বিনুদি
- শামিম ইশতিয়াক ১৯-০৪-২০২৪

ছাদের একপাশটায় ছিল সাদা গোপালের দুটি গাছ, পাশেই নাম না জানা এক লতানো পাতার সারি,
অন্যপাশে অর্ধমৃত ডালিম বৃক্ষ ,
বেচে আছে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, প্রতিদিন বিকাল হলে এক মগ জল ছিটাতাম, প্রাণের আশায়, চিরসবুজের আশায়, অর্ধমৃত দেহে ঝুলন্ত ফলের আশায়।

ছাদের উপরের আকাশটায় রোজ সাদা মেঘের কুন্ডলী জমতো, কফির মগে চুমুক দিয়ে রোজ ডুবে যেতাম কুন্ডলীর মাঝে, খুজতাম অদৃশ্য সুখ, গায়েপরে ভাব জমাতাম মেঘেদের সাথে,
কিন্তু লাভ হতোনা, মেঘেরা বড্ড জিদ্দি, আপন করে নিবেই না তখন মন খারাপ করে নিচে তাকাতাম,
কংক্রিট জুড়ে জমতো শীতল শ্যাওলা, রোজ ভাবতাম শ্যাওলা গুলো পরিষ্কার করব, উপড়ে ফেলবো সুখের মাঝে বেআইনি দখল নেয়া দুঃখ গুলোকে,
কিন্তু তা আর হলো কই?
দখলদারীরা যে বড্ড বেহায়া।

ছাদে আমি আসি লোভ নিয়ে, বিস্মিত আকাশ সোনালী রোদ এসব দেখার লোভ নিয়ে,
বিনু দিদি বলতো আমি নাকি বড্ড লোভী, আমার নাকি চামড়ার লোভ, খোলা চুলের ঘ্রানের লোভ আর পুকুর পাড়ে বিনু দিদিকে একা পাওয়ার লোভ,
আমি শুনে হাসতাম, বোকার মত হাসতাম, বিনু দি তখন বলতো, দেখিস একদিন তুই অনেক কাদবি,
বিনুদির সেদিনের কথা সত্য হয়নি, আমি কাদিনি, এইতো গেলো সপ্তাহ বিনুদি এসেছিলো এক ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে, আমি আন্তাজ করতে পারিনি ছেলে নাকি মেয়ে তবে আমি ঠাট্টা করে বলেছিলাম, বিনুদি দেখো দেখো চোখটা আমার মত হয়েছে,
বিনুদি কিছু বলেনি, বুকের জমাট মাংসপিন্ডের উঠানামায় বুঝেছিলাম এই ছাড়লো এক দীর্ঘশ্বাস,
বিনুদির চোখ ভেজে গেছিলো নোনা জলে, অন্যপাশে তাকিয়ে শুধু বলেছিল, এবার একটা বিয়ে কর নীলাভ্র।

আমার ছাদে এখন দুটি বাতাবী লেবুর গাছ, আমি রোজপ্রাতে লেবু ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকি, বিনুদি বাতাবী লেবু ফুল বড্ড ভালোবাসতো, এগুলা নাকি সুভাস ছড়ায় এ শহরজুড়ে, তারপর নাকি সে সুভাস জমা করা যায় কাচের বোয়ামে।

একদিন অবেলায় কি যে হলো
গুড়ুগুড়ু বিষাদে আকাশ ডেকে গেল, সময় স্থির হয়ে গেলো,
আমার ছাদে নামলো উত্তাল ঝড়,
চুরমার হয়ে গেলো সাজানো বাগান,
বিনুদি সেদিন সেজেছিলা লাল বেনারসিতে, পিশির মুখে শুনেছিলাম, বিনুদি নাকি ঝড়ের ভয়ে অনেক কেদেছিল।

এখন আর বাগান নেই, মেঘেরা নেই, নেই শ্যাওলারা, তবে আছে বাতাবী লেবুর ঘ্রাণ, আর বিনুদির জন্য উতলা প্রাণ।

শামিম ইশতিয়াক
আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।