অবাক স্বদেশ
- ফাহিম মাহমুদ আদি - পরশ পাথরের হুংকার ২০-০৪-২০২৪

#কবিতা
#অবাক_স্বদেশ
-------------------
অবাক স্বদেশ,
অবাক স্বদেশের মানুষগুলো,
আর কত নির্লজ্জ হলে হবে ক্লান্ত?
আর কত কাঁদিয়ে হবে ক্ষান্ত?
সেই ৫২ থেকে কেঁদে চলেছি, ৬৭, ৬৯, ৭১ এ কেঁদেছি,
ভিজিয়েছি মুখমন্ডল, বক্ষ তথা চরণ পাতা।
আজও কেঁদে যাচ্ছি একটানা ক্লান্তিহীন ভাবে দিবা-রাত্রি।

আমি শুনছি, স্পষ্ট শুনছি,
বিশ্বজিতের মা দরজায় বসে কাঁদছে আঁচলের আড়ালে।
আমি শুনছি, স্পষ্ট শুনছি,
বি.ডি.আর বাহিনীর স্বজনরা-
নিদ্রাহীন, ফেটে পড়েছে বিষাদময় ক্রন্দনে।
এখনো ভয়ে শিউরে উঠি রোজ মধ্য-নিশিতায়,
কবিদের আলোচনা সভায়.
ক্রিকেট মাঠে বিজয় শোভাযাত্রায়,
এই বুঝি ১৫ আগস্টের গ্রেনেড পড়ছে আমার গা’য় ।

অবাক স্বদেশ,
অবাক স্বদেশর মানুষগুলো,
অবাক তাদের রাজনীতি,
যার প্রধান হাতিয়ার শিক্ষার্থী,
ধরিয়ে দেয় হাতে জোর পূর্বক-
বোমা-গ্রেনেড আরো কত কি।
যেটি জাতি গড়ার কারখানা
অথচ সেটি এখন রাজনীতির বস্তিখানা।
হরতালের নামে বোমা, গ্রেনেড, বুলেটের আঘাতে,
মেতে উঠেছে অভিরাম প্রাণ বিনাসে।

আমি ঘৃণা করি সেই রাজনীতি,
যারা আল্লাহর দোহাই দিয়ে,
কোরআনের আইন এর দোহাই দিয়ে,
মুজিব-জিয়ার দোহাই দিয়ে,
নষ্ট করছে দেশের সম্পদ আর তাজা প্রাণ অবিচ্ছিন্ন গতিতে।
অবাক স্বদেশ,
অবাক স্বদেশের মানুষগুলো,
তারা আজ বদ্ধ সংকল্পে দূর্ণীতির বিরুদ্ধে,
আবার তারই খাচ্ছে লুটে-পুটে,
পেঁচানো জালের মধ্য ফাঁকে।

তারা আজ ভুলে গেছে ২১ শে ফেব্রুয়ারি,
ভুলে গেছে; ভাষা সৈনিক সালাম, জাব্বার’র অমর কাহিনী,
বরকত ও রফিকের মায়ের আহজারি।
তারা আজ ভুলে গেছে,
২৬ মার্চ থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর দীর্ঘ সময় -
অজস্র শহীদের রক্ত বিসর্জনের ঘটনাটি।
তারা আজ ব্যস্ত,মহা ব্যস্ত,
কবে আসছে ১৪-ই ফেব্রুয়ারী,
কবে হবে একটি ফুল বিনিময়ের অন্তরালে
অবুজ নারীর সাথে সিক্ত।

অবাক স্বদেশ,
অবাক স্বদেশর মানুষগুলো,
তারা আজ বদলে দিচ্ছে-
ইতিহাসের স্বর্ণ অক্ষরে লিখিত প্রেম কাহিনী
সৃষ্টি করছে প্রেম করার নিত্য-নতুন পদ্ধতি।
চরণচিহ্নহীন স্থান, কেবিনের অন্ধকারে
যৌন তৃপ্তি মেটাতে দস্তা-দস্তি।
পহেলা বৈশাখ কিংবা ঐতিহ্যবাহী দিনগুলিতে,
উদযাপনের বদলে ব্যস্ত যোগল ঠোঁটের চুম্বনে।

