বৈশাখী গল্প বৈশাখী গল্প বৈশাখী গল্প
- অরুণিমা ২০-০৪-২০২৪

বৈশাখী প্রেম---/অরুণিমা মন্ডল দাস

গঁায়ের নাম সজলপুর । ছোট্ট গ্রাম । এখনও খুব একটা উন্নতির ছোঁয়া পায়নি । তবে আস্তে আস্তে উন্নত হচ্ছে সেটা বলা যেতেই পারে । ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল ,হাসপাতাল ,অঙ্গনওয়ারী ,বিদ্যুত,টাইমকল --সবকিছুই হয়েছে --এই গঁায়ের ছেলে মেয়েরা শহরে ডাক্তারী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে --এর থেকে আনন্দের সংবাদ আর কি হতে পারে--?

মাঠ ভরা ধান দেখলে আসলে গ্রাম টা পুরোটা ঘুরে ঘুরে দেখলে সবারই মন ভরে যাবে । পয়লা বৈশাখ আসলে গ্রামের চেহারাটা বেশ খানিকটা পাল্টেই যায় ¡ সবাই নতুন পোশাক পরে । কপালে চন্দনের ফোঁটা লাগিয়ে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায় । বড়দের প্রনাম করে আর কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ।


গঁায়ের মিষ্টি মেয়ে ভাদু । শহরের কোনো নামকরা স্কুলে পড়তে গিয়েছিল । বাড়ি এসছে । বাড়ির লোকের আনন্দই ধরে না । ভাদু সকাল থেকেই ব্যস্ত । গঁায়ের সবার বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি খাচ্ছে আর প্রণাম করছে । আজ যে বৈশাখের প্রথম দিন । সে আজ খুব খুশি । তঁার সবথেকে প্রিয় পোশাক পরে বাড়িময় ঘুরছে । ওদিকে তঁার ছোটবেলার পাড়াতু দাদা হঠাৎ করে জাপটে ধরে মাথায় আবীরে লাল করে পালিয়ে গেল !


ভাদু তো বেজায় চটে গেল । তঁার অতো সুন্দর সখের জামাটা নষ্ট করে দিল ! লাল্টুদা টা ভারী সয়তান ”--এই বলে রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ির ভিতর চলে গেল । ভাদুর ওই অবস্থা দেখে কাকাতু দিদি ভাই বোনদের কি হাসি!


আপনাদের এবার একটা জিনিস জানার খুব প্রয়োজন সেটা হল এই লাল্টুদা কে? লাল্টুদা হল ভাদুর খুব পুরোনো বন্ধু । ভাদু পঁচিশ বছর বয়স অবধি যে পুরুষটার সংগে বেশি কথা বলে,সময় কাটায় হাসাহাসি মস্করা করে - ভাদুর জীবনের খুব খুব ভালো বন্ধু হলেন এই লাল্টু মহাশয়। লাল্টুদা সবে গ্র্যাজুয়েট । একটা ছোটো কোম্পানিতে কাজ করে ।



লাল্টুদাকে ভাদু মনে মনে খুবই পছন্দ করে । গতবছর এই সময় ই তঁাদের প্রেম তাই এই প্রেমের নাম বৈশাখী প্রেম বলতেই পারেন । লাল্টু একটু রসিক টাইপের মানুষ । আবার রেগে গেলে বড্ড ক্ষেপে যায় এই এক দোষ । সংসারে তাই রাগী মানুষদের জীবন কখনও ভালো হয় না । উৎপটাং ঝামেলা লেগেই থাকে।


আগের বছর পয়লা বৈশাখ তঁারা দুজন এক বাড়িতে বসে হঠাৎ ই প্রতিজ্ঞা করে যে একে অপরকে ছেড়ে কেউ কোনদিন থাকবে না । কিন্তু একটাই দুঃখ লাল্টুদের বাড়ির অবস্থা খুব ভালো নয় । পঁাচ ভাই । চারজন ভাই দিনমজুরের কাজ করে । কোনরকমে সংসার চলে সবার ,লাল্টুকেই দেখতে হয় সবকিছু । লাল্টু বিয়ে করে নিলে দাদা বৌদিদের দেখবে কে? বাচ্চাদের পড়াশোনা ?এই সবকিছু চিন্তা করতে করতে লাল্টু র মাথা ভারী হয়ে ওঠে !ভাদু যে কিছু বোঝে না তা নয় ! সে বাপের একমাত্র সন্তান । অনেক আদরে মানুষ তাই তঁার অতো দুঃখ কষ্ট সহ্য করার ধৈর্য্য ইচ্ছা কোনটাই নেই?

এই পয়লা বৈশাখে দুপুরবেলা এক আমগাছের তলায় দঁাড়িয়ে দুজনের কথা হচ্ছিল । পাড়ার ই দুই ছেলেমেয়ে তাই কেউ ই কিছু সন্দেহ করতে পারল না । উল্টে লাল্টুকে ভালো ছেলে বলেই সবাই জানত। আমগাছের তলায় কিছুসময়ে জন্য যেন এক রমনীয় সুন্দর হাওয়া বইতে লাগল । চারিদিকে শুকনো ডাল ঝরে পড়ল । দুই প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক তরুন তরুনী র অতৃপ্ত কামনাতে চারিদিক জ্বলে উঠল । দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষন । আজ অনেকদিন পর যেহেতু দেখা লাল্টু ভাদুকে এক সেকেন্ডের জন্য চোখের আড়াল করতে চাইত না । ভাদু অনেকক্ষন তকিয়ে থাকার পর বলেই ফেলল--“ লাল্টুদা কবে বিয়ে করবে--? একবছর হল ওদিকে বাবা বলেছে পড়া শেষ করলেই বিয়ে দিয়ে দেবে--¡
লাল্টু এই প্রশ্নটির ভয়েই গা ঢাকা দিয়ে বেড়ায় হঠাৎ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল বিয়ে--? ভাদু তুমি আমার অবস্থা জানো তো আমি কি করে--?

