ধন্যবাদ মা
- ফয়জুল মহী ২৯-০৩-২০২৪

(২১ম পর্ব)--------------ধন্যবাদ মা-------------স্মার্ট টিভিতে বুড়া লোকটা বাদামি রংয়ের বিকিনি পরা জলের ভিতর দীপিকা পাড়ুকোনে অবধান।লক্ষীর প্রতিবন্ধী ছেলেটার লালায় বুকের গামছাটা বেঢপ।মাছি ঘুরে ঘুরে ছেলেটাকে ছুয়ে যায়।মায়া খালার হাতে মোটা মোটা স্বর্নের আধান গলায় মোটা রজ্জু দেখলে বুঝা যায় এই সমাজের বড় মাল্লা।ওমা! খালা এইতো সেই পোলা।মায়া খালা অবর,দৃষ্টিতে আগুন যেন টেস্টারকে টোস্ট করে ফেলবে।খালা এই বাচ্চা নিয়েতো লক্ষীর সাথে কথা বলতে চাই।যা আমার সামনে থেকে,সে এখন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত এখন দেখা হবে না যা তোরা।যা গিয়ে বাহিরে বস,এই কোথায় তোরা এই বেজন্মাকে বাহির কর এখান হতে।কোথায় হতে এসে যায় এসব হারামি,এদের দেখে যেন ক্রিয়াভাবটাই মাটি হয়ে গেল।এই চল চল,আর তোদের দেখলে মেরে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলবো,আমাকে বেকুব বানানো যাবে না আমি অনেক খাপ্পা মানুষ।আবার আমাকে দেখে যা সামনে দেখ,মা কসম দ্বিতীয়বার কোন কথাই শুনবো না।(মায়া খালার কামরা হতে দূরে এসে)এই থাম শুন শুন(আস্তে আস্তে) এই হল তোর লক্ষীর কামরা,হিন্দী গান বাজতেছে তোর কানে আওয়াজ আসে,এর মতলব ভিতরে গ্রাহক আছে।এই পাড়ায় আসলে হামেশা মনে রাখবি যেখানে গ্রাহক আছে সেখানে শান্তিভঙ্গ করার চেয়ে না করাই ভাল,বুঝলি যা এখন যা ।এই ধাক্কা কেন মারতেছিস।আরে হাফ টিকেট শালার পো বলে ধাক্কা মারছি জবহ করে ফেলবো।চুপ করতো ট্রাফিক। এই পোলা আমাকে চোখ দেখায় যা এখানে আর এক মুহুত্বও থাকতে পারবি না,বেটি তুই আরমচে যা।এই এখানে একটু দাড়াই।কি জানি লক্ষী কয়টা বাজে বাহির হয়।পরি একটুতো সময় লাগবে,একটুতো কষ্ট সহ্য করতে হবে।এই নেয় তুই স্বাধীনকে নিয়ে এখানে বসে থাক আমরা আসি তুই কোথাও যাবি না।আচ্ছা ঠিক আছে।এই ট্রাফিক ওই যে লক্ষীর কামরা,তুই আমাার কাঁধের উপরে উঠে ওই ছিদ্র দিয়ে দেখ লক্ষী আছে কিনা।ঠিক আছে আয়।"চিস বড়ি হে মাস্ট মাস্ট" গান ওহ।ট্রাই দিয়ে হাত একটা বাঁধা খাটের সাথে।আরে ভাল করে দেখ।লক্ষী আমার লক্ষী বউ,সুপার লক্ষী আমার লক্ষী।টেস্টার লোক একটা হাত পা বাঁধা ঘাটের সাথে।আরে লক্ষী আছে কিনা দেখ।লক্ষী ওই লোকটার.......।লোকটা সুপার সুপার করছে।টেস্টার লোকটা আস্তে আস্তে আর আমি মরে যাব মরে যাব কেন করছে কি জানি।থাক,তুই দরজার কীলক খোলার চেষ্টা কর।আর একটু উপরে,খোলে গেল কীলক। এই কোন কোন ? লক্ষী আমার হাত খোলে দেয়।ওই আমার মা,আমার হাত পা খোল।এই কোন তোরা,কেন এসেছিস।আমার ইজ্জত যাবে রে,আমারে ছেড়ে দেয়।আরে সাব তুমি কেন ভয় পাচ্ছো আমি দেখছি।এই হারামির বাচ্চা,নর্দমার কীট বিনা পয়সায় আসল ব্লু ফ্লিম দেখতে এসে গিয়েছে(জলদি নিজে চাদর গায়ে দেয় এবং লোকটার গায়েও চাদর দিয়ে দেয়)।এই কি চাই তোর,যা বাহিরে যা।(টেস্টার লোকটাকে দেখে,কালো প্যান্টি-ব্রাতে লক্ষীও যেন অতুল) এই এমন করে কি দেখতেছিস।লক্ষী দয়া করে আমার হাত-পা খুলে দাও না।রাখো না শেঠ,এই কখনো মেয়ে দেখিস নাই।আমি তোমাকে দেখতে আসি নাই,আমি আসছি এই বাচ্চা নিয়ে কথা বলতে।তুই বাচ্চাকে দেখ আর বল কে এই বাচ্চা,কেন তুই পৌরসভার ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসলি বল লক্ষী।এই দেখ তোর বাচ্চা কত সুন্দর।(অন্ত্যজ চেহারা)এই খালা।খালা,ওহ! কেন খালাকে ডাকছো লক্ষী।এই শান্তি,এই গিট্টু জলদি আয়।এই নেয় তোর বাচ্চা লক্ষী।হাত খোল শালী।খালা এই বাচ্চা লোকদের বাহির কর।(চলবে) (২২ম পর্ব)----------------ধন্যবাদ মা-------------এই শান্তি সব হারামির বাচ্চাদের বাহির কর(উচ্চ কন্ঠে)|মা!!! এসব কি করে ভিতরে আসে|আমরা ভয়ে আগলে পা ফেলি।কি হয়েছে মা এমন হুঙ্কার কেন রে।হিঃ হিঃ হিঃ শান্তি হেসে শাড়ীর আঁচলে মুখ লুকায়| সালাম আন্টি। এবার মায়া খালাও হেসে উঠে।