তাজ্জব তাদের চলন-বলন, তাজ্জব তাদের পোশাকাদি।
তারা আজ প্রতিযোগিতায় নেমেছে-
সর্বোচ্চ লজ্জাস্থান দৃষ্টিগোচর,
প্রতিযোগিতায় নেমেছে পর্দাহীন বিচলনে।
তারা ভুলে গেছে,
ইসলামী বিপ্লবী জননী তাওকুল আরমানের কথা,
ভুলে গেছে কাকে বলে নারীর সংজ্ঞা,
কিসে মেলে নারীর পূর্ণতা।

অবাক স্বদেশ,
অবাক স্বদেশের মানুষগুলো,
তারা আজ ঝাঁপিয়ে পড়েছে নর-পশু হয়ে,
মানুষ ছদ্ধবেশী ক্ষুদার্ত প্রাণী সেজে,
বলবান দুর্যোগ রূপে,
দেহজ পিপাসা নিবারণে ।

দেহজ পিপাসা দুর্যোগের কবলে আজ আমাদের
আট বছরের বোন কোচিং-এ,
আমাদের পঞ্চাশ বছরের বৃদ্ধ মা নিজ গৃহে,
এই দুর্যোগের কবলে-
রাস্তার হিতাহিত জ্ঞানহীন নারী,
পেটের দায়ে কর্মরত দাসী,
শিক্ষার্থী তথা আটষট্টি হাজার গাঁ।

আমার বোনেরা, আমার মায়েরা
আজ ভীত শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষা লাভে,
শংকিত কর্মস্থানে তথা হাসপাতালের বেডে,
ধর্ষণ নামক এই দুর্যোগের কারণে।
ঐ হানাদারগণ আবার সমাজে বিখ্যাত,
ঐ হানাদারগণ-ই দেশ প্রেমিক,
তাদরে হাতেই উঠে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব,
তাদের কি হবেনা অন্ত?

অবাক স্বদেশ,
অবাক স্বদেশের মানুষগুলো,
অবাক স্বদেশের শিক্ষার্থী।
যে হাতে থাকে কলেজের ফাইল,
সেই হাতে-ই সেবনরত
সর্বনাশা ইয়াবা, মদ, গাঁজা, পেন্সিডিল।

অবাক স্বদেশ,
অবাক স্বদেশের গণতন্ত্র,
গণতন্ত্র আজ তিরোধান,
মরিচিকায় মত্ত, বিভ্রান্ত, বিমূর্ষ
অভিশপ্ত, শুপ্ত, বন্ধী চারর্স্পশ|
ভুলছে বীরশ্রেষ্ট, বীর বিক্রম, বীর প্রতীকি,
তা কবলি রসাতলের যাত্রী।
রক্ত রঞ্জিত রাজপথ, আরাে রঞ্জিত করবে
গণতন্ত্র নিয়ছে শপথ ।

ঝরায় সকালে বিকালে,
সম্পদ মোদের শুধু আছে জল,
আজ ১৬ কোটি বাঙ্গালীর আঁখি ছল ছল,
ক্রোধ হারিয়ে বুকে হতাশার নুনাজল,
ভুলিয়েছে প্রতিবাদ ঐ বাতিলের ছল|
ভয়ঙ্কর স্ট্রীমরোলার চালিয়ে
ছিন্ন বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধ, জোয়ান, নিষ্পাপ শিশুর জননাঙ্গ,
ক্ষত-বিক্ষত, বীভৎস, ফেরেশতার অঙ্গ|
দেখ, ফিনকি বেয়ে পড়ছে ক্ষয়ে আমার বিশ্বাস,
আজ নেই গণতন্ত্র, সেই আশ্বাস|

