অবন্তিকা-০১
- আবরার আকিব ১৯-০৪-২০২৪

প্রিয় অবন্তিকা,
এক গ্রীষ্মের উত্তপ্ত বালি গায়ে মেখে
তোমায় লিখছি এ চিঠি
মেঘলা আকাশে মেঘ আজ বর্ষার কদমফুলে শিশিরের মতন ভেসে আছে
চন্দ্রাবতী আজ আর মেঘ কে নিয়ে কাব্য লিখেনা
নদীর পাড়ে বসে পরকালের কথা ভাবে কলাবতী
বৃষ্টির জন্য আজ আর কেউ অপেক্ষা করেনা
রুপমের মা আজ বৃষ্টি কে ঘৃণা করে
কোন এক বৃষ্টিস্নাত খেলার মাঠে তার রুপম মরেছে বর্জপাতে
তুমি আমি আজ আছি বহুদূরে
আর আমি কখন বৃষ্টি আসবে এই ভেবে
সকল কাজ ফেলে রেখে
জগতের সব মোহ ভুলে
বৃষ্টি দেখবো বলে জানালার ধারে বসে আছি
আর কী কোনদিন দুজন দুজনার হাতটি ধরে বৃষ্টি দেখতে পারবোনা?
আমাদের বিচ্ছেদ ক বছর হলো?
এই ফাল্গুনের পচিশ তারিখ
পচিশ বছর গড়াবে।
অবন্তিকা সময় কত তারাতারী যাচ্ছে কেটে,
চেয়ে আছি আমি অদূর ভবিশ্যত পানে
আজ ও আমায় সন্ধা তারারা নিভু নিভু করে ডাকে।
চন্দ্রাবতী আজ আর আমার কাছে নেই,
সেও বছর দুয়েক আগে হারিয়ে গেছে
আর কলাবতী তো পরকালের ডাক শুনার অপেক্ষায় আছে।
বাড়ি ভিটা যা ছিল মহাজনের দেনা মিটিয়েছি তা দিয়ে।
ভাগ্যিস রুপমের মা ছিল,
নইলে তো মাথা গুজার ঠায় পর্যন্ত ছিলনা।
দিনে পাঁচ বার আজানের মধুর সুর শুনি,
মন্দিরের ঘন্টার আওয়াজ শুনি,
প্যাগোডার বেহালার করুন সুর শুনি

অবন্তিকা,
সেই গানটা কী আবার শুনাতে পারবে আমায়?
তোমার মে গানটি একবার শুনবো বলে কত রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিতাম।
তোমায় শেষবার যখন দেখেছি
তখন খুব বৃষ্টি ছিল
বৃষ্টির জলে ভিজে যাচ্ছিল আমার সমস্ত শরীর,
বৃষ্টির জল শত চেষ্টাতেও ভিজাতে পারছিল আমার দুটি চোখ।
চোখের জল সেতো শুকিয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই।

আমাদের দুজনের ঘরে নতুন অতিথি আসবে,
এসব নিয়ে দুজনে কতনা স্বপ্ন দেখেছি,
নাম ঠিক করে রেখেছিলে তুমি
মেয়ে হলে বৃষ্টি
ছেলে হলে আকাশ
কত টুকরো টুকরো কাপড় মিলিয়ে তুমি কাঁথা বানিয়ে রেখেছিলে
তোমার যেদিন প্রথম প্রসব বেদনা উঠলো
আমার রিকশায় নিয়ে তোমার ফুলবাড়ীয়া সরকারী হাসপাতালে গেলাম,
ডাক্তার না করে দিলো
ডাক্তার বললো,
ময়মনসিংহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান তারাতারী
আমি নিয়ে যাবো কীভাবে
আজ তো হরতাল
প্রেসিডেন্ট এরশাদ তো ক্ষমতাই ছাড়তে চাচ্ছে না
বিএনপি, আলীগ, জামাত মিলে জোট বেধে হরতাল ডেকেছে.
আমি কী করবো
ডাক্তার বললো,
আ্যাম্বুলেন্স নেই তো রিকশায় করে যান নিয়ে
যত সব ফহিন্নিরা ভিড় করে সরকারী হাসপাতালে।
জীবনের শেষ শক্তিটিকু হলেও ব্যায় করে
তোমায় রিকশায় তুলে
প্যাডেল চালালাম
না আমি আর তোমায় বাঁচাতে পারিনি,
অমন করে কেউ চলে যায় কিছু না বলে।
অবন্তিকা তোমার মেয়ে বৃষ্টি আজ অনেক বড়ো ডাক্তার হয়েছে
ফুলবাড়ীয়া সরকারী হাসপাতালে আজ প্রথম সে রোগী দেখবে
যার জন্য জীবনের সব দুঃখ ভুলে
বাড়ি ভিটা পর্যন্ত বিক্রি করে ডাক্তার বানিয়েছি,
সে আমার স্বপ্ন পূরন করেছে
সে আমার কাছে পণ করেছে
গরীব দুঃখী দের কে সে বিনা ভিজিটে চিগিৎসা করবে
অবন্তিকা বলো,
এমন মেয়ের বাবা মা আর কজন ই বা হতে পারে।
ইতি
মেঘ
পুনঃশ্চ আমার দিন ফুরিয়ে আসছে তুমি অপেক্ষা করো আমি আসতেছি।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।