হাত খোল না ইয়ার(হাত দিয়ে চোখ ডাকে আবার দাত দিয়ে ট্রায়ে কামড় দেয়)।লক্ষী তুই তো ইংরেজদের মত হা-পা বেঁধে....।হাঃ হাঃ হাঃ এই লক্ষী খোল না।এই বিচ্ছুদের ভিতরে কেন আসতে দিলো বলো।আরে অপনয়ন কর না মা,পার্টি মাল ধার মনে হয় হয় যা ভাল করে দেখ।আরে বাবা তুমি কেন এসেছো যাও যাও টিভি দেখ গিয়ে।হাঃ হাঃ হাঃ সবাই হাসে। এই টেস্টার বহুত ঝামেলা রে চল আমরা চলে যাই।দেখ পরি তুই দ্বিতীয়বার এই কথা মুখে আনলে পাথর মেরে তোর মুখ ভেঙ্গে ফেলবো শালী ফালতু।চুপছাপ বসে যা আমার পাশে ট্রাফিক।দিনভর এমন ঝগড়া করা ভাল না ।এই টেস্টার আচ্ছা ওই বেড়ার হাত কেন বেঁধে রেখেছে।আরে গ্রাহক টাকা না দিয়া পালিয়ে যাবে তাই।ওই হাওয়ার সন্তান,কোন হারামি জন্ম দিয়ে রাস্তায় ফেল গেল।আবে যা যা ঢাক-ঢোল,এই লক্ষী হাত খোল,মা হাত খোল(সবাই একসাথে বলে)হাঃহাঃহাঃ। পরী কোথায় চলে গেল আমি দেখে আসি তোরা বসে থাক,এখানের হালচাল তেমন ভাল লাগছে না।এই গলি দেখতে যেন মেয়ে মানুষের হাট।দিঘীর পাড়ে মানুষের হাট আর এই হাটের চিত্র এক নয়।শিশিরে স্নানরত দূর্বাঘাসে বসে পান্তা ভাত খাওয়া মানুষগুলা শরীরের ফ্রেমে বন্ধি।আর এই হাটের মানুষগুলা লাল কৃষ্ণচূড়ার রংয়ের জলে স্নান করে দামি বড়ি স্প্রের সুবাস ছড়ায়।দুুই হাটের বিক্রিত মানুষের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন জীবনের চাকা সচল রাখা অথচ এই সব শ্রমিকদের আমরাই দলিত করি। এই ট্যাক্সি যাবে।এই শেঠ আমিও যাব।টেস্টার (উচ্চস্বরে) লক্ষী চলে যায় রে।এই লক্ষী,এই লক্ষী।চল চল শেঠ দ্রুত ট্যা্ক্সী চালু কর।এই লক্ষী তোর বাচ্চা,এই দেখ কি সুন্দর,এই লক্ষী গ্লাস খোল।কেন,কেন তুই বাচ্চা নিবি না।এই দেখ আমি আর রাখতে পারবো না তোর বাচ্চা,আরে মরে যাবে যে।লক্ষী লক্ষী লক্ষী,এই ট্রাফিক কোথায় তোরা।এট ট্যাক্সীর পিছে পিছে যা।আরে জলদি চালিয়ে যা ভাই।সাগর পাড়ে বাধে বড় বড় পাথরের উপর বসে সন্ধ্যার সাদা কালো আলোতে টেউয়ের তালে চুমার নৃত্য উপভোগে মত্ত কপোত-কপোতি।এই যা একটা একটা করে দেখ পরী।ওই ছাতার নিচে দেখে আয়।এই তোরা দুইজনতো বেড়া মানুষ .... কেন।এখানেও কি শান্তিতে একটু.....।যা যা,যাবি কিনা বল না উঠে দিব একটা।যাাচ্ছি আমরা আর তোমরা মজা নাও।হাঃ হাঃহাঃ ছাতার নিচে কিরে,দুই বেড়ারে।যা পরী তুই আমি প্রস্রাব করবো।লক্ষীর তো লাল ওড়না ছিল তাহলে এদের দেখতে হয়।কপোত-কপোতির হাত পায়ের কারুকাজ দেখতে ভালই লাগে রে।এই কোন তুই।ছিটকে পড়ে দুরে টেস্টার,ব্যাথা পেয়েছিস তুই।না পরী।(চলবে) (২৩ম পর্ব)--------------ধন্যবাদ মা---------ওহ বাহির হয়ে যাচ্ছে যেন জল,ইয়া আহ।এই কোন কোন উপর হতে গরম জল ফেলছে।আবে কোন,লক্ষী উপর হতে লোনা জল কোন ফেলছে আমার মাথার উপর দেখ না ।ইসরে এদিক দাও আমি মুছে দিই (শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছে)।এই এই লক্ষী দেখ ওই যে বিচ্ছু।আবে এই তো ওই।এই কি দেখতেছিস যা ভাগ।এই টেস্টার এই টেস্টার,পরী ও পরী জলদি আয় জলদি আয় লক্ষী এখানে।তোর মারে,যা ভাগ হারামি।এই আমার ব্যাগ দেয় আমি যাই।আরে শেঠ তুমি ভয় পাও কেন,তাকে এখনি দুই থাপ্পড় লাগাবো,এই কাকে ডাকছিস।এই তুই তাকে মারছিস কেন।আবে তুই কোন,কি চাই যা ভাগ।তুই এই বাচ্চাকে পৌরসভার ডাস্টবিনে কেন ফেলে চলে আসলি।তোকে কে বলেছে,কে বলেছে বলনা।আমি নিজে দেখেছি তুই দুবাইওয়ালার ট্রাক্সিতে গিয়েছিস,আর মোতালেব শেঠ আমাকে সব বলেছে।তোকে শেঠ বলেছে,মিথ্যা কথা সব এখন তোকে দেখাবো।