অনামিকা
- মাহমুদ নেওয়াজ জয় ২৪-০৪-২০২৪

অনামিকা

চারিদিকে নিবিড় আঁধার
শুনশান নীরবতা,
এরইমাঝে হঠাৎ শোনা যায় কারো মৃদু কণ্ঠ,
চাপা, অস্পষ্ট কিছু কথা।

" এই শরীফ,লাশটা লুকাবি কোথায়?"
" ক্যান জালাল, এই মাটির তলায়।"
" আচ্ছা, কাম শুরু কর।"
" হয়। ধর, মাথার দিকটা ধর।"

শরীফ ও জালাল কবর দিতে শুরু করে লাশ,
একটি তরুণীর লাশ,
অনামিকা যার নাম ;
যার ছিল দীঘল কালো চুল
আর সেখানে ফুটে উঠত গন্ধরাজের সুবাস।

সবার মত তার জীবনেও এসেছিল প্রেম,
শরীফ নামের ছেলেটিকে দিয়েছিল সে হৃদয়;
সত্য ভালোবাসা ছিল সেটি,
ছিলনা কোন সংশয়।

তবে সব প্রেমিক হৃদয়ের প্রেমিক হয়না,
কেউ হয় ভোগী, শরীরলোভী।
শরীফও ছিল তেমনই একজন।
তাই তার আহবানে নিরালায় দেখা করতে এসে,
অনামিকার হল মরণ।

" জালাল, লাশটা কবর দিমু। কিন্তু স্বাক্ষী রাখন যাইব না। "
" শরীফ, তার মানে তুই আমারেও বাঁচতে দিবিনা?"

শরীফের ছুরিটি আমূল বিঁধে গেল জালালের পেটে।
তার মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বের হলনা।


সব ঝামেলা শেষ,
এখন কবর দেবার পালা।
শরীফ ভাবল দ্রুত করতে হবে,
সময় গেছে ম্যালা।

যখনি সে মাটি ফেলতে গেল
অনামিকার মৃতদেহের ওপর,
শুনল কীসের যেন মৃদু গুঞ্জরণ,
যেন নড়ে উঠল একটা হাত।
এদিকে ক্রমেই বেড়ে চলেছে কালোরাত।

লাশে মাটি দিচ্ছে সে,
আর করবেনা দেরি,
কাজ শেষে তাকে ফিরতে হবে বাড়ি।
কিন্তু হঠাৎ করেই খুলে গেল দুটো চোখ।
অনামিকা চেয়ে রইল তার দিকে।
শরীফের হাত থেকে তখন পড়ে গেছে মাটির দলা,
দৃষ্টি হয়ে পড়েছে ফিকে।

" কীরে যাবিনা আমার সাথে? "
মধুর কণ্ঠে বলল অনামিকা।
" না, না। " বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে শরীফ,
মুখে আতঙ্কের রেখা।

হঠাৎ উঠে বসল অনামিকা।
চেপে ধরল দুহাতে শরীফের গলা।
আর তার চোখ দিয়ে ঝরতে লাগল রক্তবর্ণ অশ্রু,
যেখানে লুকিয়ে আছে অজস্র বেদনা।


শরীফকে আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করল সেই দুটো হাত,
তার গলা চেপে ধরেছে যেন কোন আসুরিক শক্তি,
সে হাঁসফাস করছে, চাইছে মুক্তি;
আর এরমাঝে অতিক্রান্ত হচ্ছে এক হিমশীতল রাত।

কিন্তু শেষরক্ষা হলনা তার।
অনামিকার হাত ছাড়লনা তাকে,
গলগল করে তার মুখ দিয়ে বেরোতে থাকল রক্ত;
আর ঠিকানা হলো পরপার।

পরদিন সকালে সেখানে দেখা যায়
উৎসুক জনতার ভীড়,
পুলিশ আসে, ময়নাতদন্ত হয়।
অনামিকা আর জালালের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা গেলেও,
শরীফের মৃত্যুর কারণ অজানাই রয়ে যায়।

তাদের লাশ অযত্নে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়।
সময় বয়ে যায়।
একসময় বিষয়টি নিয়ে
বন্ধ হয়ে যায় আলোচনাও।

তবু এখনো সেই নির্জন জায়গাতে
রাত নেমে এলে
দীঘল কালো চুলের
কোন এক রমণী হেঁটে যায়।
তার গুণগুণ কান্নার শব্দ, অট্টহাসি
রাতের নীরবতা ভেঙে খানখান করে দেয়।
কেউ জানেনা তার পরিচয়,
শুধু এই পৃথিবীর অনেক অমীমাংসিত রহস্যের মত
এ ব্যাপারটিও রহস্যাবৃত রয়ে যায়।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।