না
- আল আমীন ১৯-০৪-২০২৪

“প্রেম করবে অপরিচিতা?—ভালোবাসবে আমায়?
দাবানল হয়ে আছি আমি—চৈত্রের নির্বাসিত হাওয়ায়; তুমি
—একটু জৈষ্ঠের ঠোঁট হবে কি জীবনে আমার?

কচি-কলার-পাতা রঙয়ের শাড়ীতে বেশ মানিয়েছে তোমায় ।
আমার রং-চটা খদ্দরের পাঞ্জাবীতে তোমার পাশে; অস্বস্তি হচ্ছে বুঝি”?

...এতগুলো কথা জানি না কি একাই বললাম!
এক পায়ে দাঁড়ানো বকের মত,
হয়তো উদাসী ভাবলে আমায়;
আমি জানালায় চোখ রেখে বসেছি ।

“চুল খুলে দিয়ে পথচলা নারীর” চুল দেখে—পেঁচানো সাপ,
আর ওই শরীর পুরোটা— কুন্ডুলী পাকানো আগুন
মনে হয় আমার কাছে; জাহান্নামের কালো আগুনের মত!
যে দেহ পোড়েনি, তা'তো সুন্দর-ই থাকবে,
একটু বালুকণা জমে না যে রোমকূপের গোড়ায়;
অথচ সবই মৃন্ময় হয়ে যায় দেখে,
প্রেম করতে বিশ্বাস হয়নি কোনোদিন ।

হঠাৎ, তুমি "না" করে উঠলে!
শুনে ফেললে কি আমার স্বগতোক্তি?
দক্ষিণের আকাশে জমানো ভারি মেঘের মত,
তোমার চোখ দু'টোকে আয়না করে বললে:
"না,—এইসব সন্যাসী-টন্যাসী আর ভাললাগে না"!

আমি সুধু "না"-টুকুই শুনেছি!...
তুমিও “না” করে দিলে?
জীবনে এই "না"-শব্দটার প্রেমেই পড়েছি বেশিবার;
এই সকল "না'-এর" আশ্রয়েই থাকে আবেদনময়ী সব "হ্যাঁ"!
ঠিক এই সবগুলো "হ্যাঁ'-কেই" ভীষন আহ্লাদে প্রশ্রয় দেয় প্রত্যেকটি "না"!

বয়েস-তেরোতে প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম আমি ।
ভাবী-সম্পর্কীয় কেউ-একজন—জেনে যায় সে কথা;
ভাবী তার হাতের তালু আমার মুখের কাছে তুলে এনে ধরেছিল;
ওখানে চুমু খাইয়ে স্বীকার করাতে চেয়েছিল মেয়েটির নাম;
“না” বলেছিলাম আমি, অথচ অঙ্কের মাষ্টের
যখন বারবার চেষ্টায়ও আমার মাথায় খিলাতে পারেননি—
জিওমেট্রির বিশেষ নির্বচন । তিনি ক্ষেপে উঠলেন:
“মাথার মধ্যে কোন দেবী ঢুকেছে রে”?...
টেবিলের তলে চোখ রেখে নীচু মাথায় বলে ফেলছিলাম:
“মু—ন্—নি”!
অস্ফুট জড়-স্বর; উনি শুনলেন: “মনে নেই...”!
রাতের অন্ধকারে কেউ আমাকে পূর্ণবয়স্ক ভেবেছিল;
আমি বাতি জ্বালাতে চাইলে সে-ও বলেছিল: “না” ।
—তার নাকি অন্ধকার ভালো লাগতো!
জানতাম না: ওই "না'-এর" পিঠে তার শরীরবৃত্তীয় স্বার্থ ছিল ।
তারপরও প্রথম প্রেমের দিন, যে আমারে "না" বলেছিল;
পেছন ঘুরেই দেখি সে হাত ধরে হেসেই পাগল!
দরজা বন্ধ করতে বারণ করে,
নিজেই শেষে দম আটকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখেছি কত;
প্রথমবারে কেঁপে উঠে সরে গিয়ে,—পরপরই লুটিয়ে পড়ার অভ্যাস;—
জানি এখন… সব কিছুতেই “না’-এর” এমন দৌরাত্মি!
এখন হাত ধরতে না-করেই, কখনো দেখি কারো বুকেই পড়ে আছে;
অত সব হিসেব করে কী লাভ,—তাই না?

অপরিচিতা, অহেতুক তোমাকেই বলছি:
আমার ভাবের জগতে তোমাদের বস্তুনিষ্ঠ হিসাব—
হয়তো মিলবে না; কিন্ত একাত্মতা তো বোঝো!
একান্তে যদি চাও,—একাত্ম হয়ে যেতে হবে!
যে চুল দশজনে দ্যাখে, যে আগুনে পোড়ে সবাই;
তা’তে আমাকে রাখলে কই?—
গোপন হয়ে যাও! —একান্তে বোঝাপড়া হোক!
পরিশুদ্ধ রাতে তোমাকে বুঝে নিক কেউ,
সে হয়তো আমি, কিংবা যে-ই-হোক —সে রাতের দুয়ারী!
তখন তুমি “না” বোলো কী আপোষ করো;
দেখতে যাবে না কেউ; কারণ,—তখন তোমার মধূ-মাস,
সেই “না’-এর” কন্ঠে থাকবে পবিত্র সুর!
আর আমি প্রেম করবো বিয়ের ঘরে…
ছেনালীর মন্ত্রে গা জ্বলে যায় রে! একটু গলে পড়েই কথা বলো যখন;
বড্ড বন্য আর কামুক লাগে হয়তো, যে কোনো নারীরই সে ক্ষমতা আছে…
ঘরোয়া কিছু অতিবাস্তব-স্বর—সেটা শীৎকার হলেও
আর কেউ কেন জানবে?
প্রেম করবে তুমি? “না” বোলো না, নীরবই থাকো!


০৭.০৪.১৬
ঢাকা ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।