আমি বিদ্রোহী
- মকিজুর রহমান - ঝরা ফুলের কাব্য ২৯-০৩-২০২৪

আমি বিদ্রোহী
-------------------------
তীক্ষ্ণ কাঁটা-
বাহিরে গভীর অন্ধকার!
অতিরঞ্জিত কাকুতির কিংবা অগ্রগামী আপন গোলাপ
পঞ্চসতীর পূণ্য শ্লোক।
প্রলয়ের হুংকার-রণনে দিশেহারা
সন্ধিলগ্ন শিশিরসন্ধ্যায় জমিয়েছিলাম রক্তবরিষণ
অজানা মেরুর শূন্যের অন্বেষে অবসান,
যৌবনের শোভাযাত্রায় ভেসে যাব একা।
আকাশের আকর্ষণে পৃথিবীপতির সুধা এনে
অমৃত সঞ্চয়নে গম্ভীর সৌন্দর্যে চোখ মেলে তাকাবে
পুনরায় সুন্দর হৃদয় গুঞ্জনে
আমি ধরিত্রী শঙ্কিত শিখা।
আমি জীবন নাবিক
আমি আলোকমঞ্চ,লোকশিক্ষা,রজনীগন্ধা
নিরেপক্ষ মানুষের লক্ষ্যহীন বসুধা
আমি আরতিদীপ,আমি মৃত্যুঞ্জয়
আমি দৃষ্টিহারা,আমি নিরপেক্ষ নক্ষত্র
আমি মরীচিকা,আমি নির্মম মহাকাশ
আমি মুক্ত বিহঙ্গ,আমি নীল আকাশে উড়ে বেড়াই,আমার নেই কোন সীমানা।
আমি সাধনা সিদ্ধির শান্তির তৃপ্তি
আমি যথারীতি ভয়ঙ্কর পক্ষপাতি
আমি নব জলধারায় তীব্র স্রোত
আমি কল্পনার কবি,আমি ধূলার গুঞ্জন
আমি প্রেমে নির্বিকার সে দুঃখে
আমি বিদ্রোহী,আমি বকুলবনে মলয় সমাধিমগ্ন
দীপ্ত প্রাণ-
মুক্তির শিবিরের কাব্যকলার সার!
আমি মধুমালতীর কুঞ্জ,আমি প্রেতচ্ছায়া
আমি জীবন পীড়িত উজ্জীবনের প্রেরণা
আমি পাপস্পর্শে নষ্ট চন্দ্রালোক
আমি হৃদয়ের লেশ দেবভাষা,আমি বাঁজাই আগ্নিবীণা!
আমি সর্বনাশ,আমি পরমাণু,আমি রসায়ণ
আমি মরুদ্বীপের উড্ডীন পদধূলি
গোধূলিবেলায় নরকে যাই চলি
বিভীষণদের শান্তির সহযোগী'
আমি আঁধার আলিঙ্গনে অনুপম পরিচিতি
আমি বিধাতার ভয়ঙ্কর দিনের ধ্রুপদ শুনেছি;
কালবৈশাখীতে টুটে পুনরায় করি বিচরণ।
আমি পুরাণ কাহিনী,আমি বেদনার সাড়া
আমি মৃত্যুদণ্ডে নতশির যীশুর প্রাণ
আমি সৃষ্টির চাবি,আমি বিধাতার আশীর্বাদ
চির শিশু-
আমি মানুষ,খোদার প্রতিনিধি।
আমি চির কুমার,নিশাক্রান্ত বকুল
আমি জনপ্রতিনিধি নিরেপক্ষ ভ্যবিষাত
আমি প্রতিশ্রুতি, আমি মিথ্যার জঞ্জাল
আমি কাউকে করিনা ভয়,একমাত্র উপসনা করি অসীম সৃষ্টার
আমি কালবৈশাখী নৃত্য তান্ডাব,আমি চারিদিকে করি তন্ন তন্ন
আমি অনাবৃষ্টি, চারিদিক করি মেরুময়
আমি আধুনিক যুগের ডিজিটাল সন্ত্রাস
আমি তাড়িৎ চুম্বক,আমি ধ্বংসের ফাঁদ
আমি ইন্টারনেটের বিশ্বামিত্র নিদারুণ চমৎকার
আমি কম্পিউটার উইন্ডোজ, আমি ভাইরাস
