নাস্তিকের ভগবান
- মুক্ত মন - উচ্ছন্ন কলম ২৮-০৩-২০২৪

কাগজ পড়েছ ? লাশ ভেসেছে হাজার ।
- কোথায় ?
হরিদ্বারে । গঙ্গাস্নানে পা হড়কে গঙ্গাপ্রাপ্তি !
আরও একশ শিশু নিখোঁজ , থানায় নালিশ গেছে ।
- আর ভগবান কই ?
সুখনিদ্রা গেছেন !

খবর পেয়েছ, লোক মরেছে লাখ খানেক ।
-কোথায় ?
মক্কায় । হজের লোভে ছুটতে গিয়ে হেজে গেছে !
মারতে পাথর শয়তানে , ধর্মশহিদ এতজনে ।
- আর আল্লা কই ?
মিচকি হেসে হাত বুলাচ্ছে দাড়িতে, ভুঁড়িতে !

খবর শুনেছ , একশ বালিকা ধর্ষিত ?
- কোথায় , কে করেছে ?
ওই তো । চার্চের পাদ্রি সাহেব ।
- প্রতিকার ?
হয়েছে তো , চেন খোলা প্যান্ট থেকে
গড আদেশ দিয়েছে, 'ওদের ব্যাপ্টাইস্ট কর' -প্রায়শ্চিত্ত !
- আর গডম্যান কোথায় ?
সদ্য রতিক্রিয়া শেষে ধ্যানে বসেছে !

বাতাস , তুমি থেমে যাও -
-শোকসভা হবে ?
না, মন্দিরে , মন্দিরে ঘন্টাধ্বনি হবে ।
কোকিল, চুপ কর ! ডেক না ।
- এত মৃতের অন্ত্যেষ্টি হবে ?
না , মাইকে আজান হবে ।

অ্যায় শিশুরা , গান থামাও এক্ষুনি ।
-পেটভরে খাওয়ানো হবে বুঝি ?
না, গির্জায় প্রার্থনা সংগীত হবে ।
- তাতে আমাদের কী ?
চুপ ভগবানের আদেশ হয়েছে না !

- যদি না মানি ?
মরবে । দেশ ভাগ, জাতিভাগ , দাঙ্গা ফিরবে ।
মন্দির পুড়বে, মসজিদ ভাংবে , তান্ডব ফিরবে ।
বোকারা , দেখছ না চালাক নেতারা কেমন
টাকা ঢালছে উন্নয়নে ।
ভাংছে বস্তি , পুরোনো ইমারত -
দামি মন্দির- মসজিদ নির্মানে ।
লাশ নিয়ে কেউ শোক সভা করে ?
মিছিল হয় ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশে
ধর্মের বিজ্ঞাপনে ।

পূন্যের লোভে পাঁঠা , ভক্তির দক্ষিনার গরু-র
রক্তে ভাসে ধর্মের দালান কোঠা ।
ভগবান তখন তৃপ্তির ঢেকুর তোলে !

নারীকে যত পদপিষ্ঠ করে নর ,
বৌকে পোড়ায় অখন্ডপৌরুষ বর -
বিচারশালায় সম্পত্তি হারায় 'কুলোটা বধু ' ,
স্বামীকে খেয়েছ , আবার সম্পত্তির ভাগ !
ভগবান তত খুশ : ''বঞ্চিত কর অভাগীকে - পুন্যি পাবে !"

উত্তরের কোনো এক দাঙ্গায় ,
দাড়ি চুলকে , টিকী দুলিয়ে, দক্ষিনে -
রক্তের হোলী খেলে ধর্মবাদী মানুষ ।
শিশুর হাতের বিস্কুট কেড়ে ধর্ম ধরায় বন্দুক ।
শিশু খাদ্য দুধ বয়ে যায় ধর্মের উত্থিত লিঙ্গে !

আনাচে কানাচে যত নাস্তিক ধরে নিয়ে এসে
কোতল করে আস্তিকের দল ।
আর ভগবান ?
সে তো অপ্সরাদের ফুল শয্যায় কাম তাড়িত !

ও বাউল , থামাও তোমার একতারা ।
এখন এখানে কীর্তন , সেখানে মিলাদ হবে ।
মঞ্চ থেকে ঈশ্বরের চেয়ে বেশি
মন যাবে কাবাব , বিরিয়ানীর গন্ধের দিকে ।
উত্থান রোহিত ভগবানপুরুষ তখন ঘনঘন ঘড়ি দেখবে !

-- "শুনলাম সব , বুঝলাম ও খানিক ।
এত যে বললে , কিন্তু তুমি কে হে ?"
- আমি মানুষ ।
-"কাব্যি রাখ ! বলি জাত কি, পরিচয় কি ?"
- আমি মানুষ জাতির একজন , নাস্তিক বলে সবাই ।
আমি ধর্মে থাকি না , কিন্তু উৎসবে মাতি ।
পয়লা বৈশাখে নাচি , বইমেলায় হাঁটি ।
মিছিলে গাই , নবান্নে বাঁচি ।
তোমার ভগবান লীলা করেছে অনেক জানি ,
তাই তো জন্মেই দেখি ধর্ষিতা মাতৃভুমি ।
আমি ফেলেছি কোরান - গীতা ,
আগলেছি 'দ্বিখন্ডিত' , 'লজ্জা' -
বিবেকের লজ্জা ঢাকতে তাই
হেঁটেছি মিছিলে - মানুষের জন্য, মানুষের দাবীতে ।

আমার জামার খুঁট টানে যে শ্যামলা আধপেটা -
বলে ' আমাদের বস্তি পুড়িয়েছে , মা কে জ্বালিয়েছে,
বোন কে করেছে ন্যাংটো - ওই জোব্বাওয়ালারা ।
পেটে বড্ড খিদেটুকুই রয়ে গেছে খালি - তাই ফ্যান চাইছি ।'

এই আমার উপাস্য - নাস্তিকের অভুক্ত ভগবান ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 2টি মন্তব্য এসেছে।

kobisabujahmed
১০-০২-২০১৫ ১৭:১২ মিঃ

anek valo laglo @@@@

arifur
০৮-০২-২০১৫ ১৯:৪৩ মিঃ

সাহসী কলম ! আমাদের হাত কাঁপে !