অবশেষে কোহিনূর ফিরে আসে মায়ের কাছে
- Md Shamim Pramanik (Nimu) - ধারাবাহিক নাটক ২৮-০৩-২০২৪

(প্রথম কলি, প্রথম খণ্ড৷)


(নাটকটিতে ১৯৮৮ইং সালের কিছু সংখ্যক নারীরা যেভাবে সমাজে অবহেলিত হয়েছিলেন তাঁরই কিছু কাল্পনিক চরিত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷ সম্পূর্ণ নাটকটির ভাষা গুলো ব্যবহার করা হয়েছে, উত্তরবঙ্গ রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক ভাষায়৷)


চার শতক জমির উপর একটি মাত্রই কোহিনূরের কুড়েঘর৷ কোহিনূরের বাবা রিকশা চালিয়ে তাঁর কিছু দৈনিক উপার্জিত অর্থ দ্বারা এই চার শতক জমি কিনেছিল অন্যের কাছ থেকে৷ এর আগে এই চার শতক জমির উপর কুড়েঘরটি অস্থায়ী ছিল৷ ভাঙা সেই সংসারটায় তখন ছিল মাত্র তিনজন৷ কোহিনূরের বাবা মা ও কোহিনূর৷ এছাড়া কোহিনূরের মায়ের গর্ভে ছিল ছয় মাস বয়সের আরেকটি সন্তান৷ হঠাৎ কোনো একদিন কোহিনূরের বাবা শহরে রিকশা চালাতে গিয়ে একটি চলিত বাসের সাথে এক্সিডেন্ট করে তিনি দুর্ঘটনা মলুক ভাবে মারা যান৷ এরপর থেকেই সেই সংসারটা চলেছিল অনেক কষ্টের উপর দিয়ে৷ কখনো তাঁরা দিনে খেতো তো রাতের খাওয়াটি আর হতো না৷ এমুনি অভাবের মধ্য দিয়ে চলার মাঝেও কয়েক মাস পর কোহিনূরের মা একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান গর্ভপাত করেন৷ ছেলে সন্তানটির সুন্দর মুখের দিকে চেয়ে মা তাঁর নামটি রাখেন মানিক৷ মা মনে করেছিলেন যেন তাঁর ঘরে মানিক রত্নই ফিরে এসেছে, এবার আর কোন অভাব থাকবে না তাঁর সংসারে৷ কোহিনূর ভাই পাওয়াতে তাঁর মুখেও ছিল অনেক খুশিখুশির ভাব৷ তবে কী আর সেই সংসারের অভাব অনটনটা দূর হয়ে গিয়েছিল! হয় নি, অভাব আরও দিনদিন বেড়েই চলেছিল৷
কোহিনূরের বয়স তখন চলছিল ছয় বছর৷ ছোট ভাইটির বয়স মাত্র কয়েক দিন৷ ঘরে এক ছটাক চালও ছিল না, কোহিনূর খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল, তাঁর গর্ভপাত মা'কে সে কোন কিছু না খাওয়াতে পারলে তো তাঁর ছোট ভাইটিরও ক্ষুধা লাগতে পারে! কোহিনূর তখনই মনস্থ করলো ওপাড়ায় গিয়ে দেখি কাহারও কাছে কিছু চাল ডাল পাওয়া যায় কিনা৷ ওপাড়ার আবুল মামা, উনি মোটামুটি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তি ছিলেন৷ ওঁনার আচার আচরণ খুবই ভদ্রোচিত৷ পাড়ার সকল ব্যক্তিদের চেয়ে উনি একটু যথেষ্টই ভালো ব্যক্তি ছিলেন৷ কোহিনূরকে দেখলেই উনি তাঁর পাঞ্জাবীর পকেট থেকে এক দুই টাকা বের করে কোহিনূরের হাতে দিয়ে দিতেন৷ ঐদিন দুপুর বেলা কোহিনূর ওপাড়ায় যাবার মাঝ পথেই সেই আবুল মামার সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়৷ আবুল মামার সামনাসামনি পড়ায় কোহিনূর ওঁনাকে সালাম দিয়ে বলল_


কোহিনূর: আসছালামু আলাইকুম, মামা৷


আবুল: ওয়া আলাইকুমস্ সালাম, এতো অদের-(রোদ) মধ্যে কোটে যাস্ গো মা?


