বিবর্তন
- শেখ রবজেল হোসেন ২৩-০৪-২০২৪

বড় সাধের বাড়িটা আমার,
তিলে তিলে গড়ে তোলা একটা প্রাসাদ;
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিলাম সেদিন,
ইঁটগুলো কেমন পোড়ানো হয়েছিলো।
পিকেট দুই নাম্বার দিতে পারে,
তাই ইঁট ভাঁটায় নিজে দাঁড়িয়ে গাড়ি ভরেছিলাম;
মোটা বালিতে ফিলিং মেশানো ছিলো,
তাইতো সে বালিও ফেরত দিয়েছিলাম।
ভালো সিমেন্ট নিতে ঘুরেছি কত দোকানে খুঁজে খুঁজে দামী সিমেন্ট কিনেছিলাম;
আর মিস্ত্রির কথা তো না বললেই না,
কাছে না থাকলে ওরা বড্ড কাজ ফাঁকি দিতো।
টাকার যোগাড় করতেও অনেক কষ্ট হয়েছিলো,
নিজের জমানো টাকা সব শেষ করেছি বাড়ির জন্য;
বাজারের সেরা কাঠে তৈরী দরজাগুলো ঝকঝক করছে বাড়ির প্রতিটি কামরায়।
অনেক খুঁজে কিনেছিলাম বিদেশী টাইলস,
রান্নাঘর আর ওয়াশরুমে ইতালী ফিটিংস;
কত কষ্ট করে আনা তুর্কি কার্পেট আমার,
আধুনিক গ্রীলে সাজিয়েছি সবগুলো বারান্দা।
ড্রইংরুম সাজিয়েছিলাম ইন্টারিওর ডিজাইনার দিয়ে,
পর্দার রঙে সোফা মিলিয়েছি সারা বাজার ঘুরে।
তার পর আমার গড়া সুখের পৃথিবীতে চেয়েছিনু একটু শান্তির ঘুম ঘুমাতে;
হঠাৎ বিধাতার ডাক এলো আমার কাছে,
তাই বলে রাখবে না আমার স্বপ্নের ঘরে?
আমাকে আর কিছুটা দিন থাকতে দাও, এতো নিষ্ঠুর হইও না তোমরা;
আমার হাতে গড়া ঘরে একটু ঘুমাতে দাও,
আমাকে নরম তুলতুলে বিছানায় একটু শুতে দাও।
আমার শরীরে ভীষণ ব্যথা পাচ্ছি,
এতোটা শক্ত বিছানা কেনো দিলে আমায়? আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে,
কাফনের বাঁধনটা থাই জানালার মত খুলে দাও।
আমাকে ঘরের বাইরে কেনো রাখলে? এসি রুমে নাও,গরমে অতিষ্ঠ আমি;
তোমরা কোথায়? কাউকে চিনতে পারছি না কেনো?
আমার কান্না তোমরা শুনতে পাচ্ছো না?
আমার চারপাশে তোমরা নেই কেনো?
আমার কথা কি তোমরা শুনবে না?
এত্তো কিছু আমার, তোমরা সহজেই ভুলে গেলে আমায়?
আমাকে রাখবে না তোমাদের সাথে?
আজ কি আমি অযোগ্য ও ঘরে ঘুমাবার?
আমাকে আমার কষ্টে গড়া ঘরে শুতে দাও,
আর একটি রাত,একটি বার আমাকে ঘুমাতে দাও।
দেবে না? আমার প্রতি এতো নিষ্ঠুর তোমরা?
মনে রেখো, তোমরাও পাবে এমনই বিবর্তন।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।