পঞ্চাশ টাকার গল্প
- Md Shamim Pramanik (Nimu) - ছোট গল্প ২০-০৪-২০২৪

কলেজে আমি আজ প্রথম এসেছি, এই কলেজের নিয়ম গুলো আমার জানার বাহিরে৷ এক পর্যায়ে বলা চলে কলেজটা বেশ মোটামুটি ভালই তবে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা অতি বেশি থাকায় কেমন জানি নোংড়া পরিবেশে জরিয়ে আছে! শুনেছিলাম মাস শেষে নাকি শুধু একবার পুরো কলেজটা পরিস্কার করা হয়, কিন্তু কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা সে বিষয়ের উপর কোন কান মাথা দিতো না৷ যাহার যেমনটা স্বভাব তাহা নিয়েই সবাই ব্যস্ত থাকতো!

অনেকটা অবাক লাগলেও হিসেব করে জানা গিয়েছিল যে এখানে প্রায় সাত হাজারের উপরেও ছাত্র ছাত্রী ভর্তিরত আছে৷ তারমধ্যে চার হাজার নিয়মিত ক্ল্যাস করে থাকে আর বাকি তিন হাজার কলেজের নিয়ম ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আড্ডা রং তামাশায় খুব মনোযোগী! ও, আমি বলতে ভুলেই গিয়েছি যে_এখনো কলেজটির নামটাই বলা হয়নি! এই কলেজের নামটা হল "জিবন বিশ্ববিদ্যালয়" ৷ নামটা জিবন নিয়ে হলেও এখানে জিবনের কোন চিহ্ন খুজে পাওয়াই অসম্ভব হয়ে দারিয়ে থাকে!

যাই হোউক্- এ সম্পর্কে এর বিস্তারিত একটুপরে জানাবো তার আগে অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করা যাক৷ এখানে প্রধান শিক্ষক ছাড়া সর্বমোট তেষট্টি জন শিক্ষক মজুত আছেন৷ ওনারা সবাই প্রতিদিনের মত নিয়মেই ক্ল্যাস করিয়ে থাকেন৷ এখানে ক্ল্যাস রুমের কোন সমস্যা নেই৷ বরং ক্ল্যাসরুমে অনেক ব্রেঞ্চ খালিই পরে থাকে৷ এক কথায় ভেবে নেওয়া যায় কলেজের প্রয়োজনীয় অন্যন্য কোন ক্ষেত্রে কোন ছাত্র কিংবা ছাত্রীর সমস্যা ত্রুটি বেশি একটা হয়না৷ শুধু সমস্যা একটাই তাদের বেশির ভাগের মধ্যে পরিবেশ ও সমাজতাত্ত্বিক শৃঙ্খলিত বিষয় গুলো ঠিকঠাক ছিলনা বা নেইও৷

একজন আরেক জনের সম্মানিত প্রচলন বিষয় গুলিও তাদের অনেকের মাঝেও ছিলনা৷ বয়সে কে বড়-কে ছোট সেটিও ভদ্রতার বাহিরে রাখা হতো৷ ছাত্র ছাত্রীদের সবার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশ করা হয়েছিল ঠিক ক্ল্যাসের অর্ধভাগে একঘন্টা বিরতি পালন করতে হবে৷ আর এই বিরতি পেয়েই দেখা যেত খোলা মাঠে চার পাঁচজন মিলে বৈঠকে বসে যেত নানান অসামাজিক কর্মের সাথে৷ কেউবা কলেজের গোপন কোন এক জায়গায় মেয়ে ও ছেলেরা উভয়েই অবহেলিত অব্যবহারিত কুকর্মে লিপ্ত থাকতো৷ আবার কিছু মেয়েদেরকে জোর পূর্বক লাঞ্ছনা মূলক কাজেও হিংস্রক চেহারায় ব্যস্ত থাকা দেখা যেত!

ঠিক এভাবেই ক্ল্যাসের বিরতির টাইমটিও এক সময় সবাই ভুলে গিয়ে শেষ বেলায় এসে বই খাতা নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে চলে আসতো বাড়ির দিকে৷ বলতে গেলে আরও খারাপ লাগে যে- বাড়িতে ফিরেও ওরা তাদের মা বাবার সাথে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহারে আবদ্ধ থাকতো! আর সেই ব্যবহার গুলির জন্য অনেক সময় তাদের মা বাবা সন্তান ভেবে মুখ বুঝে সহ্য করে নিতো এবং অসহ্যের পরেও তাহা সহ্যে মেনে নিতো৷ সারাদিনের কঠোর পরিশ্রমে বাবা মা সন্তানদের মঙ্গলের জন্য তাদের জিবনকে উৎস্বর্গ করে যাচ্ছেন! শুধু তাদের এতটুকু আশা ভরসা হৃদয়ে গাঁথা থাকতো যে_ "আমার সন্তান একদিন এই দুঃখের সংসারে লেখাপড়া করে সম্মান ফিরে আনবেই" আর সে সবের নমুনা ওদের মাঝে বিন্দুমাত্র ছিলনা অথবা এতটুকুও নেই৷

মা সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা তৈরি করে টেবিলের উপর রেখে দিয়ে ডাকতে গেলেন আদরের পাপিয়াকে৷ পাপিয়া কোন রকম ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে স্কুল ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বাবার সামনে হাজির হয়েছিল৷ প্রতিদিন তার স্কুল খরচের পঞ্চাশ টাকার জন্য৷ বাবা চাকরি করতেন সামান্য অফিস পিয়নের৷ মাস শেষে বেতন পেত খুব অল্প, সেটা দিয়ে মেয়ের পড়ালেখা সহ সংসার চলতো অনেক কষ্টেই! এত কষ্টের মাঝেও মেয়ের জন্য ঠিকই তিনি প্রতিদিনের পঞ্চাশ টাকা কাছেই রেখে দিতেন৷

