যে বার আমার জলবসন্ত হয়ে ছিলো
- মাহমুদ রিয়াদ পলাশ - শেষ শ্রাবণের গল্প ১৯-০৪-২০২৪

নিতান্ত সাধারণ দিন বলতে
যেমন দিনগুলো থাকে, এরকম নয়।
একদম স্থির অচঞ্চল,
এক ছাদ ছায়ার সাথে শুয়ে থাকা
পুরোনো নারকেল বিথির পাতার মতো
অধোমুখে সন্ধ্যা উগরানো, ও রকম দিন, নয়।

না না, ঠিক দিনও নয়
সুনসান সন্ধ্যাও নয়, একঠায় ল্যাম্পপোস্ট
হেলান দেয়া মধ্যরাতও নয়

এমন দিন যেনো সুর্যের উপর
একপুকুর জমাট রক্ত
তপ্ত অমাবস্যার ঘামে টুপটাপ
গলে গলে প্রবাহিত হলো তোমাদের শয্যার তলদেশে।

আমার খুব মনে আছে,
রাতের সলতের আলোয় আমার শিশুদেহের
ছায়া খুব দুলছিলো আমার মায়ের
শুকনো গালের উপর,বাবা তখনো ফেরেনি
দিনের একভাড় ক্লেদ নিয়ে
আর সড়কের উপর কিছু হয়েছিলো, ভয়ংকর।

ও রকমই একটা দিন
আমার সেবার জলবসন্ত হয়েছিলো।
গা ভর্তি গুটি গুটি বিস্ফোরণের তীব্রদাহ
এইটুকু আমার ছোট্টদেহটার
সারাদিন কেটেছিল একগাদা নিমপাতা বিছানায়,
পরদিন পুরোনো সুর্য ভেংগে ডিমের কুসুমের মতো
গলে পড়েছিলো ভষ্মের গাদায়।

তোমাদের নতুন দিন আর আমাদের দেখা হয়নি
রাত না পোহাতেই
আমার গায়ে ফোটা যন্ত্রণার ফোস্কা থেকে
গড়ানো জল মিশেগিয়েছিলো
আমারই ক্ষতবিক্ষত দেহের রক্তে,
নিমের কুটিকুটি হওয়া পাতাদের ধারাপাত বেয়ে
আমার ও আমার মায়ের রক্ত মিশেছিলো
নগরের চারধার ঘেরা নদে
ওখানে পচিশহাজার মানুষের অন্তিম জল
কালভার্ট ফুঁড়ে ছুটে এসেছিল
মহাকাল উপড়ে ফেলে দেবার আক্রোশে,

তোমাদের নতুন সুর্য উঠেছিল, সেই সকালে
শহরের সবকটা গলির পরোটার দোকান
পালিয়ে গিয়েছিলো বাক্স তোরংগ সহ,
এমনি অন্য রকম দিনে
আমার রক্তাক্ত মৃত শৈশব টুকরো টুকরো ছিঁড়ে
আকাশে ছুড়ে উৎসব করেছিলো
একদল খয়েরি কুকুর,
আমার মগজ পিছমোড়া করে বেধে
চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছিলো
গুটিকয় আলখেল্লা ঢাকা নীলমাছি।

আমার যেবার জল বসন্ত হয়েছিলো
সে রকম দিনে
প্রতিটা বিষন্ন কিম্বা নির্জীব বিকেলে
আমাদের মৃতদেহ খুবলে খেতো,শকুনের মতো
সাদাবুক খয়েরী পীঠের পাকিস্তানী জানোয়ার,
সারারাত বেয়নেটের মতো দাঁত দেখিয়ে
চড়ে বেড়াতো এই ভুমে।

#মাহমুদ_রিয়াদ_পলাশ
২৫.০৩.২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।