সারপ্রাইজ
- কাফাশ মুনহামাননা - শেষবেলা ২০-০৪-২০২৪

প্রিয়তমাকে না জানিয়ে
তার সাথে দেখা করতে চলেছি আজ।
প্রিয় মুহুর্তটি আরো প্রিয় করে তুলতে
সারপ্রাইজের বাহারি চমকে।
আজ তার জন্মদিন। আমার প্রিয় মুহুর্ত।

অনেক স্টাইলিশ সাজে বের হয়েছি আমি।
চোখে সানগ্লাস, চুল স্পাইক করা।
এমরিকান ঈগল'র চেকের শার্ট আর
সেলিও'র নীলাভ ন্যারো ডেনিম পরনে।
পায়ে এডিডাস'র শাদা কনভার্স সু।
বন্ধু-বান্ধবের কাছে খুব বাহবা পেয়ে
মনে সাহসের তুফান বইছে।
অজানা শিহরন তো রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছেই।

যেতে যেতে কতো কথা সাজিয়েছি।
কথার মালায় কতো কৌতুক গেঁথেছি
তাকে একটু হাসাবো বলে।
মেয়েরা হাস্যরস পছন্দ করে কি না তাই!
পৃথিবীটা হঠাৎ রোমান্টিক মনে হচ্ছিলো আমার কাছে।
যেদিকে তাকাই শুধু খুশি আর খুশি!
দুঃখ বলতে আমার ডিকশনারিতে
সেই সময় কোন শব্দ চোখে পড়ছিলো না।
ভালোবাসা এতো দ্রুত জীবনকে বদলে দেবে
কখনো কল্পনাও করি নি।
অথচ দুদিন আগেও
আমি ছিলাম আনকালচার্ড।
মানুষের সাথে মিশতে পারতাম না।
কথা বলতে জানতাম না।
চরম এক অস্বস্তি কাজ করতো ভেতরে।
গুটিয়ে চলার স্বভাবটা তো
পৈত্রিক সূত্রেই হাসিল করেছি।
গুন বলতে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে
থাকার অভ্যেসটাই ছিলো।
সামাজিকতা খুব বিষের মতো লাগতো।
খাঁটি বাংলায় গেঁয়ো বলতে যা বুঝায় -
আমি ছিলাম তার কপিকাট-ডুপ্লিকেট।

প্রিয়তমার বাড়ির খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।
মোড়টা পার হয়ে বাঁক নিলেই মনজিলে মকসুদ।
হৃদয়ের হার্টবিট ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
মৃদু মৃদু ঘাম উঁকি দিচ্ছে চোখ-মুখ-কপালে।
তবু অন্তরের কোন এক প্রান্তে লুকিয়ে থাকা
ভালোবাসা সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে আমায়।
সেই অদ্ভুত ভরসায়
মোড় পার হতেই দেখলাম নিজ চোখে -
এক চলন্ত রিকশায় বসে
প্রিয়তমার হাত ধরে আছে অন্য এক যুবক!
উচ্ছল হাসিতে মত্ত দুজন সমান তালে।
ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে রইলাম আমি
সেই সহজ সরল গেঁয়ো বৈশিষ্ট্যে।
সাজানো কথাগুলো হারিয়ে গেলো নিমিষেই।
কৌতুকগুলো ভৌতিক দুঃস্বপ্নে
রূপান্তরিত হলো যন্ত্রণাকাতর অব্যক্ত ব্যথায়।
চোখ বেয়ে অশ্রুধারা ঝরতে লাগলো অঝোরে।
নিকট কোনো এক বাসা থেকে বেজে উঠলো গান
"প্রেমের মরা জলে ডুবে না"।
সারপ্রাইজ দিতে এসে
এর চেয়ে বড় সারপ্রাইজ আর কি হতে পারে?

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।