নিখিলেষ
- এস. মেহেদী হাসান - নিখিল ২০-০৪-২০২৪

আমি বহুবার তোমাদের কথা বলেছি,
তাহাদের কথা বলেছি...সকলের কথা বলেছি।
শুধু বলিনি আমার কথা... আমার বন্ধু নিখিলের কথা!
আজ নিখিলের কথা বলবো, বলবো নিখিলের স্বপ্নের কথা...
নিখিল আমার বাল্যবন্ধু নয়, আমার পাড়ার ছেলেও নয়...
ও আমার কলেজ জীবনের বন্ধু, না ও কলেজ জীবনের বন্ধু নয়-
নিখিল আমার জন্মজন্মান্তরের বন্ধু।
আমি সবে তখন কলেজের সবুজ বিস্তৃত মাঠের ঘাসের ডগায় -
প্রথম স্পর্শ করেছি,
জগতের রঙ মাখা অজস্র স্বপ্ন আমার দুচোখ ভরে উপচে পড়ছে।
মনের অজান্তেই পাখা মেলে উড়ছে - হরেক রুপের প্রেম।
ঠিক তখন-ই কোথা থেকে উড়ে এলো আমার নিখিল,
নিমেষেই দখল করলো আমার সমস্ত আত্মা।
নিখিল ঋষির ছেলে...শহরের ঋষি পাড়ার ছোট্ট ঝুপড়িতে বাপ ছেলের বসবাস।
বাপ পরের দোকানে মাসিক বেতনের কর্মচারী... আর নিখিলের বাদামের ছোট্ট ঝুড়ি!
এ দুয়ের বিপরীতে দুটি ক্ষুধার্ত উদর!
বাপ-ছেলের সারাদিনের পরিশ্রমে দুবেলা খাবার পয়সা জুটে যায় ঠিক,
তবে সঞ্চয়ের কথা শুনিনি কখনো।
নিখিলের সাথে আমার প্রথম পরিচয় - কলেজ হোস্টেলের বারান্দায়,
দুই টাকার বাদাম কিনেছিলাম সেদিন।
এরপর আমি নিত্যদিনের খরিদ্দার, ঠিক ওর বাদামের কিনা জানিনা...
তবে ওর চোখের মায়া আমাকে বড্ড বেশী টানতো।
আমি সে মায়া দেখিনি কোনো ষোড়শী রুপসী ললনার চোখে,
দেখিনি প্রবাসী স্বামীর অপেক্ষায় থাকা সদ্য বিবাহিত কন্যার চোখে।
সেই মায়া আরও আপন, আরও কাছের হতে হতে নিখিল আমার বন্ধু হলো।
আমি যে শুধু ওর চোখের মায়ায় পড়েছিলাম তা নয়,
বরং আমি ওর চেতনার প্রেমে পড়েছিলাম, ওর দেশপ্রেমের প্রেমে পড়েছিলাম,
আর নিখিল ছিলো মানবতার প্রেমিক,মানুষের প্রেমিক, মানুষকে ভালোবাসার সত্যিকারের মানুষ।
সে মানুষ শুধু মানুষই ছিলো, হিন্দু ছিলো না,মুসলিম ছিলো না-
ছিলো না জাত বর্ণের তফাৎ!
নিখিল বলতো - মানুষকে ভালবাসো..মানুষের জন্যে বাঁচো.
হোক সে খারাপ মানুষ তবুও মানুষই তো আছে?
মানুষকে ভালো না বাসলে দেশকে ভালবাসবে কিভাবে?
এই মানুষই তো দেশ,মানুষই তো পৃথিবী, মানুষই তো সব।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম ওর মুখের দিকে ,দেখতাম-
শেরে বাংলা, ভাসানী,সোহরাওয়ার্দীর অবিকল প্রতিরূপ।
দেখতাম-বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নে দেখা সোনার ছেলে -আমার লিখিল।
আমি বহুবার দেখেছি- রাজপথে মিছিলের সামনে নিখিল গর্জে উঠছে,
চিৎকার করে বলছে- মানবতার মুক্তি চাই,গণতন্ত্রের মুক্তি চাই।
নিখিল মুক্তি নিয়ে ঘরেও ফিরেছে কয়েকবার।
সেদিনও নিখিল মুক্তি চাইতে গিয়েছিলো,
মিছিলের অগ্রভাগে আঙুল উচিয়ে বলেছিলো-
স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।
কিন্তু ফিরে আসেনি আর...নিখিল ফিরে আসেনি এখনো!
তবে নিখিল চলে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলো -
জনতার মুক্তি, মানুষের মুক্তি।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।