লাল গরু (গল্প)
- আসাদউজ্জামান খান ২৯-০৩-২০২৪

লাল গরু
আসাদউজ্জামান খান
=================
গতবছর কোরবানির ঈদের পর গনি একটি ষাঁড় বাছুর বারোহাজার টাকায় কিনেছিল,ভাবছিল বড় হলে হালচাষ করাযাবে।তাঁর দুধের গাভির ও একটা বাছুর আছে।হালচাষের গরু দুটি দুর্বল হয়েগেছে।গনি দরিদ্র কৃষক,কৃষি কাজ করে তাঁর সংসার চলে।উপার্জণের মতোন আরকেউ নেই।সংসারে ছয়জন, দুই ছেলে,স্ত্রী,বাবা,মা।বাবা ও কৃষক ছিলেন,জায়গাজমি তেমন নেই,অন্যের জমি চাষকরে যা পায় তাঁ দিয়ে মোটামুটিরকম চলে।ছেলে দুটি ছোট একজনের বয়স দশ বছর অন্য জনের তের।মাকে তাঁরা কাজে সাহয্য করে।ছেলে দুটি স্কুলে লেখাপড়া করে,বাবা খেতে কাজ করলে খাবার দিয়ে আসে,গরুগুলকে মাঠে চরায়,গরুর খাবার না থাকলে ঘাস কেঁটে আনে,ফসলের সময় বাবার সাথে কাজকরে এভাবে ছেলে দুটি ছোট থেকেই সংসারে কাজকরে সাহায্য করে মা বাবাকে।

নতুন ষাঁড় বাছুর টি কেনার পর থেকে তাঁরা বাছুর টির দিকে অনেক খেয়াল রাখে। ষাঁড় বাছুর টি দেখতে লাল রঙের,মাথায় চাঁদের মতন ছাপ আছে।প্রতিদিন সব গরুর সাথে মাঠে চরায় কিন্তু ষাঁড় বাছুরটির দিকে দু'ভায়ের নজর একটু আলাদা যেমন,ষাঁড় বাছুরটিকে ধরে ধরে ঘাস খাওয়ায়,যেখানে বেশি ঘাস আছে সেখানে দেয় আবার আলাদা করে ঘাস কেঁটে দেয়, প্রতিদিন গোসল করায়,খইল-ভুসি দেয়।দু'ভায়ের আলাদা যত্নে ষাঁড় বাছুরটি খুব পরিপুষ্ট হয়ে অল্প সময়েই বড় হয়।ষাঁর বাছুরটি এখন বাছুর নেই সে পুরোপুরি ষাঁর হয়েছে। দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়,ছেলে দুটি ষাঁরটির মাথায় নাগাষি দিয়েছে,গলায় একটা পিতলের ঘণ্টা দিয়েছে।ছেলে দু'টির কথা শোনে ষাঁর টি!যদি বলে মাঠে যা চলে যায়,কাছে আসতে বললে কাছে আসে।ষারটি কারো ক্ষতি করে না।কারো ফসল খেতে গিয়ে ফসল নষ্ট করে না,তাকে দড়ি দিয়ে বাধা লাগেনা,সে যেন সব বোঝে,যা বলে দু'ভাই ষাঁর টি তাই করে।

দুধের গাভির বাছুরটি তেমন পরিপুষ্ট হয় নি।হালচাষ অন্য গরু দু'টি দিয়েই চালায় গনি।বাছুর দুটি বড় হলেও তা দিয়ে হালচষ করা যায় না। একটা তেজি আরেকটা কম তেজি।কয়েকদিন হালচাষ করতে নিছিল কিন্তু একটা মনে হয় দৌড়ায় অন্যটি আস্তে চলে।গনি বিরক্ত হয়ে ওদুটো দিয়ে হালচাষ করে না,এভাবে হালচাষ করাযায়!ছেলে দু'টিও ষাঁর বাছুরটি দিয়ে হালচাষ করতে দিবে না গনিকে,এ ভেবে আর নেয় না হালচাষে।

দিনে দিনে ষাঁরটি অনেক বড় হয়েছে।গ্রামের সবার চোখ পরে ষাঁরের দিকে।গনির সাথে কার কিছু হলেই বলে তোর ষাঁর বেচে দিব,চুরি হবে তোর ষাঁর ইত্যাদি কথাবলে।সবার চোখ পরারও কথা!অনেক বড় হয়েছে, দেখতে অনেক সুন্দর,টকটকে লাল রং,সূর্য্যর আঁলো পরলে গায়ে,মনে হয় ঝিলিক দেয়।মাঝে মাঝে গরু ব্যবসায়ীরা এসে দাম হাকায়,গনি দাম না বললেও তাঁরা দাম বলে,নব্বই হাজার,একলাখ টাকা।ষাঁর বেচার জন্য ঘর থেকে গনি সায় না পাওয়ায় কিছু বলে না।ছেলেরা তো বেচার নাম ও শোনতে পারে না।তাঁবা বলে ষাঁর কখনই বেচব না!

গ্রামে এক মুরব্বী আছে,গনি সবসময় তাঁর পরামর্শে চলে।তাঁর সাথে গনি পরামর্শ করতে গিয়ে বলে,ষাঁর টিকে কী করাযায় চাচামিঞা?ষাঁর টির ওপরে সবার নজর পরছে,মুরব্বী বলে হ্যাঁ আমি শুনছি,তোমাকে বলব ভাবছিলাম।আগামী কোরবানিতে তুমি ষাঁরটা বেচে দাও যে টাকা পাও তা দিয়ে আবার দুইটা বাছুর কিনেরাখ আর বাকি টাকা দিয়ে ঘরটা ভালোকরে তোল।

মুরব্বীর সাথে গনি পরামর্শ করে বাড়িতে গিয়ে বলে।সবাই বেচতে রাজি হলেও ছেলেরা রাজি না!ছেলেদের অনেক বুঝিয়েছে পরে তাঁরা কিছুই বলে না। একদিন গনি ষাঁর কে বাজারে নিয়ে যায়,গনি অল্পসময়েই ষাঁর বেচেদিল।ষাঁর বেচার জন্য ছেলেরা কেউই যায় নাই।বাবার উপর তাঁরা রাগকরেছে!তাদের খুব প্রিয় লাল গরুটি বেচেদিয়েছে বাবা।বাড়ির গরুগুলোও এখন তাঁরা মাঠে চরায় না।

লেখা...১১-০৮-২০১৮
প্রকাশ... ২৮-০৮-২০১৮ রংপুরের দৈনিক "গণ আলো" পত্রিকায়

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।