মধুশ্রী
- বিচিত্র বিশ্বাস নীল - আমার গল্পে তুমি ২৬-০৪-২০২৪

আজ রাতভর চোঁখের পাতা এক
করতে পারিনি। বার বার সুপ্রিয়ার মুখ টা চোঁখে
ভাসছে। আজ এতটা বছর
পর…………. । কি জানি এক টা
অশুভ সংকেত হৃদয়ে শব্দ করে ঘন্টা বাজিয়ে যাচ্ছে।
বাইরে মুষল ধারায় বৃষ্টি
হচ্ছে। জানালার কপাট টা ফাকা। দমকা হাওয়ার
সাথে বৃষ্টির ফোটা গুলো ভিতরে এসে মেঝে টা
ভিজিয়ে দিচ্ছে।
নড়তে ইচ্ছে করছেনা।
ভিজুক। আজ সব ভিজে যাক।
প্রকৃতি আজ বৃষ্টির
জলে আমার সব কলংক ধুয়ে মুছে দিক।
ভিজিয়ে সিক্ত করে দিক আমার সবটুকু
যন্ত্রনা।
সেই ১৮ টি বছর যে
নরক যন্ত্রনা পুষে রেখেছি বন্দি খাচায়, তার দুয়ার
আজ কেও খুলে দিক। উড়ে
যাক সব অনুশোচনা।
ধুয়ে যাক সব পাপ………….!!!! আজ ১৮
টি বছর পর, সুপ্রিয়া কেন ফিরে এলো?
সেই পুরোনো ঝড় টা বুঝি
আবার ফিরে এলো আমার
সাঁজানো বাগান তচনচ করে দিতে।
চোঁখের পাতায় ক্লান্তি নামছে।
ঘুম পাড়ানির মা যে আজ কোথায় চলে গেলো!!
আহ!!! আজ বড় ক্লান্ত লাগছে আমার।
`মধুশ্রী` আজও সেই ছোট্ট
মেয়েটির মত তার মায়ের পাশে কাত হয়ে জড়োসড়ো ঘুমোচ্ছে।
আলসেমীর কাটিয়ে উঠে দাড়ালাম।
এক কাপ লেবু
চা হলে ভাল হয়। ক্লান্তি
কিচ্ছুটা দুর হবে।
রান্না ঘরে বাতি জ্বালাতেই,
জলজলে চোঁখে কালো
বিড়াল টা দৌড়ে পালালো। বুক টা কেমন
ছ্যাত করে উঠল।
আজ এমন হচ্ছে কেন?
সব কেমন অশুভ ঠেকছে আজ!
কিন্তু কেনো?
তাহলে কি আমার জন্য ভয়ংকর কিচ্ছু
অপেক্ষা করছে!! নাহ! আর
ভাবতে পারছিনা। মাথা
টা এবার সত্যিই চিন চিন
করে উঠছে।
চা টা হলে ভাল হয়।
কেটলী টা চুলায় চড়ালাম। নিজ হাতে চা
বানিয়ে মাঝ রাতে
খাওয়ার সাধই অন্য রকম।
চা টা ছেকে, কাপে করে নিয়ে
আবারাও সেই
আগের ইজি চেয়ার টায় হেলান দিয়ে বসলাম। চা
এর চুমুক এর সাথে সাথেই
ক্লান্তি অনেক টা কমে গেল।
আর সেই সাথে যেন স্মৃতি গুলো স্পষ্ট থেকে
স্পষ্টতর হয়ে উঠছে!
ক্লান্তিবোধ কি তাহলে মানুষের চিন্তা চেতনা
কে গতিহীন করে দেয়?
কে জানে, হয়তো তাই হবে!
সুপ্রিয়া...!!!
আজ কেন এত তাড়া করছে আমায়?
এতটা দিন পর,
আজ কেন আমায় খুঁজে পেতে হল তোমার?
আজ কি ভেবে
তার মন এত উতলা হল?
তাহলে কি সেই পুরোনো হিসেব নিকেশ কষতে তোমার এই আচমকা ফিরে আসা?
না না না….!!!!
এসব কি ভাবছি আমি!!!
সুপ্রিয়া তো কথা দিয়েছিলো যে কখন ফিরে
ডাকবেনা আমায়।
আমার তাতো এখনো স্পষ্ট মনে আছে।
সেই মাঘের
কুয়াশায় ডাকা ভোরে,
যখন আমি সুপ্রিয়ার ঘরে গিয়েছিলাম।
কিচ্ছুটা ভয়, কিচ্ছু টা লজ্জায় কম্পিত
ওষ্ঠে বলেছিলাম-
”সুপ্রিয়া, তুমি চলে গেলে আমি কি নিয়ে থাকব? ”
দুহাত বাড়িয়ে আমার মুখাটি চেপে ধরে সেদিন অসম্ভব
কেদেছিলে তুমি।