আমার ব্যাগ দিয়ে দেয় লক্ষী,এই নেয় তোর টাকা আমি যাই তোর এসব ঝামেলায় আমি নাই। এই বাচ্চাদের ভয়ে তুমি সাহেব এমন বকবক কেন করছো,একটু চুপ কর না৷ওই শালী আমাকে চোখ দেখাবি না,তোর কারনে ছুটির দিনে সকাল হতে একটু সন্ধি হল না এই তোর টাকা(মাটিতে ফেলে পাঁচশত টাকা)৷আরে সাহেব তোমরা পুরুষ মানুষ এমন কেন শুধু মুধ আননে ঢালতে চাও তার সাথে মধুলিহ হলেই টাকার আচমকায় নাচন করো৷শালী রাস্তা ঘাটে বাচ্চা ফেলে আসে৷এই বাচ্চাও তোমার মত একজন সাহেবের যে কিনা সমাজের উপর তলার শেঠ যে কিনা বাচ্চা জন্ম দিতে বাদ্য করে আবার সেই বাচ্চাকে ডাস্টবিনে ফেলতেও আমার মত লক্ষীর সাহায্য নেয়৷এই নেয় তোর বাচ্চা লক্ষী৷এটা আমার বাচ্চা না একবার বলেছি না তোকে৷তাহলে কার বাচ্চা৷এই বাচ্চা এখন আর আমি নিব না৷কেন নিবি না,এই দেখ তার মুখ পুরা নিখিল সৃষ্টি তোর ঠাহর হবে৷আমার বাচ্চা হলেও এখন আমি নিব না,তুই সাথে নিয়ে যা।তুই মিথ্যাবাদী এই বাচ্চা তোর না,তোর বাচ্চা হলে কখনো রাস্তায় ফেলে যেত না পৃথিবীতে এমন মা নাই যে নিজের বাচ্চাকে রাস্তায় ফেলে যায়।হ্যা এইটা আমার বাচ্চা না,আমি পাঁচ হাজার টাকায় কিনেছি কিন্তু মা রাখতে রাজি হয়নি ছেলে বলে।মা বলে লালন-পালন করে বড় করলে পরে আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকেই মারবে,রাখা সম্ভব নয় বলে ওখানে ফেলে চলি আসি(কান্না স্বরে) কিন্তু এখন আমি নিতে পারব না তুই নিয়ে যা।পরী এই পরী কেন কান্না করছিস।বড় হয়ে আমিও লক্ষীর মত বাচ্চা বিক্রি করতে হবে নাকি টেস্টার।পরী প্রশ্নোর উত্তর আমি জানি না।স্বাধীন আমার কোলে ভোগা ও ভুগা।শীত ও গরমহীন সন্ধ্যায় লক্ষীর কথায় দড়াম করিয়া এক ফালি হাওয়ার ঝটকায় স্বাধীন ওয়াও করে উঠে।পরী জলদি এসে আদর করতে গিয়ে নাকের এক কুঁজ জল স্বাধীনের মুখের উপর ফেলে।এই জল স্বাধীন হয়তো মায়ের দুধ ভাবে মুখ নাড়ে।কি দরকার ছিল এমন করার লক্ষী,প্রথম বাচ্চা কিনা তারপর আবার বাচ্চাকে ফেলে দেওয়া শুধু কি টাকার জন্য টাকাতো তোমার এমনিতেই অনেক কামাই হয়,তারপরও।হ্যা তারপরও এইসব,কেন জানিস পয়সা আমি আজ কামাই করি কারন লোক আমার কাছে আসে আমার রুপ দেখে আমার শরীর টাইট বলে কিন্তু যখন আমার বয়স চল্লিশ হবে তখন আর কে আসবে আমার খদ্দর হয়ে তখন আমার প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে কি খাব।আমি চাই না পড়ালেখা ছেড়ে আমার মেয়ে এই ধান্দায় আসুক।আমি নিরব হয়ে নবডঙ্কায় নজর ফেলি।আকাশ তুমি দাও না দুইফোটা জল,সেই জলে লক্ষী সতী হবে।ওই ইশ্বর চুপ করে থাকবে কত কাল বলনা,তুমি কি পারবে না মাকে ফিরিয়ে দিতে।(চলবে)
(২৪ম পর্ব)--------------ধন্যবাদ মা------------দত্ত শ্রাবণ নাম তার, holy spirit hospital পাওয় যাবে যা এবার আবে যা না।চল টেস্টার। সাহেব টাকা কেন মাটিতে (শান্ত ও কান্না জড়িত স্বরে) ফেলেছো এই টাকার বিনিময়তো তোমার শবের আগুন নিভে আর সেই টাকায় আমার তন্দুর উষ্ণ হয়ে শবের জঠরাগ্নি নিবারণ হয়।আমার মেয়েটা বুকের দুধ পান করা ছাড়ানোর পর ভাত খেতে চাইতো না আর মেয়ের বাবা কোন দিন ফিরে দেখারও জরুরৎ মনে করিনি এক কৌটা দুধ কিনে দিতে কত কাকুতি-মিনতি করেছি অথচ সে রোজ রাতেই মদ খেয়ে বাসায় ফিরতো।দেখ দেখ শেঠ কপালের দাগটা কটিবন্ধ দিয়ে মেরে করছে,তারপরও আমি আরেকটা বাচ্চার মা হই!! আর সে বাচ্চাটাই প্রতিবন্ধী।যে লোকটার প্রতি এক ডগা নেহ ছিল না আর সে লোকটাই মদ খেয়ে এসে প্রতি রাতে আমার দেহ লেহন করত,আমার উপর সব ধরনের রাজ করত তারপরও সব সয়ে যেতাম যদি কায়িক আঘাত না করত যদি আমার মেয়ের ঠিকভাবে ভরণপোষণ করত।বাপ মরা মায়ের সংসারে ভাবীদের শাসনে আমি আঁধিতে পড়েই কুল হারা হই।স্বামীর কুল মায়ের কুল হারিয়ে হাতে এক বাচ্চা আর পাকাশযে এক বাচ্চা নিয়ে যখন অস্তিত্বের লড়ায়ে অবঘাতী তখন মায়া খালাই আমাকে ফোঁটা ফোঁটা ওঘ দিয়ে সতেজ করে বাঁচিয়ে থাকার প্রপঁচ বাড়ায়।এই মায়া খালার ঘরে আমার ছেলের জন্ম হয়,সে খালা হতে আমার মা হয়ে যায়।সে কোন দিন আমাকে এই পেশায় আসতে বলেনি,আমার অবস্থাই আমাকে বাধ্য করছে।যে লোক বিয়ে করলো বাচ্চার মা করল সেই লোক ভালবাসার হল না এই অবিদ্যাখানার সর্দারনী আমার ভালবাসায় পরিনত হল।