম,আজ আর বাবা! একজন নার্স আসলো বাবা কে ইনজেকশন দিতে তাই আমি দুরে সরে দাড়াই. নার্সটা সাদা পোশাকের রুক্ষ মেজাজের এক মহিলা. বাবার হাত শক্ত করে ধরতেই একটা মাছি এসে তার সিদুঁরের উপর বসে হাত ছেড়ে বাবার, আবার ধরে বাবার হাত আবারও মাছি সিদুঁরের উপর,ছেড়ে দেয় বাবার হাত. চোখের অনুপলে নার্স নিজের কাজ শেষ করেন বাবার বিরক্তবোদের মধ্যেই. না মাছি নার্সের পিছ ছাড়ে না তার পিছনে পিছনে ছুটে. কি কারনে নার্সের সাথে মাছির শত্রুতার সম্পর্ক আমার জানার সাধ্য নাই, আমি শুধু সুস্হ্য বাবাই চাই. আজ কতদিন আমি ঠিকভাবে গোসল করি নাই রোমান. হ্যাঁ, তা ঠিক মা এখন আর কি করার আছে. তুই যদি তোর বাবার কাছে থাকিস তাহলে আমি তোর মামাদের বাসায় যেতাম. মামাদের কথা বললে কেমন ঘৃনা ঘৃনা লাগে, আজ এতোদিন আমরা সবাই বাবাকে নিয়া হাসপাতালে,মামারা একটু দেখতেও আসে নাই. কিছু টাকা সাহায্য করছে অবশ্য. অথচ তারা প্রতি রমজান মাসে ডাকঢোল পিটিয়ে যেভাবে শাড়ী বিতরন করে দুই/এক জন মানুষও মরে তাতে. আর তার কিছু টাকা আমাকে সাহায্য করলে আমি অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হতে পারি. অবশ্য তখন আমার মার জন্যও শাড়ী নিয়ে আসে মামনিরা,যদিও সেই শাড়ী ঈদের দিন মাকে পরতে দেখি নাই. মামারা কেন এখন দুরে থাকে তা আমি বুঝি কিন্তু আমি ওই দিনের অপেক্ষায় যেদিন মামারা কাছে ডেকে নিবে. হে জমিনের ফেরেস্তা তোমরা লিখে নাও আমার চাচাদের কথা,তোমরা লিখে নাও মামাদের যাকাত প্রদানে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া মানুষদের কথা, অার লিখে নাও আমার কথাও কারন সাত আসমানেতো সব ফয়সালা হবে. কি ভাবছিস আমি গেলাম. ঠিক আছে মা যান. বাবা এখন একা একা একটু একটু হাটে . অন্য রোগীদের খোজ খবর নেয়. মার সাথে সাথে আমিও বাহিরে চলে আসি. হাটতে হাটতে জরুরী বিভাগের সামনে এসে দাড়াই,প্রচন্ড মানুষের ভিড় সেখানে. এমন সময় রোগী নিয়ে সিএনজি আসে একটা আর এমনি সব মানুষ তাকে ঘিরে জটলা বাধে. একজন মুমুর্ষ রোগী ঘিরে সাধরনের অসাধরন জটলা. জরুরী বিভাগের বিছানায় শুয়ে আছে লোকটা আর তার লোকজন ডাক্তারকে আকুতি মিনতি করছে. অল্প বযসের ডাক্তারটা মোবাইল নিয়া ব্যস্ত,মহিলা ডাক্তারটা উঠে আসলেন দুর হতে চশমা চোখে দেখলেন একনজর কথাও বললেন গম্ভীরভাবের সাথে দুই/তিনটা. এরপরই রোগীর আপনজন ছুটাছুটি শুরু করে. এরই মাঝে কিছু লোক এই হতাশাগ্রস্ত আপনজনকে আপন করতে চেষ্টায় রত. এদের কেউ প্রাইভেট হাসপাতালের দালাল,কেউ ঔষুদ কোম্পানীর দালাল,কেউ রোগী বহনকারী গাড়ীর দালাল,কেউ ব্যক্তিগত গাড়ীর দালাল. জয়তু হাসপাতাল,জয়তু দালাল. (চলবে) (১১তম পর্ব)-------------------পোতনায়ক------------------আজ বাবা হাসপাতাল ত্যাগ করবে তাই আমি আর মা খুশীতে বাকবাকুম. রোমন তুই