এক বিকেলের আভিজাত্য
- শাহানারা সুলতানা তানিয়া ২৬-০৪-২০২৪

প্রভাতী একটি স্বর্ণালী রংয়ের পেয়ালা খুঁজে পেয়েছিলো,
কাঠ পেন্সিলের কালিটা যেমন কালো,
পেয়ালার গায়ে তেমনি বিষাদের মত কালো ।
না, তাতে আমাদের সোসাইটির কিছু যায় আসে না,
কি কালো, কি স্বর্ণাভ ।
পাড়ার মসজিদে জুম্মাবারে, শিরনির আয়োজন হয়,
অনেক মুসল্লি আসেন,সাথে মিসকিনেরাও।
ভাবছিলো, চিলেকোঠায় পুরনো নথিপত্রের সাথে যা পেয়েছিলো,
তা কি দান করে দিবে.....? না,
কেন তাদেরকে পুরনো পাওয়া জিনিস দিবো...?
আচ্ছা....!! আমি একদিন চা খেয়ে দেখি এতে
এটায় কেমন একটা আভিজাত্য রকমের ভাব....
জানালার পাশে রেখে আনমনে ভাবতে লাগলো,
গানের সুর ভেসে এলো,....

ও শহরে কিছু প্রাচীন আলো
এখনো জ্বলছে পিদিমের মতো
ভাঙ্গা মন, এ দুয়ারে ফিরবি আর কতো...?
মন নিয়ম সবই উঁচুতলার মাধবীলতার মত ।

নাহ...!!
এ কেমন অস্বস্তি, এক সর্বনাশা বিকেল
বেলা শেষে কোথায় একটু প্রশান্তি খুঁজবো ।
রাখালেরও যেন আজ কিসের বিড়ম্বনা
মানু্ষের কিসের এতো দুঃখ.......?
দুটো চোখ,দুটো হাত,দুটো পা,
এই নিয়ে সবাইই জন্মায়, তবে কেন এত বিভেদ ?
পাপের সাম্রাজ্যে এখনো একটা নিয়ম আমি জানি,
" জাহান্নামের রাস্তায় পথ চলা,অনেক সোজা "..
অবশ্য, আমার পথের ব্যাপারে আগ্রহ তেমন নেই,
আমার পথ আমি নিজেই বানাই ।
সোজা হোক, চাইওনা ।
সেদিন দেখেছিলাম, এক চোরকে বেধরক পেটাচ্ছে,
বেটারা,তাকে না পিটিয়ে কর্ম দিলে,সে আজ চুরি করতো না ।
পিটালে বড় চোরকে ধরতি,তা কেন, নিজেরাই তো তাদের পা চাটিস ।
এগুলো হলো বনিবনার ব্যপার, যার যা আছে,
সে তাতে সন্তুষ্ট নয়, আর তারা কখনোই হবেনা ।
মাঝখানে যত জ্বালা নিচুতলার মানুষদের,
ওরা সারাদিনে একশো টাকার কাজ করবে,
পঞ্চাশ টাকার চাল ডাল কিনবে,
বিশ টাকা বাচ্চার স্কুলের ফিস দিবে,
আর ত্রিশ টাকা রাখবে ঘর ভাড়ার জন্য ।
ঘুমোতে যাবে স্বপ্ন নিয়ে, বউ বাচ্চা নতুন জামা পড়েছে, টুকটুকে লাল, সকালের আলো ফুটলেই স্বপ্নটা চলে যাবে ঘরের সামনে পুরনো ডাসটবিনে ।
আর নেতা মশাই উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে দেশ।
ইস....!!!
আমার এতো মাথা ব্যথা কেন..? আমি একা চিৎকার করে একা কিছু বদলাতে পারবো,..?
বেহালা বাদকের কথাও মনে পড়ে যায়,
তার ফাইভে পড়ুয়া মেয়েটা, পারেনি শেষ চিৎকারেও রক্ষা পেতে ।
আমাদের পুরুষকুলেরতো আবার কাঁচা ফলে স্বাদ বেশি।
আম জনতার এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই ।
ভোক্তা আইনে মেয়াদোত্তীর্ণ ঘি তে সকালের পেট পুজো হলেই, আজকের দিনটা সাবাড় ।
হঠাৎ ঘরে একজন এলো,
এই অসময়ে কে যে আসে..? তাদের আর কাজ নেই..?
দরজা খুলতেই হাতটা গেলো কেটে, এ যেনো মহা ঝামেলা,
যাক,প্রভাতী দরজা খুললো ।
একটা খামে চিঠি এসেছে, এখনো কেউ চিঠি দেয়..?
আজব দিন বাবা ।
হলুদ খাম একটা স্বর্ণালী রংয়ের কাগজ,
ঘ্রাণ ছিলো বকুল ফুলের ।
চিঠিটা খুলতেই একটা সিডি, কিছু বকুল ফুল, আর একটা দীর্ঘ কবিতা ।
বাহিরে ঝড় এসেছে, বৃষ্টি আগের দিনের থেকে বেশি
মনের ভুলে চিলেকোঠায় পাওয়া পেয়ালাতেই চা ঢেলেছিলো,
সিডিটা চালালাম, বেহালার সুর,সেই বেহালাবাদকের,
যার মেয়েকে বাঁচাতে রক্ত দিয়েছিলাম,বাঁচেনি ।
চিঠিটা খুলে কবিতা পড়তে শুরু করলাম,
জানালার পাশে চায়ের পেয়ালা রেখে ভুলে বসেছি বাকি দুনিয়া।
একটা কবিতা, অনেকগুলো চরিত্র, ভায়োলিন, বাঁশীর সুর, বিকেলের বিষাদ, পাড়ার দুশ্চরিত্রার কাহিনী,পেপার বিক্রেতা ছোট শিশুটি,তার হতভাগ্য পিতার স্বপ্ন, চোরের মারমাখা চাহনী,
বৃদ্ধাশ্রমের সেই বৃদ্ধা মা,যে কি না আমাকে মেয়ে বানিয়ে মাতৃত্বের পুর্ণতা পেয়েছিলো ।
এ যেন এক পুঁথিপত্র, শেষ করতেই মন চায় না ।
বিকেল গড়িয়ে রাতে পৌঁছলাম,
আর সেই কালো স্বর্ণালী পেয়ালা....? শেষ পর্যন্ত চায়ের কপালেও জুটেনি ।
যে আমাকে কবিতা পাঠিয়েছিলো, তার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়...?
খাম উলটে ঠিকানার জায়গায় লিখা,
" প্রভাতী পদ্ম, এক বিকেলের আভিজাত্য "
মানে কি এসবের....? কবিতা,ভায়োলিনের সুর,বকুল ফুল,শেষ পর্যন্ত এই পেয়ালাও......?
আমাকে কি কেউ আমার মত করে পড়ছে..?
নাকি আমিই আমাকে দেখছি,...? ঘোরের ভেতর..?

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।