অবাক স্বদেশ
অবাক স্বদেশের মানুষগুলি,
পথশিশুতে ভরে গেছে চট্টগ্রাম তথা সব বিভাগ,
খাবারের আশায় হন্যে হয়ে খুঁজে চারদিক,
অপ্রাপ্তির মিছিলে পরাজয় বরণ, সে পরাজিত সৈনিক,
অতপর শুয়ে থাকে পথশিশু পেটে বেঁধে ইট।
তুমি প্রাণ বিনাশে ব্যাস্ত,ওদিকে দেখ চেয়ে,
জন্ম দিয়ে মা, পড়ে আছে বৃদ্ধাশ্রমে,
অযত্নে-অবহেলায় দু-মুটো ভাত পায়নি বলে,
অথচ তুমি চলমান,
ভরা পেটে গোস্ত-কোপ্তা-পেস্তা ভোজনে,
কে তুলে দিবে খাবার মুখে ,
আমরা যে মহাখাদক।
কোথায় বাঙলার জনক মুজিব আদর্শে আদর্শিত রাজপথের সেনা,
কোথায় জিয়ার আদর্শে আদর্শিত পুত্র-ভ্রাতা,
কোথায় তোমাদের মানবতা,
কোথায় থাকে এখন চেতনা,
তবে কি তোমরা সেই পাতি নেতা?
যার মুখে মহান বাণী, কাজে
পিচঢালা রাজপথ রঞ্জিত চেতনা?

অবাক স্বদেশ
অবাক স্বদেশের পুলিশগুলো,
স্বদেশ হতবাক, চির মর্মাহত।
পুলিশ তুমি কার,
সরকারের নাকি জনগণের?
পুলিশ তুমি কার, শুনো কার কথা,
তুমি তো নিয়োজিত-
রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলায়-
নিরাপত্তা, ফিরে দিতে মানবতা।
কিহেতু জলাঞ্জলি স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্ব,
কেন অর্জিত সুনাম-সুখ্যাতি ম্লান,
কেন ক্ষমতাসীনদের পদলেহনে ব্যস্ত,
কাউকে ঠুঁটো জগন্নাথ, কাউকে মিষ্ট খাতিরে ব্রত।

অবাক স্বদেশ,
অবাক স্বদেশের ক্রিয়া-প্রক্রিয়া
যদি এই হবে মূল ক্রিয়া-প্রক্রিয়া,
এই যদি হয় ইচ্ছাবৃত্ত,
এই যদি চিরাভ্যস্ত কার্য,
তবে উন্নত স্বদেশের স্বপ্ন দেখো কোন আহ্লাদে?
কুৎসিত-কলুষিত-কুকর্ময়ী এই চিত্তে?
তবে উঠে এসো, এসো নির্বিঘ্নে,
দলে দলে ঝাঁক বেঁধে অবিলম্বে।
ভুলে যাও তদানীন্তন ঘটনা,
বিচ্ছিরি মনোভাব-তঞ্জকথা-শঠতা,
কেটে ফেল সব কাদম্বি, হাঁসাও তিমির বিধারী।

আমরা তো নিঃশেষ হইনি,
তবে হব কেন তিরোধান ?
এখনই সময় শোষকের পিঞ্জিরে বাড়াও শতভাগ দহন।
ফিরিয়ে আন অস্তমিত যাওয়া সেই স্বদেশ।
যার জন্য আজও আমরা-
তৃষ্ণার্ত, গঠনহীন,নির্মুক্ত।
.
.
লেখক: ফাহিম মাহমুদ
কাব্যগ্রন্থ : পরশ পাথরের হুংকার

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 3টি মন্তব্য এসেছে।

muhomaya
২১-০২-২০১৮ ১৪:৫৫ মিঃ

প্রিয় প্রবীর রায় ভাই, আমার কবিতার প্রতিটি উক্তি আপনার রোমে শিহরণ তোলাতে পেরে আমি নিজেকে ধণ্য মনে করছি... এটাই আমার প্রাপ্তি...

opuroy
১০-০২-২০১৮ ০৯:১২ মিঃ

প্রতিটি উক্তি রোমে শিহরণ তোলার

muhomaya
১০-০২-২০১৮ ০৬:৪২ মিঃ

অবাক স্বদেশ কবিতা হতে কিছু অংশ বাদ নেওয়া হয়েছে, যে অংশটুকু সরকারের আপত্তি ছিল, অবাক স্বদেশ কবিতাটি আমি লিখেছিলাম ২০১৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী, চেষ্টায় ছিল স্বদেশের ভুলগুলো জনসাধারণ ও সকারের দৃষ্টি গোচর করার লক্ষে, প্রায় ৩১টি গ্রুপে পোষ্ট করেছিলাম|
হ্যাঁ, আশা পূরণ হয়েছিল, সরকারের দৃষ্টি গোচর ছিল, যার ফলপ্রসূ ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর |