"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল"
- Md. Osmangani shuvo ২৫-০৪-২০২৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন সকাল হয় তখন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো,
আবাসিক হলের ছোট টলগুলো,
শিক্ষার্থীদের অধরা স্বপ্নগুলো
একসাথে জেগে ওঠে।
রণসাজে সেঁজে সবাই যুদ্ধে যাওয়ার
প্রস্তুতি নিচ্ছে
জীবনযুদ্ধ, এ যেন এক মহান যুদ্ধ!!!
এখানে অস্ত্র হল বই
শিক্ষার্থীরা হল বীরযোদ্ধা।
কয়েকটি কাক
খাদ্য খুঁজছে
একটি ডাস্টবিনের ভিতর।
পাশে শায়িত একটি কুকুরের
মোহনিদ্রা টুটে গেল
ঘেউ ঘেউ করতেই
কাকেরা বলে উঠল কা -কা -কা
মাকড়সা জাল পেতে বসে আছে
ভোরের কুয়াশায় শিশিরভেজা জাল আজ সকালে একটিও পোকা পড়েনি
না খেয়ে পেটে পাথর বাঁধতে হবে তার
পাশদিয়ে প্রাতঃভ্রমনে
একটি সদ্য বিবাহ দম্পতি।
ঝরা পাতা মৃতের মত পড়ে আছে নীরবে।।
সুনসান নীরবতা,
কীটপতঙ্গ খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত
এ্যাডিডাস স্পোর্টসের ব্যাগে করে
MP3,ওরাকল, প্রফেসরস বই নিয়ে
স্বর্গে পাড়ি দেওয়ার মত
সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পাড়ি দিচ্ছেন
জনৈক চাকুরি প্রত্যাশী।
এদিকে একটি মেয়ে সেই ভোরে
এসেছে সেন্ট্রালে
আশেপাশে কেউ নেই
কিছুই জানে না, কিছুই বোঝে না
এমন ভাব নিয়ে কর্ণে
হেডফোন গুঁজে
মোবাইল টিপাটিপি সেই!!
একটি পাকা ডাল ভেঙ্গে পড়ে আছে
রাস্তার ওপর
অথচ তার দিকে কারোও খেয়ালি নেই
ডিঙিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই
কাঠ বলে কি ওটি মানুষের উপকার করে না?
তাহলে কি ওরা অকৃতজ্ঞ
উপকারীর উপকার স্বীকার করেনা।
একটি বাস এসে থামল পীয়ারুর সামনে
চাত্র-ছাত্রীরা নামল, ভঙ্গিময় প্রস্থান
রাজুভাস্কর্য থেকে রাজু সাময়িক প্রান ফিরে পেয়ে
তাদেরকে অবাক চোখে দেখল
বলল, এরা কারা?
এরা কি বাংলাদেশের আগামী?
নিশির ধকলশেষে ঝুঁপিঘর গোচাচ্ছে
তেইশ উর্ধ্ব দুই পতিতা
তাদের গায়ে আর ব্যাথা হয়না
সমাজের ধার ধারে না তারা
পেশাকে নেশা হিসেবে তৈরি করেছে তারা।
রিক্সায় জননী
সকালের কাজকর্ম শেষে
আদরের দুহিতাকে দিতে যাচ্ছে
উদয়ন স্কুলে
দুহিতার কচি স্কন্ধে ব্যাগ
বই আর টিফিনে ভরতি
স্কন্ধ তার যায় যায় অবস্থা ।
সোপার্জিত স্বাধীনতার দেড়শ ঊর্ধ্ব
মূর্তিরা কয়েক সেকেন্ড প্রাণ ফিরে পেয়ে
বিষয়টি অবলোকন করল।
একত্রে বলে উঠল,
শিশু অত্যাচার বন্ধ কর
নূর হোসেন প্রান সাময়িক ফিরে পেয়ে
বলল ,
আমি বুকে পিঠে
এসব লিখে এখানে দাঁড়িয়ে আছি
সবাই আমাকে দেখেও
না দেখার ভাণ করে
এরা আজ আর আমাকে
স্মরণ করেনা
অথচ আমি নূর হোসেন, এই জাতির
গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছি
স্বৈচারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে
রক্ত দিয়েছি
আচ্ছা, এরা এত নিষ্ঠুর কেন??
পলাশীর ঘুম ভাঙতে দেরি হল না
প্রতিদিন সে রাত জাগে
দিনেও ঘুমাইনা
তার ঘুম আসে না, তার ঘুম নেই!!
তার বুকে অসহ্য যন্ত্রণা।।
পলাশী থেকে প্যারিস বা পিটার্সবার্গে
রূপ নিতে চায় সে
বল, তা কি কখনো হয়?
কখনো কি সম্ভব এটা বলো??