শুন শেঠ,আমার প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য যে টাকা,যে সময়,যে শ্রম মায়া খালা ব্যয় করেছে তার অদলবদলে আমার দেহের মূল্য "অনেক অনেক" কম।আমার গা দেখে বহুত যশস্বী মানুষ আমাকে নতুন করে কটোরা ভরে ভালবাসা দিতে চেয়েছে হয়তো এতে কিছু মানুষের অভিনয় থাকলেও সবারতো আর অভিনয় ছিল না।কিন্তু প্রথম জীবনের অপ্রীতি আমাকে জিন্দালাশ করে ফেলেছে,আমি এখানেই নিজেকে নিরাপদ মনে করি।এখানে থাকতে থাকতে মানুষের মুখোশ পরা রঁজনে আমি নিজেই মুখোশ পরে ফেলি আর তাইতো বাচ্চার ফেরি করি। ম্যাডাম,দত্ত শ্রাবণ কি আছে?কোন দত্ত শ্রাবণ ওহ শ্রাবণ।জ্বী জ্বী ম্যাড়াম।সে এখানে কাজ করতো কিন্তু তাকে চাকুরী হতে বাদ দিয়ে দিয়েছে।ওহ,বাদ দিয়ে দিয়েছে।হুম।কবে ম্যাড়াম।এই দুই-তিন দিন হয়েছে সে রোগীদের জিনিস চুরি করত কাজে আসত মদ পান করে এত হেরাফেরি করত যে বড় কর্মকর্তা বলেছে সে যেন আর কখনো হাসপাতালে ঢুকতে না পারে।এখন তাকে কোথায় পাব।আমিতো বলতে পারবো না কোথায় তাকে পাওয়া যাবে সে আগে স্টাফদের বাসায় থাকত চাকুরী চলে যাওয়ার পর বাসাও চেড়ে চলে যায় এখন কোথায় থাকে বিধাতা জানে,কি কাজ তার সাথে।হুম(স্বাধীনকে দেখে) ঠিক আছে আমি তাকে খুজে নিব ধন্যবাদ আপনাকে আপনি আমার সাথে ভাল আচরণ করছেন।ম্যাম,আমারও ধন্যবাদ।আমার এবং স্বাধীনের পক্ষ হতেও ধন্যবাদ আপনাকে।মনটা খারাপ হয়ে গেল পরী।"হায় খোদা তোমাকে দেখি না আমরা তারপরও বিশ্বাস করি তোমায়,একবার এসে ধরা দাও না আমায়,হায় খোদা।দাও না ফিরিয়ে মাকে তাঁর কদম চুমা দিই"।রমজান মাস বলে মসজিদে গজল রাস্তায় বাহারী খাবার ইফতারের জন্য। ট্রাফিক দশ টাকা দিয়ে তুই আর পরী কিছু কিনে খেয়ে নেয়।তুই খাবি না টেস্টার।না,আমি খেলে তোদের পেট ভরবে না।তাহলে আমরাও খাব না।(চলবে)
(২৫ম পর্ব)------------ধন্যবাদ মা----------চন্দ্রাতপের কিরনে বিজলীর আলো নেভানো নেভানো মনে হয়।যা পরী তোর নয়ন মূক হয়ে আসছে,এমনিতে আজ সারাটা দিন তোরা আমার সাথে ছিলি।শীত শীত রাতে রাস্তার ফুটপাথে ঘুমানো আরামদায়ক বটে যদি পরপীড়ক চালকগুলা মদে মাতাল হয়ে গাড়ি না চালায়। সারাটা দিন মূত্রত্যাগ করে তুই আমার শার্ট-প্যার্টকে প্রসাবখানা বানিয়ে ফেললি স্বাধীন,দেখ দেখ কেমন বদবু বাহির হচ্ছে।তোর এই গাত্রমার্জনী আমি ফেলে দিলাম,এই তুই এত প্রসাব করার জন্য জল কখন পান করিসরে (সাদা তোয়াল দিয়ে স্বাধীনকে মুছতে থাকে টেস্টার আর স্বাধীন হাত-পা নাড়িয়ে অপহাস করে)।এই দেখ চন্দ্রমা আলো দিয়ে আমাদের ঘর কত সুন্দর ভাবে আলোকিত করে দিয়েছে,আসলে জগত অনেক অনেক চারুময়।কেউ জীবনে যুদ্ধ করে যদি বাঁচতেই না পারে তবে যুদ্ধের ময়দানে না নামাই ভাল। মনে রাখতে হবে জীবনে পরাজয় বলে কিছু নেই। শুধু আছে ইচ্ছাকৃতভাবে বোকার মতো নিজেকে সরিয়ে দিয়ে অন্যকে জায়গা করে তাদের জন্য সুযোগ করে দেয়া।বান্দার নিজ থেকে হার মানা দেবতাও পছন্দ করেন না। সুতরাং শেষ অবধি নিজের জায়গা ছাড়া হবে না।কাম্য-মরন নয়,বাঁচতে হবে যুদ্ধ করেই।আর তোকে মায়ের হাতে তুলে দিতে পারলেই আমি যুদ্ধে জয়ী হব।এই এই তোর পেটের মধ্য কালা দাগ এই দাগতো আমরও আছে,আর এই জনম দাগ মা-বাপের কারো না কারো থাকে।এই স্বাধীন তুই ভাবছিস তোর মা মিলবে কি মিলবে না,আরে তোর কি মনে হয় তোর মা মিলবে না।এক মিনিট দাঁড়া আমি পয়সা দিয়ে দেখি (পয়সার আওয়াজে স্বাধীন প্রান খোলে হাঁসে)।এই স্বাধীন আমি শতভাগ প্রমিত তোর মা মিলবেই মিলবে।শ্রাবণ তোরে চুরি করেছে তাতিয়া অবশ্যই চিনবে,এই শহরে যেত বাচ্চা চোর আছে তাতিয়া সবাইকে চিনে আর আপনা শালমানের সাথে তাতিয়ার ভাল সম্পর্ক।যখন শালমান আসবে তাকে বলবো তাতিয়াকে জিজ্ঞাস করতে আরে শালা তুই ঘুমিয়ে গেলি আর আমি বক বক করছি।যাক ভালই হল তুই ঘুম গিয়েছিস আমিও যে খুব ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়ি। টেস্টার আমি শালমানকে সকালে দেখেছি।কিছু বলিসনি তুই।