শীতের রাত্রি
- অরণ্য- (ভাবুক কবি) ১৯-০৪-২০২৪

আমাদের শহরে পড়েছে প্রচন্ড শীত
ঠান্ডার প্রকপে পশু-পাখি কাঁপে,
ঘুম থেকে উঠে বাইরের দৃশ্য দেখে
বুঝলাম পৃথিবী ধোঁয়াতে আচ্ছন্ন;
ঘন কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না।
চারিদিকে রংবাহারী ফুলের আহ্বানে
ছুটে আসে প্রজাপতি আর মৌমাছি,
সর্ষে ফুলের ক্ষেতে অপরূপ দৃশ্য
যেন হলুদ বর্ণের মেলা বসেছে।

রাত্রি হলো
গেলাম আমি ঘুমতে,
সারা অঙ্গে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমনোর চেষ্টা
করি কিন্তু ঘুম আর আসলো না
কিছুক্ষণ পর উঠে পড়ি বিছানা থেকে;
তখন সময় প্রায় রাত ১টা।
বাড়ির মুখ্য দর্জা গুলে বাইরে বেরিয়ে
শুনতে পেলাম একটি শিশুর কান্না!
কিছুদূর এগিয়ে যেতেই-
অবাক করা এক দৃশ্য চোখে পড়ে,
টর্চ জ্বেলে দেখি
এক মহিলা তার ছোট্ট শিশুকে ছেড়া আঁচল
দিয়ে ঢেকে শীতে থর-থর করে বসে কাঁপে!
আকাশের দিকে চেয়ে দেখি ঘন কুয়াশা
ওপর থেকে ঝরে পড়ে বৃষ্টির মতো
নীল প্রান্তে মিট-মিট করে জ্বলে কয়েকটা তারা
উত্তরের হিমেল বাতাস হু হু করে ছুটে আসে।

তার এমন করুণ দৃশ্য দেখে
আমার দুচোখে চলে আসে জল!
তখন মনে পড়ে যায় সেই বাল্য কালের স্মৃতি,
আমার মা'ও ঠিক এমন ভাবেই আগলে রাখতেন
জননীর আঁচলতলে শিশুদের নিরাপদ স্থান;
তিনি শত কষ্ট পেলেও-
তাঁর সন্তানের শরীরে একটা আঁচড় লাগতে দেন না।

এই মহিলাকে দেখে মনে হলো,
আজো পৃথিবীতে কত মা এভাবে
নিজের ভাগ্যের সঙ্গে প্রত্যহ করে লড়াই!
আজো কত মা পথের ফুটপাতে কাটায় জীবন!
কত মানুষ তাদের ঘরছাড়া!
সমাজের বুকে আজো তারা লাঞ্ছিত বঞ্চিত!
দারিদ্রতা এমন এক অসুখ যার কোন চিকিৎসা নেই
নিয়তির খেলা বড় আযব
কেউ ষোনার চামচ মুখে দিয়ে বড় হয়
আর কেউ ফুটপাতে জীবন কাটায়।

আমি বাড়ি ফিরে এসে,
কিছু খাবার আর একটি কম্বল নিয়ে গিয়ে
দিলাম ঐ অসহায় মহিলার হাতে
তিনি আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকলেন এক দৃষ্টিতে।
আমি কোন কথা বলার পুর্বেই
তিনি প্রশ্ন করলেন, কে তুমি?
আমি বললাম, আমি আপনার ছেলের মতো
কোন সন্তান কি তার মা'কে একা রেখে যেতে পারে?
তাই আমিও আপনাকে এই নির্জন রাতে
শীতের মধ্যে একা রেখে যেতে পারলাম না।
তিনি আমার কথা শুনে কেঁদে ফেললেন!
আমি বললাম মনে করুন না আমি আপনার সন্তান,
চিন্তা করলাম এত রাতে তাঁকে একা
ফেলে রেখে যাওয়া উচিত হবে না
তাই তাঁকে নিয়ে এলাম আমার বাড়িতে।

রাতের আঁধার ঠেলে সূর্যের উদয় হলো
সকালবেলা তিনি আমায় বললেন,
তুমি আজ আমার জন্য যা করলে
অন্য কেউ হলে তা হয়তো করতো না!
সত্যি তুমি আমার ছেলের মত।
আমি পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে
তাঁর হাতে দিয়ে
বললাম দেখুন কিছু মনে করবেন না; এটা ধরুন,
এই টাকা আমি আমার মা'কে দিলাম;
তারপর তিনি আমার মাথায় হাত রেখে
আশীর্বাদ করে চলে গেলেন।


রচনাকালঃ- ১৮/১১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।