মেরাজঃ আলোকিত রজনী
- সোহরাব হোসেন - সিরাতুল মুস্তাকিমঃ আলোকিত জীবন ২৯-০৩-২০২৪

প্রিয়জন হারা, আঘাতে মলিন নূরের বদন খানি,
মনোবল দৃঢ় করিতে তখন, মুছে দিতে তাঁর গ্লানি
সৃষ্টি জগত, রহস্য গোপন, দেখাতে দুচোখ ভরে
স্বর্গীয় দূত পাঠালে তুমি প্রিয় হাবিবের দ্বারে।
সাগ্রহে রইলে প্রতীক্ষায় তুমি, জুড়াবে নবীর আঁখি,
আলোক ছটার মত দ্রুতগতি, বোরাক হইলো পাখি।
হও বললেই হয়ে যায় তবু দিলে কুদরতি পাণি,
পরলোক করে ইহলোকে যোগ, আলোকের ঝলকানি।
সাতাইশ বছর করিলো ভ্রমণ সশরীরে আস্বাদন,
জগতের কাছে মুহূর্ত কতক, ঊর্ধালোকে আরোহণ।
আধ্যাত্মিক যোগে জানিলো সমাজ বৈজ্ঞানিক প্রদর্শন,
মুত্তাকির জন্য মহান রবের ঐশ্বরিক নিদর্শন।

রজনী গভীরে আলোকিত করে জিব্রাইল মেলে ডানা,
নভোমণ্ডলে প্রথম মানব করিবে যে রওয়ানা।
মহাকাশ স্টেশন উন্মুক্ত হাতিম মাকামে ইব্রাহিম,
বিদীর্ণ বক্ষ রক্তপাত বিহীন, করে যেন রিমঝিম।
সিনাচাক হলো শাককুস সদর পবিত্র জমজম জলে
স্বর্ণপাত্রেতে বিধৌত কলব, স্বচ্ছতা আসিলো দিলে।
সম্পন্ন হলো প্রস্তুতি সকল, আদি নভোচারী সাজ
বসালো পিঠে মোহরে নবুয়্যাত, বাহ্যিক কারুকাজ।
বোরাক হইলো মহাকাশ যান, চলে দৃষ্টির বেগে
এভাবেই হলো প্রথম যাত্রা, চৌদ্দশত সাল আগে।
সোবহান আল্লাহ, তোমার নির্দেশে শুরু হলো রাত্রি ভ্রমণ,
মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসায় করে গমন।

প্রথম যাত্রা ইসরার শেষে জেরুজালেম পেল প্রাণ,
থামিলো সময় এক হয়ে গেল অতীত ও বর্তমান।
এক লক্ষ আর চব্বিশ হাজার পয়গম্বরেরা মিলে
সসম্মানেতে স্বাগত জানালো মমতায় ভরা দিলে।
অপেক্ষমান আম্বিয়া কেরাম কাতারে দাঁড়িয়ে খোঁজে,
জিব্রাইলের আজানের শেষে ইমাম হইবে কে যে?
পড়ালো নামাজ তোমার হাবিব ইমামুল মুরসালিন,
নবীদের নবী বিশ্বনবীজী খাতামুন নাবীয়্যিন।
করিলো মজলিশ নামাজের শেষে বাইতুল মুকাদ্দাসে,
নাবীউল আম্বিয়া মীর-ই-মজলিশ বলিলেন সর্বশেষে।
তোমার ঈশারায় হাবিব পাইলো শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান,
দুই জাহানের মালিক খোদা সকলি তোমার দান।

পরের যাত্রা মেরাজে করে ঊর্ধ্বাকাশ পানে গমন,
মুলাকাত করে আম্বিয়াকূল থরে থরে সাত আসমান।
পৌঁছালো শেষে সর্বশেষ স্টেশন সিদরাতুল মুনতাহা,
যেখানে নহর চারখানা বয় শান্তিময় সুধা, আহা!
জান্নাতে গেল অন্তর্ময় ধারা কাওসার ও সালসাবিল,
ধরনীর পানে বহির্গামী নদ— নীল, ফুরাত অনাবিল।
অতপর গেলো বাইতুল মামুর যেখানে প্রতিদিন
তাওয়াফ করে সত্তর হাজার ফেরেশতা এক কালীন।
সুরা, দুগ্ধ ও মধুর পাত্রের— বাছিলো দুগ্ধ ঠিক,
যা ছিলো সত্য, খাঁটি সহজাত ইসলাম ধর্মের প্রতীক।
সরীফুল আকলামে ফেরেশতা ব্যস্ত, সশব্দে লিখে খতে
নির্দেশনা যত আসে সেখানে লাওহে মাহফুজ হতে।

শেষ স্টেশনে থামে জিব্রাঈল, অগ্রসর হতে মানা,
খোদার নূরেতে ঝলসে না যায় তাঁর ছয়শত ডানা।
সত্তর হাজার নূরের পর্দা হটিয়ে অনায়াসে,
রফরফে করে পৌঁছালেন নবী মহিমান্বিত আরশে।
আখেরি সফর তোমার সমীপে, সগর্বে করিলো ই'রাজ,
লা-মাকাম আর লা-জামান ভ্রমণ; পূর্ণাঙ্গ হইলো মেরাজ।
সুদীর্ঘ তোমার সুদীপ্ত নূর, বিশাল জ্যোতির কায়া
মাখলুকাতের রব সোবহান, তুমি যে মহামায়া।
মাধ্যম বিহীন কথোপকথন- ঘরে সম্মানিত মেহমান,
নির্দেশ পাঠালে জগতের কাছে করিলে ওহী প্রদান।
এতোটাই কাছে মাঝখানে কেবল দুই ধনুকের দূরত্ব,
তোমার দিদারে নূরের সৌরভে তিনি হলেন অভিভূত।