আজ পাপিয়ার মায়ের শ্বাসরোগের ঔষধ আনতে হবে, রাতের ঔষধ না খেলে হয়তো তার শ্বাস কষ্ট বেড়ে যেতে পারে! এটাই ভেবে পাপিয়ার বাবা অন্য কারো কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিয়ে ছিলেন৷ অন্য দিকে পাপিয়া কোন কিছু না বুঝতে চেয়ে সরাসরি তার বাবাকে বললেন_ "আজ যদি তুমি টাকা না দাও তবে আমি এখন থেকে আর পড়ালেখা করবো না" বাবার বাধ্য হতে হয়েছিল মেয়ের স্নেহে্র টানে, পাপিয়াকে পঞ্চাশ টাকা দিতেই হয়েছিল৷ পাপিয়া টাকাটা পেয়ে যথেষ্ট খুশি মনে চলে গিয়েছিল কলেজ পথে৷ বাবা দির্ঘ্যশ্বাস ফেলে অফিস মুখি হয়েছিলেন৷

আজ বৃহস্পতিবার, পাপিয়ার বাবার অফিস ছিল আধা বেলা৷ অফিস শেষে তিনি পাপিয়ার মায়ের জন্য কিছু ঔষধ নিয়ে ফিরছিলেন পাপিয়ার কলেজের পাশ্ব দিয়ে৷ তখন ঠিক দুপুর দু'টোর মত হবে, পাপিয়ার বাবা দেখতে পেলেন- কলেজের এক কোণায় কিছু ছেলেমেয়ে এক সাথে বসে কি যেন বোতলে করে পান করছিল এবং হাতে হয়তো সিগারেট হবে তাহাই সেবন করছিল৷ একটু সামনে গিয়ে দেখতে পেলেন তারই মেয়ে পাপিয়াকে, অন্য সবার সাথে একে অপরের গায়ের সাথে ঢোলাঢুলি আর আবল তাবল অভদ্র কতসব বাজে ভাষায় বকাবকি করতেছিল!

পাপিয়ার বাবার নিকট নিজের প্রতি অনেক ঘৃণা এসে জন্ম নিয়েছিল৷ ভাবতে লাগলেন- কেমন বাবা আমি? একটি মাত্র মেয়েকেই ঠিকমত মানুষ করতে পারলাম না? সে সময় অনেক কষ্ট আর দুঃখ করেছিলেন তিনি আর বিরবির করে একএকা বলতে ছিলেন- "এ কেমন মেয়েকে আমি জন্ম দিয়েছিলাম, যে মায়ের ঔষধ কেনার টাকা গুলি দিয়ে সে নেশায় উড়িয়ে দিচ্ছে?" ওর বাবা ওর ঐ নেশার আড্ডায় দিকে না গিয়ে উল্টো আবার বাজারে গিয়েছিলেন৷ এবং বাজার গিয়ে পরিচিত একটি দোকান থেকে এক বোতল বিষ কিনে নিয়েছিলেন৷

বোতলটা পকেটে রেখেই মেয়ের ঐ জায়গায় উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তখনও পাপিয়ার বাবা লক্ষ্য করেছিলেন যে_ সে নেশায় খুব আক্রান্ত ছিল, এমন নেশায় লিপ্ত ছিল যে- সে তার বাবার সম্পর্কের ব্যবধানটিও মন থেকে হারিয়ে ফেলেছিল! তিনিও বাবা হয়ে পাপিয়াকে অন্য কোন কিছু জিঙ্গেস না করেই সরাসরি বিষের বোতলটা খুলে ওর হাতে দিয়ে দিয়েছিল এবং বলেছিল_ "এই নাও এই বোতলে যাহা আছে তাহা যদি তুমি পান করতে পার তবে আরও ভিষণ নেশায় তুমি ডুবে থাকতে পারবে৷

মাতাল মনে হুট করে বোতলটা বাবার হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিল পাপিয়া, সে আর অন্য কাউকে না দিয়ে নিজেই পুরো বোতলটার বিষ মাতাল বেশে খেয়ে নিয়েছিল! এদিকে পাপিয়ার বাবা তার বোতলের বিষ খাওয়া শেষ করা দেখে সোজা পাপিয়াকে ঐ জায়গায় রেখে বাড়িতে চলে এসেছিলেন অত্যন্ত হাসি মুখে৷ বাড়িতে এসে পাপিয়ার মাকে ডাক দিয়েছিলেন এবং তাহার শ্বাসরোগের ঔষধ গুলি তাহার হাতে দিয়ে দিয়েছিলেন৷ আর ভাঙাভাঙা গলায় বলতেছিলেন- "ওগো শোনো,তুমি যাহার জন্য আজ এই শ্বাসরোগটি বাধিয়েছো- তার জন্য আজ থেকে তোমার শ্বাস কষ্ট ভোগ করতেও হবেনা৷ আজ থেকে তুমিও এই কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে গেলে"
______

(অনুরোধ করছি, এই কলেজের মত আর কোন কলেজ এমন অসামাজিক কর্মে জরিত নাহি থাকুক এই কামনাই করছি৷ এবং পাপিয়া আর তার বাবার মত আচরণটিও যেন অন্য কোন পরিবারের মনমানোশিকতায় না আসুক সেই অনুরোধ টুকুও করছি৷
"এই গল্পটি কোন সত্য কাহিনীর সাথে তেমন কোন মিল নেই"
অতএব কাহারো মনে যদিও সামান্য একটু খারাপ লেগে থাকে তবে দয়াকরে ক্ষমা করবেন৷)
ধন্যবাদ সবাইকে

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।