কোহিনূর তাঁর মুখ চোখ ফ্যাকাসে করে বলল_


কোহিনূর: মামা, এমনি না- এ্যানা আসলুম ঘুরবার৷


আবুল মামা কোহিনূরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন, কোহিনূরের মুখটি একদম শুকনো শুকনো লাগছিল৷ তিনি ওঁর মুখটি দেখে তখনই বুঝতে পেয়েছিলেন যে, হয়তো কোহিনূরের পেটে তখনও খাবার পড়ে নি৷ তাই তিনি আর বেশি কথা না বাড়িয়ে কোহিনূরকে বললেন_


আবুল: মুখ কনা এতো শুকনা শুকনা নাকছে ক্যা? সত্য কথা কনা কী মোক কোয়া যায়না এ্যানা? কী হছে সেটা কো তো আগোত? বিয়ান বেলাত খাছিলু কী কিছু?


কোহিনূর: না মামা, মুই একনো কিছুই খাম নাই৷


আবুল: হায় হায় কস্ কী এ্যাগলা, এতো বেলা হছে একনো ক্যা কিছুই খাইস্ নাই? আয় তো দেকম মোর সাথে, দেকম তোর মামী কিছু আন্দিছে নাকি৷


আবুল মামা কোহিনূরকে এই কথাটি বলেই কোহিনূরের একটি হাত ধরে তাঁর ঘরের দিকে টেনে নিয়ে এসেছিলেন৷


আবুল: কোটে গো শরিফার মা'উ, এদিকে এ্যানা আসো তো তাড়াতাড়ি৷


শরিফার মা-(হাসনা বানু) তাঁর স্বামীর ওভাবে চিৎকার করে ডাক দিয়েছিল শুনে তিনি ঘর থেকে দৌড়ে আঙিনায় বাহির হয়ে এসে তাঁর স্বামীকে সামান্য একটু বড় গলায় বললেন_


হাসনা: কী হসে গো তোমার? এতো জোরে জোরে ডাকতেছেন ক্যা মোক্?


আবুল: আর কন না গো, এই দ্যাকো তোমার আদরের ভাগনী কনা এতো বেলা হছে একনো তাও কিছুই খায় নাই তাঁই৷ তোমার ভাতের হাড়িত কী কোনো ভাতটাত আছে এ্যানা? থাকলে অক এ্যানা দেও তো৷


হাসনা: কী কন এ্যাগলা! একনো ক্যা উঁই ভাত খায় নাই? কন কী গো?


আবুল: এতো কথা বাদ দেও তো একন, আগে অক এ্যানা ভাতটাত খাবার দেও৷


স্বামীর একথাটি শুনেই হাসনা বানু কোহিনূরকে সঙ্গে করে নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন৷


হাসনা: ক্যা রে মা একনো ক্যা তোর মা'য়ে কিচ্ছু আন্দে নাই? ঘরোত কী এ্যানাও চাউল নাই?


কোহিনূর: মা'য় আন্দিবে কী দিয়া মামী, ঘরোত তো এ্যানা কিছুই নাই! মানিক উঁই খালি পেটোত খিদা নিয়া কাঁন্দে৷ মোক আর ভালো নাগে না এ্যাগলা মামী!


হাসনা: আহারে, তোর বাপটা যদিল এতোদিনে বাঁচি থাকতো তালে কী আর তোর ঘরে কপালোত এতো দুঃখু থাকলো হোয়৷ তাড়াতাড়ি খায়া নে তো দেকম, মোর কাছে থাকি দুই পোয়া চাউল আর কয়টা আলু আছিলো তাও নিয়া যাস হ্যানে?


কোহিনূর: আচ্ছা, ওঁ মামী চাউলের সাথোত দুই একনা মোইচও দেন তো?


হাসনা: আচ্ছা দেইম হ্যানে, এখন ভাত কনা তাড়াতাড়ি খায়া নে৷
_______________
চলবে.......
১৩/১২/২০১৯ইং৷

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।