সোবহান আল্লাহ, অন্তর্যামী রব, সর্বজ্ঞানী তুমি জানি
তোমার দিদারে মোহিত হলো মাটির সে দেহ খানি।
ইহলোকে প্রিয় প্রেরিত হাবিব মানবতার মুক্তিদূত,
পরলোক তাঁকে স্বচক্ষে দেখালে, করিতে মজবুত।
অশুভ দমনে নিয়োজিত হবে বিলিয়ে একান্ত নিষ্ঠা,
আত্ননিয়োগে করিতে ইসলাম বিশ্বময় সুপ্রতিষ্ঠা।
প্রত্যক্ষ করিলো ছায়াছবি যেন রহস্যে ঘেরা জগৎ,
আলমে বারজাখ, বেহেশত দোজখ, খন্ডচিত্রে আলামত।
বড় পাথরের আঘাতে ছিন্ন বেনামাজিদের মস্তক,
সেরে উঠিলে পুনশ্চ আঘাত, অবশ্যম্ভাবী দস্তক।
সুদখোরের পেট বেঢপ আকার, কিম্ভুতকিমাকার
পেটের ভারে নড়াচড়া সে করিতে পারে না আর।

যাকাত প্রদানে অনাদায়ীর দায় পাওনাদারের ভীড়
চলনে বলনে পশুবৎ হলো খাইলো পুঁজের ক্ষীর,
আরো খাইলো বিষাক্ত ফল কাঁটাময় আঠাল,
জোর করে মুখে উত্তপ্ত পাথর, ফেরেশতা বলে `গেল'।
চোগলখোরের পশ্চাতদেশের গোশত আনিলো কেটে,
তারপর দিল মৃত ভাইয়ের গোশতের মতো খেতে।
অগ্নিল নখর করে বিদীর্ণ গিবতকারীর বক্ষ,
আপন ভাইয়ের আড়ালে যারা কুৎসা রটাতে দক্ষ।
যে ব্যভিচারি জেনাকার নারী করেছে ভ্রূণ হত্যা,
আংটা পায়েতে ঝুলানো হলো পাপের দায়ে অগত্যা।
ব্যভিচারি নর উত্তম পাত্রে রাখিয়া তাজা ভুনা,
গোগ্রাসে গিলে পঁচা গোশত, নোংরা পাত্রের খানা।

উঠানো কঠিন তবু করে জড়ো বিশাল লাকরি বোঝা,
আমানত যে জন খেয়ানত করে বুঝিলোনা নতিজা।
জিহ্বা ও ঠোঁট পুনঃপুনঃ কাটে অগ্নিময় লোহার কাঁচি,
ফিৎনা ফেসাদ যে জন করিলো শয়তানের তালে নাচি।
দাম্ভিক যারা, বানানো হইলো বিশালাকারের ষাঁড়
ছোট পাথর হতে নির্গত ফের ঢুকার চেষ্টা অসাড়।
এতিমের ধন আত্মসাৎকারীর উটের ন্যায় ওষ্ঠ্য অধরে
জ্বলন্ত কয়লা প্রবিষ্ট করালো, বেরোল পায়ুপথ ধরে।
মদের মাদকতা নেশায় যে বুঁদ, জাহান্নামীর শরীর
নির্গত করিলো যে নোংরা পুঁজ, তা পান করিতে অধীর।
হাসি নেই মুখে মলিন ফেরেশতা জাহান্নামের রক্ষী,
মুত্তাকির কাছে বার্তা পাঠালে হাবিব কে করে সাক্ষী।

কুরাইশ কেউ বিস্মিত হলো, স্বপ্নে নয় তবে জিন্দা!
কেউ ঠাট্টা বিদ্রূপ করিলো কেউবা করিলো নিন্দা।
পৌত্তলিক ওরা, বলে সব জাদু, পায়নি দ্বীনের কাণ্ডারী,
উপহাস করে হেলায় হারালো আলোর মহান দিশারী।
ছিলো না তখন জোতির্বিজ্ঞান, আইনস্টাইনের তত্ত্ব
খোদার রাস্তা রাসূলে আস্থা, বিশ্বাসীর কাছে গুরুত্ব।
আল আমিনে অটল বিশ্বাস মুশরিকে শত ধিক্,
তাই আবুবকর পরম বিশ্বাসী, নামে যোগ সিদ্দিক।
পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ হইলো মুমিনের কাছে মেরাজ,
আজানের ডাকে মসজিদ টানে ফেলে দুনিয়াবী কাজ।
আরশে যতো কথোপকথন হলো রাসূলের সাথে,
মুমিন নামাজে তাশাহুদে পড়ে দরদীয়া হিকমতে।

পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম
৩০ জানুয়ারি, ২০১৮ ইং।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 6টি মন্তব্য এসেছে।

robinbdbuet
০৩-০৪-২০১৯ ২১:২৬ মিঃ

আজকের এই অলৌকিক রজনীর জন্য এই কবিতা। সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

robinbdbuet
০৯-০১-২০১৯ ০০:২৬ মিঃ

অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ #লুৎফা

Lutfa
১৮-১২-২০১৮ ১৯:২৪ মিঃ

চমৎকার !

robinbdbuet
১৪-০৬-২০১৮ ২২:১৩ মিঃ

ধন্যবাদ Faiyaj ভাই, ধৈর্যের সঙ্গে পড়ার জন্য।

Faiyaj
২৭-০৫-২০১৮ ০৭:০১ মিঃ

দারুণ

robinbdbuet
২৬-০৫-২০১৮ ২৩:৩২ মিঃ

মেরাজ নিয়ে ৬ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখা কবিতা।