ডাক্তারের সাথে কথা বলে আয়, আমি জিনিস-পত্র ঠিক করে রাখি. আমি মার কথা শুনে হাসি কি এমন জিনিস আছে যে দুই ঘন্টা আগে থেকে গুছাতে হবে. মা আমার কথা শুনে প্রচন্ড আহত হয়. মার আহত চোখের চাহনিতে আমি পুড়ে খাটি হীরা হই, আবার পরক্ষনে ছোট নদীর জল স্রোতে কয়লা হয়ে ভেসে যাই. আমি বাবার হাসপাতাল ছাড়পত্রে চটজলদি স্বাক্ষর করি আসি এবং এসে দেখি মা তৈরি হয়ে আছে বাবা কে নিয়ে. ভাইয়া তোমরা চলে যাচ্ছো আর আমার ভাই (হু হু করে কেঁদে উঠে) এখনো উঠে দাড়াতেই পারে না. এই আনোয়ারা কেঁদে কি হবে বল. আমি তোদের কে দেখতে আসবো. দেয়ালে বসা টিকটিকিটার সাদা চামড়ায় মোড়ানো দেহে প্রানটা টিকটিক করছে. এই টিকটিকিই ছোট একটা পোকা দেখলেই দৌড় দেয় খাওয়ার জন্য. আমরা যেন অখণ্ডনীয় মানুষগুলি টিকটিকির মতই প্রতি ক্ষণে ক্ষণে অনুপায় মানুষগুলিকে খেয়ে ফেলার কসরতে রত. তারই উদারন বস্তির এই ছোট ছেলেটা. আমি তাদের ছেড়ে আসতে খুবই কষ্ট হচ্ছে. তার পাশে গিয়ে বসে কপালে হাত রাখি আর এমনি আমার দুই নয়নে জোয়ার আসে,জোর করে মাথাটা কে ধরে কপালে আর্শীবাদের চুমা একে দিই. আমার নয়ন অশ্রু বস্তিতে বসবাসকারীর অশ্রু হতে আলাদা কিনা খুজতে থাকি. আমার মা বলে গরীবদের আল্লাহ মন দেয় ধন দেয় না আর ধনীদের আল্লাহ ধন দেয় মন দেয় না,কিন্তু কেন কেন এমন ? মা-বাবা,মৌমিতা,দাউদপুর বস্তির পরিবারটি ও ভালবাসার ! দ্রুত গতির সিএনজি চালকের আসনে কম বয়সী একটা ছেলে,লেখা-পড়ার কোন ছাপ নাই চোখে. ক্লান্ত ও নির্জীবতা মুখ দেখে বুঝা যায় নেশার ছোবলে ডুবে থাকা মানুষ সিএনজি চালক. পরিচয়হীন এক নীল প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে আমার মুখে এসে বসে.চোখ বন্দ্ব করতে প্রজাপতিটা মৌমিতা হয়ে যায়. আমি মালতির আলতো ছোয়া উপভোগ করি.পাশে বসা বাবা মুচকি হাসি দেয়,মা আনমনে রোড়ের গাছগুলা দেখছে. রাস্তার দুই পাশের গাছগুলির উপরি ডাল মিলেমিশে মোহসঞ্চারী এক দৃশ্য সৃষ্টি করেছে. এই সাধারণ ছোট দৃশ্য যে কোন লোককে কল্পনামদির করতে বাদ্য করে. যেমন আমার মা হল আমি হলাম. সমস্যা হল এই দেশে গাছ আর গাভী সব কিছুইতে বদলোকের নজর পড়ে আবার এই বদলোকগুলিই মাদকদব্যের ধারক ও বাহকতায় চোখ রঙ্গিন করে অনাড়ম্বর সমাজকে পরিচালনা করে. নীল প্রজাপতি আমার পিছন পিছন বাড়ীর রাস্তা পযন্ত চলে আসে এবার আমার কাধে বসে.আমি নরম করে ফুঁ দিই প্রজাপতি আরো শক্ত করে আমাকে কামড়ে ধরে. রোমান প্রজাপতি টাকে না মেরে একটু পানি দেয় .মালতি কে বলছি বাবা ভাল হলেই বিয়ে করে ফেলব. মালতি নীল প্রজাপতি হয়ে আমার বাড়ী এসে পড়ে ভাবতেই আমার চোখ পড়ে উচু তাল গাছটায় যার উপরে শুধু আকাশ আর আকাশ. (চলবে) (১২তম পর্ব)-------------------পোতনায়ক------------------তোর কি কোন চোখ নাই ? কেন মা এমন বলছো,এই যে আল্লাহর দান দুইটা চোখ. চোখ থাকলে ঘরের ভিতর যে এত বড় একটি ইদুর গর্ত তুই ভরাট করলি না কেন. হা হা হা তাই মা. খোদা আমাকে একটা মেয়ে সন্তানও দিল না. তুই শুধু মিল্লাত মিয়ার তালাক দিয়া মেয়ের পিছনে ঘুরবার চিন্তায় থাকিস. মা !! .