কোথায় পলাশী আর কোথায়
প্যারিস আর পিটার্সবার্গ
হাহ্ হাহ্ হাহ্ হা
মা ঘুমিয়ে আছে রাস্তার পাশে
আর উলঙ্গ ছেলেটি
একটি ময়লা প্লাস্টিক নিয়ে
মুখে দিতে লাগল আর
বলতে লাগল হ্যা! হ্যা! হ্যা!
এটায় কি হতে পারে আমার খাদ্য?
আই,এম,এল এর সামনে
যাত্রীছাউনিতে একজন
লম্বা চুলওয়ালা, দাড়িওয়ালা ব্যক্তি
ঘুমিয়ে আছে
মনে হয় সে সারা রাত্র
গাঁজা সেবন শেষে
এইমাত্র ঘুমিয়েছে
আচ্ছা, সে টাকা পায় কোথায়?
পাশেই নোংরা পাজামা পরা
একজন পঁচিশ ঊর্ধ্ব মহিলা
ফুলের মালা গাঁথছে
নিচেই ছেঁড়া মলিন জামা পরা
একটি অল্পবয়সী মেয়ে আর
ন্যাংটো একটি বাচ্ছা ছেলে
মালা বিক্রি করেই
দিন গুজরান করতে হবে তাদের।
কিছু হিন্দু মহিলা পূজা অর্চনার জন্য
এক ধরনের সাদা ফুল তুলতে এসেছে
বাঁহারি ডালা নিয়ে--
একজন বিদেশি কি যেন একটি
ইংরেজি বলতে বলতে
রিক্সায় যেতে লাগল।
শহীদমিনারের অবমাননা করে
একটি কুকুর শায়িত
একটু অবচেতনভাবে কিন্তু মানুষের পায়ের শব্দ সে শুনতে পায়
খুবই চেতনার সাথে।
কুকুরটীর মুখ ঠিক
ল'ফ্যাকাল্টির দিকে
কিছুদিন আগে যে মস্তবড় গাছটি
পড়েছিল রাস্তায়
তাকে কেটে পার্ট-পার্ট করা হয়েছে।
পাশে একটি পাখির ভাঙ্গা বাসা
দুটি ভাঙ্গা ডিম
দুটি ভাঙ্গা জীবন।
ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে টগবগ-টগবগ
শব্দে নিজের উপস্থিতি
জানান দিয়ে যাচ্ছেন
পুরাণ ঢাকার এক ঘৌড় সওয়ার ।
পাউরুটি,কলা,কেক
বিড়ি- সিগারেট সমৃদ্ধ
দোকানটি খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে
ফুটপাতের দোকানদারটি।
শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ের
টলগুলোতে রুটি-পরোটা তৈরির
ঝমঝম শব্দ হচ্ছে এ-যেন
জীবনযুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত--।
নামায শেষে সেন্ট্রাল মসজিদ থেকে
বেরিয়ে যাচ্ছেন একদল মুসল্লি
যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে।
"জীবনযুদ্ধ"
একদল যুবক ছেলে পিঠে
একটি বড় ব্যাগ নিয়ে
সেন্ট্রাল মাঠে ক্রিকেট প্রাকটিসে যাচ্ছে।
আর কিছুক্ষণ পর সম্পূর্ণ সকাল হবে
যুদ্ধ শুরু হবে, যুদ্ধ শেষে আবার
সুনসান নিরবতা।
কয়েকজন শিক মহিলা খালি পায়ে
ফুল নিয়ে গুরুদুয়ারার
ভিতর ঢুকে মাথায় কাপড়
বেঁধে পূজো করতে লাগল।
পূজা শেষে
তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে
যুদ্ধ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
"জীবনযুদ্ধ"
ভিসি চত্বরের সামনে টহলরত
পুলিশরা বন্দুকের নলার উপর
ঠেস দিয়ে না ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টায়--।
অমর একুশে হলের সামনে
রাস্তার ময়লা এখনো সরানো হয়নি।
একুশে হলের পাশের
এশিয়াটিক সোসাইটি
এখনো খোলেনি।
একি!! চারিদিকে মানুষজন কোথায় যাচ্ছে?
ছোট তল্পিতল্পাসহ--
পাকিস্তানিরা কি আবার
আক্রমণ করেছে,
যে যা পারে তাই নিয়ে কি
শান্তিপূর্ণ স্থানে যাচ্ছে।
নাকি তল্পিতল্পাসহ
সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে যাচ্ছে
নিরাপদ যুদ্ধ বন্দরে।
নাকি ঘূর্নিঝড়ের আগাম
সংকেত শুনে
আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে।
এই নিরাপদ আশ্রয়স্থল কি
ঢাকা ইউনিভার্সিটির সেন্ট্রাল লাইব্রেরি?
বি, সি, এস ক্যাডারদের আতুরঘর
নব - মানুষ তৈরির কারখানা।
মন্তব্যসমূহ
এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।