জানোই তো দাদারা আমাকে দেরী করে বিয়ে করতে বলেছে আমি কি ভাবে ? বল--?

ভাদু অনেকটা ভেঙে পড়ল “ আজকের বছরের প্রথম দিন এই দিন প্রোপোজ করেছিলে মিথ্যে করেই না হয় বলতে পারতে বিয়ে করব--?

বলেই কান্নাতে ভেঙে পড়ল । লাল্টু খানিকটা বেসামাল হয়ে পড়ল । কান্না থামানোর অনেক সাধ্যসাধনা করতে শুরু করে দিল । বেশকিছুক্ষন পর লাল্টু একটা সোনার আংটি ভাদুকে পরিয়ে দিয়ে বলল আমি প্রতিজ্ঞা করলাম বিয়ে যদি করি তোমাকেই করব--”---এবারে তো একটু শান্ত হও, তোমাকে দুঃখী দেখতে পারি না--”


পয়লা বৈশাখে ওই শেষ দেখা দুজনের । ভাদু দুদিন পরেই হোস্টেলে চলে গেল । আর লাল্টু চাকরির জীবনে । ভাদু ফোন করলে লাল্টু কথা বলত না । লাল্টু পরে ফোন করলে ভাদু রেগে কথা বলত না । এমনি করেই মাসের পর মাস কাটতে লাগল । ভাদুর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হল । এবারে সে বাড়ি ফিরবে আর লাল্টুকে বিয়ে করে নেবে । কিন্তু হায় !ভাগ্যের কি পরিহাস! পুরুষের মন কখন কোনদিকে গড়ায় বোঝা বড় মুশকিল! লাল্টু ভাদুকে না জানিয়ে বাড়ির চাপে এক অচেনা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে--!ভাদু দেখেই কিছু বলল না ,কিছু খেল ও না ,ঝগড়াও করল না ,জিনিসপত্র ভাঙচুর ও করল না, --শুধু কয়েকমিনিট থ মেরে প্রানহীন পাথর হয়ে বসে থাকল ! কিছুক্ষন পর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল ঝরে পড়ল--! পয়লা বৈশাখের সেই আমগাছ সেই বারান্দা --আজ তঁার কাছে বিষময় স্মৃতি---?জীবন্ত লাশ হয়ে দিনের পর দিন বঁাচতে লাগল ভাদু --! পরে পরিবারের চাপে বিয়ে করল বটে কিন্তু দু তিনবছর না কাটতেই বর ছেড়ে পালিয়ে গেল ---! আজ ও সেই আমগাছ --পয়লা বৈশাখের দুপুর তঁাকে বঁাচিয়ে রেখেছে --এক জীবন্ত স্মৃতির সুখে---?




বৈশাখী কবিতা/অরুণিমা মন্ডল দাস

হঁাড়িভর্তি রসগোল্লা,পান্তুয়া ,বিরিয়ানি চিকেনের বহুল আনন্দিত চলাফেরা--
জামদানি শাড়ি,পাজামা পাঞ্জাবির ঘর্ষনে “নতুন সন্তান”
“ পয়লা বৈশাখের ”আঁতুড়ঘর-হালখাতা --¡
#
মোটা সিঁথির সিঁদুরে ভেজাল পারদ --উচ্ছের দুদিক কঁাচা মধ্যেখান পাকা--
রাস্তায় ভরা ভক্তের হরে কৃষ্ণ নাম- পাশে বসা ছেঁড়া জামার ভিখারীর উড়ে যাওয়া পুরোনো পঁাচশ টাকা--
বৈশাখের গাঢ় রোদের গোলটেবিল বৈঠক
নীতির সাম্প্রদায়িক প্রেশারকুকার ফেটে আধা সিদ্ধ জনগন-ডাল
পঁাপড় ভাজার উল্টোদিকে ভিনিগার------
পাউরুটির পিছনে কোলতার?


“কবিতা” ঘামছে--শুকনো আমের ছালে
কেটে খাওয়া তরমুজের জলে কবিতার উচ্ছৃাস--?
চন্দনের টিপ হাতে কালোজামের থাল নীল আবিরে ভর্তি মাথা
ঠোঁটে লিপস্টকের আলিঙ্গন?

#


#




পয়লা বৈশাখ বাঙালীদের জীবনে এমন একটি দিন যা বলে বোঝানো যায় না । একজন পূর্ণ বাঙালী হিসেবে পয়লা বৈশাখ দিনটিকে কখনো ভোলা যায় না । এক বছর পার হলে পর আমাদের জীবনে এই দিনটি আসে ।


অরুণিমা মন্ডল দাস, কাকদ্বীপ ,দক্ষিন চব্বিশ পরগণা ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 3টি মন্তব্য এসেছে।

Arunima
১৪-০৩-২০১৮ ১৬:৫৫ মিঃ

Mane

M2_mohi
০২-০৫-২০১৭ ১২:৪৮ মিঃ

শিল্পরুচিসম্মত লেখনী পাঠ করে মুগ্ধ হলাম

mkazad
৩০-০৪-২০১৭ ০৯:৪৫ মিঃ

হুম!
ড়খার মাঝে চৈতন্যের ভব পাওয়া যাচ্ছে.....
নিয়মিত লিখার চেষ্টা করতে পারো!
http://shubrakhashful.blogspot.com