বলেছিলে-
”প্রিয়, তুমি এমন করলে কি আমি যেতে পারি বলো?”
“জানিনা, শুধু তোমায় অনেকখানি ভালবাসি। এটুকুই জানি “!
আমি আমায় বুকে জড়িয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরে সেইদিন প্রচন্ড
কেঁদেও ছিলাম আমি।
বলেছিলাম-
”যদি আর কখনো না ফিরো!
যদি আর তোমায় কখনো ছুঁতে না পারি?
আমি তবে কিন্তু মরেই যাবো মনে হয় সুপ্রিয়া।
যাওয়ার আগে কিছু তো রেখে যাও।
কিছু একটা। যেনো আজীবন আমি
একি সত্তায় গাথা হয়ে
থাকি তোমারই সত্তায়...!!!"
তখন সুপ্রিয়া তুমি বলেছিলে--
”তুমি সত্যিই আমার একটা পাগল,
তোমায় রেখে পালাবো কোথায় বলো?"
”নাহ!! আমি শুনবনা। এভাবে
যেতে দিবনা ”
তুমি পরম স্নেহে
আবেগে আমার বুকে মাথা রেখে আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলে।
তারপর কি হল তা সত্যিই জানিনা।
আমি হাড়িয়ে
গিয়েছিলাম এক অজানা স্রোতে।
পালবিহীন নৌকা ভাসিয়েছিলাম
অজানার পথে। শুধু আমি আর সুপ্রিয়া।
আমরা দুজনে মিশে
একাকার হয়ে গিয়েছিলাম সেই শীতের
ভোরে। কুয়াশার প্রতিটা বিন্দুর মতন।
সেদিন ভালবাসায় সুপ্রিয়া আমায় সিক্ত করে
দিয়েছিল সেই ভোরে।
আমি চেয়েছিলাম।
আমি শুধুই সুপ্রিয়ার একটা অস্তিত্ত
চেয়েছিলাম……..!!!!
ঠিক তার পরদিন সুপ্রিয়া লেখাপড়ার জন্য চলে গেলো কলকাতায় আর কখনোই ফিরে
আসেনি আমার কাছে,
আমার টানে।
কত দিন গেল, কত রাত গেল, সুপ্রিয়া আর এলনা।
আমি সুপ্রিয়ার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে,
বাসা বাঁধলাম অন্য কারো
অস্তিত্বে শিখ কেটে।
অনেকটা বয়স পার হওয়ার পর
মা বাবা জোড় করেই আমায় বিয়ে করিয়ে দিলো।
কত দিনই বা তোমার অপেক্ষায় থাকবো?
সবাই তো আর তা জানে না যে-
হৃদয়ে আমার ঠিক কি চলছে।
`মধুশ্রী`র বাবার ঘরে ঢুকিয়ে দিল
আমায় মুখোশ পরিয়ে
তড়িঘড়ি করে।
আর ঐ মানুষ টা টেরই পেলনা যে
আজ যার বুকে মাথা রেখে পরম যত্নে ঘুমোচ্ছে,
সে তার রক্তকনিকা থেকে সৃষ্টি নয়।
সে অন্য কারো অনু পরমানু দ্বারা সৃষ্টি।
হঠাৎই
কারো পায়ের আওয়াজ
পেতেই আচমকা চমকে পিছন ফিরি।
`মধুশ্রী` চা এর কাপ হাতে দাড়িয়ে আছে।
ভোরের প্রথম চা আমার
মেয়ের হাতে!
আহ!!!
কি যে সুখের..!!
স্নিগ্ধ পবিত্র মুখখানি ঠিক সুপ্রিয়ার মত।
আমি
অপলক তাকিয়ে থাকি!
বুকটা দুমড়ে মুচরে কেঁদে উঠে।
সেই ১৮ বছর ধরে,
গোপনে বেড়ে উঠা আমার এক
টুকরো সুখ আমার মেয়ে `মধুশ্রী`।
আবার যেনো হঠাৎই
বিলীন না হয়ে যায়..!!!
এই নিয়ে ভয় বেড়ে যায়। অনেক বেশি ভয় তাড়া করে চলছে আমায় নিয়মিত।।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

Faiyaj
২০-০৬-২০১৭ ১১:১৩ মিঃ

গল্প না কবিতা কবি ভাই