বলেছি,সে বলে আমার কোন দোস্ত নাই,আমি যখন লটারির টাকা দিতে বলেছি তখন আমাকে গালি দিয়েছে,আমার সাথে মারামারি করেছে আর এখন দোস্ত বলতেছে,সে বলে এসবের ভিতর নাই।আরে ঠিক হয়ে যাবে,অনেক দিন দাঁত মাজন করি নাই ট্রাফিক,দাঁত মাজনের ছাই ....।এই নেয় ছাই।মুখে কাছি বাধা নিগ্রো বোতলে এক ককুদ ছাই যেন আমার ও স্বাধীনের জীবনের মত,মুখে ভরে দাঁত মাজন করে বারি করি।গাছ হয় কাঠ-কয়লা,তারপর ছাই এরপর উঠে আসে কুকুরে সাথে বন্ধুতা করে ফুটপাথে রাত যাপনকারী টেস্টারের মুখে।নর-নারীর ভোগের ফল টেস্টার যেমন জলের ঊর্মিতে ভেসে উঠে আবার ঊর্মিতেই ডুবে।ট্রাফিক একটু জল এনে দিবে ভাই।এই নদীতে যা,ড্রামের ভিতর এক ছিটা জলও নাই।ওই দেবতা দেখ তুমি জলের জন্য আমার গন্তব্য নদী,ছাই জন্য অন্য কারো উনান,আর অদনের জন্য আমার এই বদন।কিন্তু আমাকে সহনকারীরা তারকা হোটলে কর্তিত চামুচের টুংটাং নৃত্যে দামি দামি খাবার ভক্ষনে প্রলিপ্ত অথচ তুমি তাদেরও শাসক।(চলবে) (২৬ম পর্ব)-------------ধন্যবাদ মা------------ শালমান কখনো ঠিক হবে না টেস্টার,আমাকে বলে চল চল বেশী কথার দরকার নাই পাল্টি মার আমার সামনে হতে।আর তুই এমনি পাল্টি মারলি।তাহলে আর কি করব বল।ইস,তাহলে এত দিনের কষ্ট জলে ভেসে যাবে,যেভাবে হোক শালমানকে পটাতেই হবে।হ্যা টেস্টার তাই করতে হবে।ট্রাফিক যা বদনা নিয়ে আয় পানি নিতে হবে।নদীর পানিতে এত কিছু ভাসে কেন টেস্টার এই যে দেখ মৃত হাঁস আবার জীবিত হাঁসও আর কুকুর,বিড়ালের মত মৃত মানুষও ভাসে।আরে বাপ যা তুই জলদি পানি নিতে হবে। চল চল ট্রাফিক নালার কাছে।একবার আয় যা,একবার আয় যা।আরে আপনা আদুও পায়খানা করে,দুইজন দুইপাশে বসি।এই আদু শালমান কোথায়ে তুই কি দেখসিছ তাকে।আমি জানি সে কোথায় তবে বলব না।কেন কেন।শালমান ভাই মানা করেছে বলতে।তাকে তুই ভয় করিস।আমি কারো বাপরেও ভয় পাই না।তাহলে বল না কোথায় সে।ওই,কোথায় সে(রাগের স্বরে)।থাক থাক টেস্টার সে জানে না এমনি সেয়ানাগিরি করতেছে আমরা খুজে নিব এই ফালতু কি বলবে।হুম,ঠিক ট্রাফিক, চল পাছা সাফ কর।চল চল।এই দাঁড়া ফালতু কাকে বলছিস,দাঁড়া ট্রাফিক। পাঁচ-ছয় জনের সুখের আসর।সবার বয়স পনর-ষোল সাল হবে হয়তো।গাজার আসর জমানো যেন তাদের ব্রত।একজন নিজে নিজেই হাতে সূচি প্রয়োগে ব্যস্ত।এই সকাল সকাল এইসব কি ভাইয়েরা।এত কষ্ট করে দুই-চার টাকা রোজগার করে মদ খাজা খাও কেন,কি মজা পাও তোমরা।লও এই হল টেস্টার সাব,শুনুন এতে কখনো কখনো মা-বাপ আসে দেখা দেয় আরে কখনো আবার মৌসুমি এসে ....তোর লাগবে কিনা বল।যা শালা এতে মর তোর সব।ওই শালমান।আবে সব এসে হাজির,এই শালা তুই বলেছিস এদেরকে আমার কথা।আমার পিছনে কেন তুই এত বড় লোক,আমিতো নগন্য রেল স্টেশনের শালমান।এই তুই আমার কাম না করলে বলে দেয়,কেন ওই দিকে চলে যাচ্ছিস এখানে গাড়ীর হরন স্বাধীন সহ্য করতে পারবে না।দেখ শালমান আমি তোকে আমার দোস্ত মনে করি এই জন্য তোকে হাত জোড়ে অনুরোধ করতেছি।হাঃ হাঃ হাঃ দোস্ত মনে করিস তাহলে লটারী খেলতে টাকা কেন দিস নাই,তোর কারনে আমার ইজ্জতের মা-বোন হয়ে গিয়েছে জানিস তুই।তোর জানার কথা কেন আমি লটারীর টাকা দিনাই।জানি আমি হাসপাতালের দারোয়ান কাকাকে মদ কিনে দেওয়ার জন্য।হুম,কাকার সাথে আমার ওয়াদা,আর দেখ স্বাধীনের সাথেও আমার ওয়াদা তার মার কাছে তাকে ফেরত দিবই আর ওয়াদা করলে আমি ভঙ্গ করি না তাতো তুই জানিস।হুম টেস্টার আমি জানি তুই বড় একটা বেকুব।এই শালু স্বাধীনের সামনে সিগারেটে আগুন দিবি না।ঠিক আছে,আবে বস এখানে।তুই জানিস তোর বাপ কেন লেংড়া,সে প্রথম স্টেশনে ঝাড়ু লাগাত কাউকে ঠাহরও করত না কিন্তু একদিন দৌড়াতে দৌড়াতেই গাড়ীর নিচে কাট,ব্যস পা কাট তার সুকৃতি ভাল যে এক পা কেটেছে যদি দুই পা কাটতো তাহলে কে তাকে খাওয়াতো,কেউ খাওয়াতো না।আমরাও সেই রকম টেস্টার,যদি কিছু হয়ে যায় তোকে আমাকে দেখারও লোক নাই তোর ওয়াদা তখন কোন কাজে আসবে না,কিন্তু আমরা একে অপরকে দেখবো কারন আমরা মা-বাপহীন রেল স্টেশনে গড়া একই মানুষ ওই কাকা,স্বাধীন তোর কি লাগে কিছু না কিন্তু আমি তোর দোস্ত লাগি,আমার যদি কিছু হয়ে যায় তুই আমাকে খাওয়াবে বল খাওয়াবে।চোখের জল মুছে নেয় শালু,তোর কি মনে হয় আমি খাওয়াবো না।বেকুব,তুই বহু বড় বেকুব।(চলবে)