আমি সৃষ্টির মাঝে ধ্বংস,আমি মাদকাসক্ত
আমি শিক্ষা বাণিজ্যের মূল হোতার যমরাজ
আমি পথ শিশুর ছিন্ন মলিন বস্তু, অনাহারী মানুষের কান্না,
আমি শিক্ষিত নামের নর্দমার কীট,
আমি স্বেচ্ছাচারীর ভয়ের কারণ
আমি ভাড়াটে খুনি,আমি জ্যান্ত পোড়া লাশ
আমি দেশ প্রেমিক,আমি দেশ মাতার প্রাণ
আমি তরুন,আমি যুবক
আমি অসীম সিন্ধুর বুকে ভাঙা তরী,
আমি ঝড় জলোচ্ছ্বাস
আমি ধর্ষক,কাক শকুনের মত উম্মাদ
আমি মানুষত্ব হীন হন্যে
আমি সমাজপন্থী ভয়ঙ্কর।
আমি ছেলে হারা মায়ের অপেক্ষমান বুকের ভিতর ক্রন্দন
আমি আজীবন ও সর্বজনীন নারীর চোখের বৃষ্টিপাত
আমি বিদ্রুপের হাসাহাসি।
আমি সবুজের চোখ
আমি কচুপাতার জল,কিশোরীর মালা গাঁথবার স্বাদ
আমি আলোকিত মঞ্চ , যুবতীর সুবর্ণরেখার সাত শতাব্দীর অন্ধকার
মৃত গোলাপের স্মৃতি উশূঙ্খল।
আমি মানুষের ত্রিসীমানা আলোর লোডশেডিং
আমি সাপের ফণার ধারালো তলোয়ার,
আমি বধূর কলসিতে কাজলদিঘী জল
পায়ের নূপুর হৃদয়ের হীরণ-শিহরণ
আমি বিরহী গগনে উন্মুখর সুন্দরের গান
আমি শরতের নীলের মতন উজ্জ্বল শক্তিমান
আমি মুক্তির আনন্দ মাতেয়ারা সেতারের গান
আমি ফাঁসীর দড়িতে বুক পাতা আলোকিত প্রাণ
আমি দুপুরের খাঁ খাঁ রোদে পাতাবাহার।
আমি নকশি কাঁথার ছুঁচের ব্যথা
আমি শীতের পোশাকহীন বালিকার নগ্নশরীর
আমি কাঁথা বুনছি মৃত্যুর কাফন
আমি দেখেছি আমার হাসিতে রক্ত ঝরে ঠিক অবিকল
আমার বিষাদগুলি হবো না অবসান
আমি দগ্ধ সিগারেট,আমি আদিম চীৎকার
আমি আবনত শোকে অশ্রুধ্বনি
আমি লাল গোধূলির ফুল
জয়জয়ন্তীর সপ্তডিঙা কার্পেটে সাজানো
ঈশ্বরের শান্তির ঘর
মেঘের গভীরে আকাশের সোনালী চূড়ায়
অনায়াসে সাতপাকে উড়ে যাই
আমি মানুষ-জন্মের অতীতের রাজশ্রীর
এনভেলাপ
আমি পৃথিবীর ভিতর আর এক পৃথিবীর করি সন্ধান
জানি সেখানে আছে বেস্তেহের বাগান
আমি অপরাধের সমস্ত ফুল বৃন্ত কুঁড়ি শিকড় উপড়ে ফেলি
আমি কাঙালী হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দেই নক্ষত্রের আলো
দুঃখ নিংড়ে পাণ করি মদ
একুশ শতাব্দীর এই যুগে
ধ্বংস, হত্যা, মৃত্যু নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
আমি হিমালয়,আমি প্রতিবাদ
আমি রক্তদানের পুণ্য
আমি সীমান্তে আমি প্রহরীর যুদ্ধজয়ের উল্লাস
আমি নতুনতর বিশ্ব,রুদ্ধ বন্দীকক্ষ,বিপদ ধ্বংসেই মুক্তি
চারিদিকে বিদ্রোহ বিপ্লব ধর্মঘটের ইতিহাস
