খোদা নেওয়াজের মার্চ
- মাহমুদ রিয়াদ পলাশ - তারা শংকরের কবি ২৪-০৪-২০২৪

আলগোছেই নেমেছিলো সন্ধ্যা,
প্রতিদিন যেমন, আধোছায়ায় ধুলোকাদায়
গল্পগুজব করতে করতে
চুপি চুপি হেঁটে এসেছিলো নির্লিপ্ত আঁধারের অন্তঃপুরে

একটু দূরে, জনপদ-পোড়া চিমনীর সাদা ধোঁয়া
কালো জিহবায় চেটেপুটে খায় আনকোরা আঁধার,
এ কেমন বজ্র হটাৎ গর্জে উঠে
কোত্থেকে আসে অমন আলোর ঝলক নরকের,
এইবুঝি আসে ধুপধুপ আস্ফালনে দাঁতে বেয়নেট পরা
ইয়াহিয়ার শুয়োর মুখোর দল।

তার বুক কাঁপে, হাতের কনুই গলে
ভয়ের পলেস্তারা ঝুরঝুর ঝরে পড়ে,
রাস্তায় থরে থরে উপুড় পরে থাকা লাশের ওপর থেকে
একটা ল্যাম্পপোস্ট লাফিয়ে উঠে পালাতে চায়,
হলুদ বিষন্ন তার বাতি, চোখ বোজার আগে
শেষ আতংকটুকু ছুড়ে দেয়, পালা
খোদা নেওয়াজ- পালা
তোর বোধিবৃক্ষ ধরে নিয়ে গেছে হানাদার
তোর অবোধ শিশুদের নিয়ে এক লহমায় পালা।

খোদা নেওয়াজ পালায় উর্ধশ্বাসে
আলগোছে নামা বিশ্বাসঘাতক সন্ধ্যা থেকে দূরে
ঘর ছেড়ে, পরিপাটি বিছানা, সুখের নিয়ম ছেড়ে,
তাহাজ্জুদের প্রার্থনা ছেড়ে, প্রতিবেশী ছেড়ে
সবুজ চাঁদতারা ছাপা বেতনের চেকবই ছেড়ে
এ গলি ও গলি,
কালো ছিপছিপে এক হাতে
কাঁথায় জড়ানো দুই পঙতির ভবিষ্যৎ
বাম হাতে আকড়ে ধরে এক টুকরো তরুণী সংসার।

কোথায় পালায় খোদা নেওয়াজ?
পথ ভেসে গেছে পঁচিশ হাজার অন্তিম আর্তনাদে
সামনে লালনের সাতকোটি দোতারার টংকার
মাথার ওপর ক্যূজ্বটিকার মতো গলা টিপে ধরা অন্ধকার
পেছনে ছুটে আসে জলপাই শ্বাপদ।

পালায় খোদা নেওয়াজ, পথের ধুলোর মেঘ
পথ আগলায়, আর কতো পালানো যায়?
হাঁপড়ের মতো ফুসফুস ফুলে ওঠে নগরের আকাশের ওপর
দাসত্বের পালিশ করা জুতো ছিটকে লুকায়
চষা জমির কাদার গহীনে।
প্রপিতামহদের প্রাচীন অশ্বত্থের কোটরে
সংসার ভবিষ্যৎ আলগোছে জমা রেখে
অদ্ভুত হুংকারে গিলে খায় সমস্ত অন্ধকার,
দুহাতে খামচে ধরে একঝটকায় ভোর টেনে নামায়।

একটা বাঁশের লাঠি আঁকড়ে উঠে আসে ছিপছিপে কালো
খোদা নেওয়াজ, কালিগঞ্জের সড়কে
ঘাড় কাত করে দাঁড়ায়, শরীরের সমস্ত রক্ত একটা
বুলেট বানিয়ে ছোড়ে, আয় কুত্তার বাচ্চা
এই দেশ আমার, এই দেশ আর পাকিস্তান না।

২৫.০৩.২০১৯
#মাহমুদ_রিয়াদ_পলাশ

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।