(২৭তম পর্ব)--------------ধন্যবাদ মা-------------- চল,উঠরে। বল সব না হয় এই দেখ রশি হাত-পা বেঁধে রেল লাইনের উপর ফেলে রাখব। আমি কিছুই জানি না শলোমান। শ্রাবণ আমরা জানি তুই সব জানিস এখন বলবি কিনা বল। বলছি আমি জানি না। টেস্টার বোতলটা শ্রাবণকে দেয়।দেখ না বলে তুই যেতে পারবি না তারচেয়ে ভাল গলায় মাল ঢাল আর কথা বাহির কর। না না আমি কিছুই জানি না। টেস্টার এত সহজে বলবে বলে মনে হয় না এর হাত-পা বেঁধে রেল লাইনে নিয়ে চল। হাঃ হাঃ হাঃ কিছুই হবে না আমি মরে গেলে আমার জন্য কান্না করার লোকও নাই,বিয়ে করার পাঁচ মাস পরেই আমার বউ পুরাতন প্রেমিকের সাথে চলে যায় আর আমি তাকে ভালবাসি বলে দ্বিতীয় বিয়ে করি নাই। ওই মাদার ..(পাথর দিয়ে কপালে আঘাত করে)। বলছি বলছি শলোমান। বল না হয় দেখ গাড়ি এই লাইনে তোর উপর দিয়ে যাবে আর বললে তোকে বাঁচাবো না বললে তোকে ফেলে যাব । আমার আসলে ভাগ্য খারাপ আমাকে তখন চাকরী হতে বাহির করে দেয় তাই ভাবি যাওয়ার সময় আমার বস বড় ডাক্তারকে একটা শিক্ষা দিয়ে যাই এই জন্য বাচ্চা চুরি করি।কিন্ত ওই দিনই হাসপাতাল হতে বড় এক লোকের বাচ্চা চুরি হয়ে যায় তার জন্য সব জায়গায় পুলিশ তল্লাশি শুরু করে এই ধসা বাচ্চাকে কেউ কিনতেও রাজি হচ্ছে না আর আমার কাছে রাখা ঝামেলা এইসব চিন্তার ভিতর ওই প তিতা নিতে রাজি হল।বললো কিছু টাকা দিব বাচ্চা আমি নিয়ে যাব ব্যস টাকা নিয়ে বাচ্চা দিয়ে দিই।আর কিছু না মা কসম সত্য বলছি। ওই গাড়ি আসছে,হরণ শুনে শ্রাবণ বাচ্চার মত কান্না শুরু করে। ওই গাড়ি আসছে বাঁচা বাপ,হাত খোল।না খোলব না বল কার বাচ্চা এটা।বলতেছি বলতেছি বাচ্চাকে আমি মোটা মহিলার হেফাজত হতে তুলে আনছি।ওই মোটা নার্স সব জানে তাকে গিয়ে ধর আমাকে ছেড়ে দেয় বাপ গাড়ি চলে আসছে গাড়ি গাড়ি ওহ আমাকে ছেড়ে দেয়।(চাকু দিয়ে রশি কেটে দিবে ভেবেও কাটে না শলোমান) যা শালা। শলু ভাই আমি একটা লাথি মারি। না থাক ট্রাফিক । চল সবাই। গাড়ি লাইন পরিবর্তন করে শ্রাবণ ভয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকে। উপর ওয়ালা বুঝে শুনে দেমাগকে দিল থেকে উপরে বানাইছে যাতে দেমাগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় দিল দিয়ে না।প্রণেতার সৃষ্টি এই দেমাগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় মানব শিশু বেচা-কেনার তাও আবার রচকেরা।আস্তে আস্তে শ্রাবণ চোখ খোলে দেখে আশে পাশে কেউ নাই,গাড়ি চলে গিয়েছে পাশের লাইন দিয়ে হাত-পায়ের বাঁধ খোলাা কিন্তু সে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেও পারছে না।চোখে শ্রাবণের লাবণিক জল হয়ত দিল আর দেমাগ আজ একসাথে বলে উঠছে তুই নিজেতো মানুষ।সাদা হাফ হাতার টি-শার্টে লাল রক্তে যেন সস্তা মদের গন্ধ,বার বার প্রতিধ্বনি হয় শ্রাবণ তোর রূপটাই মনুষত্বের কিন্তু কাজটা।আউটারে লাল বাতি জ্বলে উঠে আরেকটা গাড়ি আসার সময় হয়েছে,স্টেশন এখন যাত্রীতে ভরপুর আরেকটু পর শুণ্য।(চলবে) (২৮ তম পর্ব)-------------ধন্যবাদ মা------------ holy spirit hospital - সুন্দর মনোগ্রাম সাদা পায়রার।হাসপাতালের দালানটাও সাদা রংয়ের ঝকঝকে।অনেক বিশাল জায়গা নিয়ে গঠে উঠেছে হাসপাতালটি,দক্ষিন পাশে ডাক্তার ও নার্সদের বাসস্হান,নানান জাতের ফুলের বাগানে পরিবেশটা মনোরোম।আহ্ শলোমানটা আসে নাই কোথায় যে যাই এখন।আরে টেস্টার দেখ,জরুরী বিভাগ লেখা এখানে । চল,এই নার্সকে জিঞ্জাস করে আসি। সিস্টার দয়া করে একটু দেখুন,এই বাচ্চা ফেরত দিতে আসছি আমরা।আমাদের দেখে অনেক মহিলা জমা হয়ে যায় জরুরী বিভাগে।