স্বপ্নের বীজ বপন করি বুকের ভিতর
আমি বাউলের একতার
আমি পল্লব শাখায় পুস্প মুঞ্জরীর অঙ্কুরিত বীজ
বৃক্ষ সমাজে গোপনে মর্মরধ্বনি নিমগ্ন মিছিল
আমি ক্ষিপ্ত এক বিদ্রোহী
আমি ব্যর্থ নোঙর,মৃত্যুকবলিত দ্বার
অগ্নি-ঝরা নিদ্রাহীন মহামারী যুদ্ধ, সীমান্তের প্রলয় বাতাস স্বপ্নজাল
আমি মুত্যুকাঁপানো ঝড় জনতার প্রাণে
আমি গর্জন,আমি দুর্জয়,আমি রক্তের ফুল
আমি আন্দোলনের প্রতিজ্ঞা,মুক্তির বদলে ছিনিয়ে আনি মৃত্যু
আমি শ্রমিক,আমি সৈন্যের সেনাপতি
আমি দুর্বলের বুকে গুলি চালিয়ে ছিনিয়ে আনি উল্লাসের জয়।
আমি কলম,আমি যুদ্ধ
আমি বিদ্রোহ,বন্যা, দুর্ভিক্ষ ঝড়,আমি বারুদ;
আমি শিকড়ে শিকড়ে বেড়ে ওঠা দুরন্ত শিশুর উচ্ছাছ
অহংকারী আমি শেষ-সংশয়
জনতার মুখে আমি শহীদ ও বীর
আমি বজ্রের স্মরণে প্রতিজ্ঞা আত্মবিসর্জন
আমি নির্বোধ,আমি নির্বোধ!!
আমি নিতান্ত দুরাশা আমার,
মনে হয় ঝোড়ো হাওয়ায় চিহ্ন রইবেনা আমার
আমি দিগ্বিজয়ী দুঃশাসন,ক্লান্তির জড়তা
নিষ্ঠুর কামান
বিপ্লবের ডাক আমি চাই মনে মনে সর্বক্ষণ।
আমি আভিশাপময়
আমি মহামরণের নিষ্ঠুর জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড
স্বাধীন স্বদেশভূমি
আজকের বিক্ষোভ রক্তে রক্তে লাল প্রান্তর
আমি জনতার প্রবল রক্তিম ফুল
“বিশ্ববিজয়ী”বিস্ফোরণের বিদ্রূপের হাসি
আমার অসংযত জীবনধারণ
উল্কার স্রোতে তৃষ্ণার্ত কঙ্কাল বিষাক্ত প্রতিবাদে আদিম প্রকাশ।
বিদ্রোহী দিগন্তে কাঁপে মিটিমিটি
আমি মহামানব আঘাতে আঘাতে ছিন্নভিন্ন পাপের দুর্গ গম্বুজ ও প্রাসাদে মিনারে নীরব শ্মশান।
আমি বলিষ্ঠ বাহুতে ধ্বংসস্রোত ধর্ষিতার কাতর চিৎকার
স্বপ্নের চোখে ছিন্নভিন্ন ককটেল
আমি উদাসীন পাপড়ির নিরব ঘুম
ভূগোল বিষুবরেখার আবহাওয়া সংকেত
আমি রাখালিয়া বাঁশিতে পুনর্বার জেগে উঠা সুর!
সত্যের কাছে মাথা নত করে আমি ছুটিয়া চলি অজানা গন্তব্যে।
আমি উপড়ে ফেলবো শিকড় সহ সমস্ত দুর্ণীতি,অন্যায়, লোভ,পাপ,হিংসা
আমি বিদ্রোহ বীর সৈনিকের অস্ত্রের হাতল
বিশ্ব জুড়ে কাঁপে থর থর।
আমি বিদ্রোহী বীর কবি নজরুলের সূত্রধর।
-----------------------------------------------------------------------

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কে উৎসর্গ করিলাম।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।