কি কি? যে মেয়ে স্বামীর ভাত খাইতে পারে না সে কিসের মেয়ে. মা শুধু শুধু তার দোষ কেন তুমি দেখো, বিভিন্ন কারন থাকলেও,তারপরও সে থাকত যদি তার স্বামী বিদেশে নিয়ে তাকে ফেলে চলে না যেত. তোর তো ওই বেরাজনী (যাযাাবর) মাথা খেয়েছে. মার কথার জবাব দিলাম না আমি,উনি আজ খুব রেখে আছেন. একটা ছোট ইদুর গর্ত হতে উঠে দৌড় দেয়. মা মা ইদুর ইদুর দেখ. এমনি মার সব রাগে পানি ঢেলে আমার পাশে এসে দাড়ায়. মা ইদুর দেখলে থুব ভয় পায় তাই গর্ত নিয়া ঢাকডোল বাজানো. তাহাছাড়া একমাস ঘরটার মেঝেতে মাটির শতরঁচি কিংবা ঝাড়ু কোন কিছুই দেওয়া হয়নি. রোমান আগামী সোমবার রাতে একজন মোল্লা দাওয়াত করতে চাই. কেন মা? তোর বাবা হাসপাতাল হতে ফিরে আসলো তাই. ঠিক আছে মা ,কিন্তু মা টাকা লাগবে না? কিছু কাজ টাকা না থাকার ভিতর হলেও করতে হয়. তোর এসব নিয়া এতকথার দরকার নাই. ঠিক আছে মা,মার এত খোদা ভীরুতা তারপরও ছোট এক ইদুর গর্ত ভরাট করতে মাটি আনতে অ্ন্যের জাগায় পা ফেলতে হয়. আমাকে ও আমার পরিবারকে যারা বঞ্চিত করে সম্পদ নিজের বগলদাবা করে রেখেছে তাদের বুকের পাজরও কি ওই সেই একই খোদার. এই বঞ্চনার ফলে পরজনমে হয়তো আমি সম্পদশালী হতেও পারি. আচ্ছা মা আমি যদি পরজনমে সম্পদশালী হয়ে রাজপ্রাসাদে থাকি তাহলে তুমি কি আমার সাাথে থাকবে? যদি তোর বাবা আমার সাথে থাকে (মা খুব দ্রুত জবাব দেয়). আর যদি বাবা না থাকতে পারে. তাহলে (আমতা আমতা করে) কি আর?. চুপ থাকি আমি কিছু বলা হয় না মাকে. কদম তলায় একা বসতে খুব ভয় লাগে কারন তার পাশেই কবরস্হান আমি অটলভাবে হেটে চলে যাই পূর্ব রাস্তায়. মাছরাঙ্গা গাছের মগডালে নিশ্ছুপ যেন আজ কোন শিকারই মিলেনি. আমি মাছরাঙ্গাটা কে ডাকি এদিকে আয় আমার সাথে তোর মনের কষ্ট ভাগাভাগি করে নেয়. না আসে না সে. আমার মাথায় মার কথাগুলা শুধু কিলবিল করে. মা যৌবনকালে যাকে স্বামী হিসাবে পেয়েছে সেই আমার বাবা মাকে সুখ নামক শব্দটাও তো উপহার দিতে পারেনি.তারপরও মা সুখী,খুবই সুখী. বাল্যকাল হতে মা তিল তিল করে যে ভালবাসা সৃষ্টি করেছেন তার টানেই মা বাবার সাথে স্বর্গ কিংবা নরকে যেতেও তৈরি. আর কিছু মানুষ বিয়ে করে জীবনের মাঝ পথেই উল্টা রথ যাত্রা করে. যে মানুষ নিজের সন্তান,সংসার ভালবাসে না সে অন্যজন কে কেমন করে ভালবাসতে পারে. নাকি শুধু দেহের তাগিদে অভিনয়. আয় আয় মাছরাঙ্গা আমার পাশে আয়,আমার এই অসম ভাবনাগুলি তোরে শুনাই. (চলবে)

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।