সবাই একে অপরের মুখ দেখতে থাকে।ধন্যবাদ বাচ্চা লোক।এবার তোমরা যাও। কখন ফেরত দিবেন স্বাধীনকে তার মায়ের কাছে। জলদি,জলদি ফেরত দিব। শিলা বাচ্চাকে তুমি এবার ভিতরে নিয়ে যাও।এখানে কেন এত ভিড়। মাছ বাজার না এটা একটা আধুনিক শিশু হাপাতাল।যাও সবাই ভিড় করা যাবে না ,নার্সের চিফ উচ্চ কন্ঠে চিৎকার করে।ফ্যাকাশে লাল রংয়ের জামা পরা নার্সটা স্বাধীনকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়। এই টেস্টার খাতা হাতে সাদা শাড়ি পরা ওই মহিলা দেখ। ম্যাম। ওহ তুমি ম্যাম এইতো এই বাচ্চাকে নিয়ে এসেছে । তাহলে তুমি নিয়ে এসেছ,কি নাম তোমার টেস্টার(শলোমান এসে বলে) হ্যাঁ হ্যাঁ টেস্টার। তুমিতো বহু ভাল কাজ করেছ তার জন্য তোমাকে পুরুস্কার দেওয়া দরকার,এই তাকে একশত টাকা দিয়ে দেয়,টাকা নিয়ে চলে যাও। ওহ,আমার টাকার দরকার নাই,স্বাধীনের মা কবে আসবে তাকে নিতে বলে দিন। স্বাধীন!! হ্যাঁ ম্যাম স্বাধীন তার নাম।এই হল আমাদের নাম। আচ্ছা তোমরা চিন্তা কর না,আমি ওর মায়ের সথে আলাপ করব এখন তোমরা যাও।(নার্সের চিফ বিরক্তবোধ করে বিদায় নেয়) ওর মা কি দুর কোন গ্রামে থাকে? না না এখানে থাকে,তোমরা যদি না যাও তাহলে কি করে তার মাকে ডাকবো তোমরা জলদি চলে গেলে জলদি ডাকতে পারব ঠিক আছে এখন যাও সাবাস বেটা।(টেস্টারের চোখে মুখে সন্দেহ) টেস্টার আমি আছি তোর সাথে চিন্তা করিস না চল। চল টেস্টার শলোমান ভাই যখন বলছে, বাহিরে এসে টেস্টার একদৃষ্টিতে হাসপাতালের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরে টেস্টার চল না। তোরা যা,আমি পরে আসবো । কেন রে, তার মায়ের কোলে তুলে দিয়ে আসবি। হুম। (চলবে) (২৯ তম পর্ব)----------ধন্যবাদ মা---------- আবে টেস্টার হাসপাতালের চক্কর,তুই ফেঁসে যাবি আর তুই কি জানিস স্বাধীনের মা কখন আসবে?বোকার মত কথা বলিস ,চল একসাথে।টেস্টার(কাঁধে হাত রাখে শলোমান) মাল পানি মিললে আমিও তোর সাথে থাকব। যা এখান হতে (ধাক্কা মেরে শলোমানকে) । তাহলে তুই অপেক্ষা কেন করবি চল আমার সাথে। আবে তোরা যা না,আমার পিছনে কেন পড়লে। যা শালা তুই মর এখানে,চল তোরা। না আমি যাবো না,আমি স্বাধীনের মাকে দেখব। আমিও দেখব। এই চুপ সবাই চল শালা। হাসপাতালের পিছনে ছোট্ট একটা শিশু পার্ক ।তাতে নানা রকমের খেলনার সরঞ্জাম বিদ্যমান ।গায়ে সেই সাদা শার্ট যা ময়লায় বাদামি রং ধারন করেছ।পায়ে সেলাই করা সেই রবারের জুতা যা পা হতে বড়।কালো প্যান্টার জিপটা অনেক আগে হতে নষ্ট।মাথার চুল এত বড় যে কাটতে গেলে নাপিত দ্বিগুন পয়সা দাবি করবেন।মুখে হাত দিয়ে দোলনার সামনে বসে ভাবছি যেন এইসব ভাল হলে আমি হররোজ এসে দোলনা চড়তে পারতাম।দোলনায় হাত রেখে ধাক্কা দিব ভাবছি এমন সময় অটো রিক্সা হতে এক মহিলা নামে দ্রুত হাসপাতালের দিকে আসতে থাকে।কেন জানি মন খুশীতে ঝিলিক মারে আমিও উঠে তার পিছনে দৌড় দিতে থাকি।সে কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা হাসপাতালের ভিতরে চলে যায় । এই এই তুই কোথায় যাসচ্ছিস । সাব যাইতে দাও না,শুধু দুই মিনিটের জন্য ভিতরে যাইতে দাও সাব। না না,যা এখান থেকে,যা সোজা গেইটের বাহির যা। শত শত মানুষের কোলাহলে,সেবিকাদের রঙ্গিন পোশাক পরা কর্মব্যস্ততায় যেন হাসপাতালের শ্বসন ফেলবার ফুসরত নাই।তারপরও স্বাধীনকে রেখে যেতে কিসের ভয়ে যকৃতের পিড়া অনুভব হচ্ছে।আচ্ছা সে এখন কি করছে,হাঁসি দিয়ে হাত-পা ছুড়ছে তো? কেন যে স্বাধীনের জন্য আমার বুকটাতে কুহক লাগে বুঝতে পারি না।আজ কয়েকটা মাস ভাল করে খাওয়া-দাওয়া হয়নি,বাবাকে কাজেও হাত বাড়ানো হয়নি আর বাবাও আমাকে কিছু বলতে শুনিনি।বাবা হয়তো মনে করেছে দুইটাইতো রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া তারা একে অপরের কিন্তু আমার না।ওহ,ভাবনা আমাকে দিয়ে হবে না,তা হল টাকা পয়সা দিয়ে অন্যের হতে গালি খরিদ করার মত। "ভ্রমর কও গিয়া" গান বাজে ছোট্ট চায়ের দোকানে মন চাইছে চা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গানটা শুনি কিন্তু শার্ট ও প্যাটের পকেটে টাকা রাখাতো দুরের কথা পকেট ছিড়ে গিয়েছে সেই কবে।এরই মাঝে হঠাৎ করে এটা লাল ভ্রমর আমার সামনে দিয়ে উঠে গিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে আর তা আমার চোখে পড়ে ,দারোয়ানহীন দরজা পেয়ে আমিও দৌঁড় দিই ভ্রমরের মত।(চলবে)
