গৃহবধুর ডায়েরী
- আবদুল্লা আল ফয়সাল ২০-০৪-২০২৪

পাখি ডাকা ভোরে যখন তোমার বুকে পাজর থেকে বের হওয়ার সময় হতো তখন
আমি মনের অজান্তেই চাইতাম তুমি আমায় আরো কিছুক্ষণ জড়িয়ে শুয়ে থাকো,
আমি বুক ছেড়ে উঠতে চাইলে আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরো ।
বিয়ের প্রথম কয়েকমাস তো তুমি ঘর থেকে বের হতেই চাইতে না।
অফিস ছুটি হলেই সুবোধ বালকের মত আমার কাছে ছুটে আসতে।
আমার কোমর জড়িয়ে কোলে মাথা রেখে চুপ মেরে শুয়ে থাকতে অনেকক্ষণ ।
আমি আলতো করে তোমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতাম।
তোমার বন্ধুরা বাসায় আসলে দুষ্টামির সুরে বলতো-
আবীর এখন বউপাগল হয়ে গেছে!
আমাদের একদম সময় দেয় না।
আমি লজ্জা পেয়ে যেতাম।

বিয়ের প্রথম রাতে তুমি আমাকে একটা কবিতা শুনিয়েছিলে-
"আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে,
"আমি চাই কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক"
নির্মলেন্দুগুণের কবিতা ছিল ওটা। আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার আবৃত্তি শুনেছি।
তারপর কখন যে তোমার বাহুতে,তোমার শ্বাস-প্রস্বাসে নিজেকে সপে দিয়েছি বুঝতেই পারিনি।
আমার হাতে একটা সোনার ব্রেসলেট পড়িয়ে দিয়েছিলে। প্রথম রাতেই বুঝে গিয়েছিলাম-
তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে যে মানুষটাকে কামনা করেছিলাম
-তুমিই সেই! আমার বীরপুরুষ।

প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় তোমাকে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতাম-
তুমি আমার কপালে চুমু খাবে এই লোভে।
তোমার একটু স্পর্শের তৃপ্তি নিয়ে কাটিয়ে দিতাম সারাবেলা।
মনের দরদ মিশিয়ে তোমার জন্য রান্না করতাম।তুমি ঝাল খেতে পারো না।
ঝাল বেশি হলেই যেন তোমার চোখ বেয়ে শিশিরের জল ঝরে ।একদিন তো
তরকারিতে ঝাল বেশী হয়েছিল বলে তুমি অবুঝ শিশুর মত কেঁদে ফেলেছিলে ।
সেদিনটার কথা আমার আজও মনে পড়ে ।

দুপুরে অপেক্ষায় থাকতাম কখন কলিং বেলটা বেজে উঠবে ।মা'কে নিয়ে
সবাই একসাথে খেতে বসতাম আর আমি অপেক্ষায় থাকতাম কখন তুমি বলবে-
আজ রান্নাটা খুব ভালো হয়েছে।
ইলিশ মাছের ঝোল আরেকটু দাও তো?
তখন আমার যে কি আনন্দ হতো!

আগামীকাল আমাদের ২য় বিবাহ বার্ষিকী।তুমি হয়ত ভুলে বসে আছো।
আমি জানি কাল সকালে আমার কন্ঠে "হ্যাপি মেরেজ ডে" শুনে ঠিক চমকে উঠবে।
এই দুই বছরে তুমি অনেক বদলে গেছো।
চাকুরী ছেড়ে এখন ব্যবসার কাজে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াও।
কোথায় যাও? কি করো? কিছু বলো না।
তোমার চারপাশে এখন অনেক মানুষ।
আমাকে চুমু খাওয়ার বদলে টাকার বান্ডিলকে চুমু খাও।
আমাকে জড়িয়ে ধরার বদলে তোমার ল্যাপটপ জড়িয়ে ঘুমাও।
হোটেলের ঝাল খাবার খেতে এখন কোন অসুবিধা হয়না তোমার।
আমার প্রয়োজন বোধহয় ফুরিয়ে গেছে তোমার তবুও
নিলজ্জের মত পড়ে আছি এই বাড়িতে। আমার পায়ে যে শিকল পড়িয়েছো
তা ছিন্ন করার শক্তি,সাহস কোনটাই আমার নেই।

আমি এখন পাঁচ মাসের অন্তসত্বা। আমার ভিতরে তোমার সন্তান বেড়ে উঠতে
শুরু করেছে। রোজ ওর সাথে কথা বলি। খেলা করি।
মাঝে মাঝে স্বপ্নেও দেখি|
আমি তো তোমার কাছে রাজ-প্রাসাদ চাইনি। দামী শাড়ী-গহনা চাইনি।
শুধু তোমার ভালোবাসা চেয়েছি।তোমাকে সবসময় পাশে চেয়েছি আবীর।
তোমার অবহেলা আর আমি সহ্য করতে পারছি না।
এখন তোমাকে আমার ভীষণ দরকার।
তোমার রুপা তোমাকে ডাকছে।
প্লীজ ফিরে এসো।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।