(৩০ তম পর্ব)--------------ধন্যবাদ মা------------- দৌড়ে সোজা দুই নাম্বার বড় দরজার সামনে বেলী ফুলের গাছের আড়ালে আমি চুপ করে বসে ভিতরের অবস্হা দেখতে থাকি।লাঠি হাতে দারোয়ান দেয়ালের সাথে মাথা ঠেস দিয়ে ঘুমের রাজ্যে আমি সন্তর্পনে ভিতরে চলে আসি। আপনার মায়ের সব রিপোর্ট এই ফাইলে,এবং সবকিছু ঠিক আছে ভয় পাওয়ার মত তেমন কিছুই নাই। ধন্যবাদ সিস্টার। রিসেপশন হতে অটো রিক্সায় আসা সেই মহিলা ফাইল হাতে নিয়ে চলে যায়,কিন্তু কেন জানি তাকেই স্বাধীনের মা বলে আমার সন্দেহ হয় আর তাই লুকিয়ে লুকিয়ে তার পিছু নেওয়া।সবার চোখ থেকে বেঁচে স্বাধীনকে দেখতে হবে।ইস কোন কামরায় যে রাখছে।চুপে চুপে এক এক করে অনেক কামরা দেখা হল কিন্তু স্বাধীনকে দেখলাম না।জানানা সাদা পর্দায় ডাকা দরজাও বন্ধ আবার লোকজনর চলাচল কম,অবর কামরায় বাচ্চাগুলা রাখা রোগ জীবাণুমুক্তই।এখান হতে বাচ্চা অদৃশ্য হয়,ভাবতে যেন বিশ্বাসই মেকি হয়। এই চোকরা তোর এখানে কি?দারোয়ান দারোয়ান। জ্বী ম্যাম। কোথায় পড়ে থাক তোমরা,কি করে বাচ্চা লোক হাসপাতালের ভিতরে আসলো,যাও দেখ কোথায়। একটু আগে তাড়িয়ে ছিলাম ম্যাম,কি করে যে আসলো। ইস,আর এক মিনিট পরে যদি সেবিকাটা আসতো তাহলে স্বাধীনকে ভাল করে দেখতে পারতাম।জমিনের উপর সমস্ত প্রসন্নতা যেন স্বাধীনের এখন,পলকা ও ঢিমা বিছানায় আজ স্বাধীন সত্যই স্বাধীন।কিছু দিন তোকে আমি ঠিকমত দুধ পান করতেও দিতে পারি নাই,যখন বড় হবে তখন বুঝবি মা ছাড়া রাস্তায় বেড়ে উঠা কতটা দরারোহ মা না ফেলে যে তুই আমার মত হয়ে যাবে। আরে এইত ফাদার,ফাদার। ও টেস্টার তুমি এখানে। ফাদার স্বাধীনকে রিতা ম্যাড়ামের কাছে দিয়েছি সে এখন এই হাসপাতালে আছে,রিতা ম্যাম বলেছে স্বাধীনকে তার মার কাছে ফেরত দিবে। আচ্ছা,তাহলে তো খুূব খুশির খবর। (জগত জয়ের খুশি) হাঃ হাঃ হাঃ মনে হয় এতক্ষনে স্বাধীনের মা হাসপাতাল এসেও গিয়েছে। সেই সকাল হতে আমি এখানে।আরে ফাদার আমাদের শহরের ট্রাফিক অবস্থা এমন যে চার-পাঁচ ঘন্টা রাস্তায় থাকতে হয় তাই হয়ত স্বাধীনের মা আসতে দেরি হচ্ছে।মা স্বাধীনকে কোলে তুলে আদর করে বুকে নিয়ে চলে যাবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতেছি। আমি যাই ফাদার স্বাধীনের মা আবার চলে আসবে। আজ সারা দিন কিছু আর খাওয়া হল না,থাক একবার রাতেই খাব তার চেয়ে ভাল স্বাধীনের জন্য দুধ কিনে নিলে ।জলমুক আর রবি মামার লুকোচুরির ফাঁকে ফাঁকে দারোয়ান চাচাকে ঘটী ঘটী দেখতে হচ্ছে কিন্তু সে একপাও নড়তেছে না।অনশির আলোতে আমি দুনিয়ার প্রথম এবং শেষ খুজি যেখানে আমাদেরকে জন্ম দিতে বাপ সুখ নিয়ে চলে যাবে না মাকে জগতময় করে। পাশে ছোট্ট ছিমছাম মন্দির গিয়ে একটু বসা ভাল হবে কিন্তু দরজায় ধাক্কা লাগতেই দরজাটা খোলে যায়,ভিতরে শ্রী রামের মুর্তি আমি তার সামনে হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে যাই।নিরাহার শরীর অমত্ত পাটীতে পড়তেই ঘুম এসে গেল নয়নে,এক লিটার দুধের প্যাকেট আমার মাথার পাশেই রাখা।কখন যে হিন্দু সেবিকা খালা এসে সন্ধ্যা বাতি জ্বালালো বেদনই হল না,খালা শঙ্গতে ফুঁ দিতেই আমার ঘুম ভাঙ্গে।চারিদিকে মসজিদ হতে ভেসে আসে মাগরিবের আজান"আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর"আমি দ্রুত উঠেই দৌড় দিই হাসপাতালের দিকে।(চলবে)

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।