বেকার
- শেখ রবজেল হোসেন ২৯-০৩-২০২৪

রাতের আঁধারটা আজ আরও বেশী কালো মনে হয়,
সেই সকালের সোনা রোদে বেরিয়েছিলাম একটা চাকুরির খোঁজে।
সারাটা দিন কেটে গেছে এখানে ওখানে ঘুরে,
কোন কাজই জোটাতে পারলাম না।
ভাড়া বাড়িটায় ভাতের হাঁড়িতে পান্তার পানি আর পাথরের কুচি পড়ে আছে,
ওটা দুই দিন ধরে ওখানেই পড়ে আছে,চুলোয়ই ওঠেনি।
দোকানী সাদেক মামাও বলে দিয়েছে,বাপু তোমাকে আর বাঁকীতে সদাই পাতি দিতে পারবো না।
আজ দিনভর চায়ের দোকানীর চোখ রাঙানী উপেক্ষা করে শুধু পানিই পেটে চালান দিয়েছি।
সরকারি চাকুরির বয়স পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই,
এখন একটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছি।
অবশেষে ক্লান্ত হয়ে এই মাঝ রাতে বুড়িগঙ্গায় এসে বসে আছি।
কেউ বুঝতে চায়নি যদি ঘুষ দিয়েই চাকুরি নেবো তবে সারাজীবন কিভাবে সৎ থাকবো?
বাড়ি থেকেও তাড়িয়েছে কয়েক মাস হয়ে গেলো,
আমি নাকি নিকম্মা,অযথাই জমিয়েছি বড় বড় পাশের সার্টিফিকেট।
সবাই চলে গেছে আমাকে ছেড়ে, আমি একা পড়ে আছি;
শুধু সাথে আছে আমার জীবনের সত্যায়িত অনুলিপি হয়ে এই কাগজগুলো।
কেউ বোঝেনা,বোঝেনি কখনও ওগুলো ফেলতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়।
ছেঁড়া গামছায় জড়ানো গরম মুড়ির স্বাদ পাইনি কতদিন!
মায়ের হাতের রূপালী ইলিশের ঝোলের স্বাদ ভুলেই গেছি।
মাঝে মাঝে অনামিকা চিকেন গ্রীল খাওয়াতো,
সেও আজ আমায় ছেড়ে চলে গেছে সুদূর আমেরিকায়।
টিনের চালার ভাড়া ঘরটাতে উনুন জ্বালাতেও কষ্ট হয়,
ভেজা স্যাতস্যেতে খড় কাঠিও জ্বলতে চায় না আজ।
আর কেউ-ই আমার সাথে থাকতে চায় না,জানি থাকবেও না;
তাই এসব কাগজগুলোও আজ আর প্রয়োজন নেই আমার।
আজ এই বুড়িগঙ্গার পানিতে ভাসিয়ে দেবো আমার সার্টিফিকেটের বোঝা,
আমি আর এর ভার বইতে পারছি না,আমি স্বস্তি চাই।
কেউ বুঝবেনা, কেউ খুঁজবেনা,কখন কোনদিন;
আজ নৌকার মাঝির সাথে ভাটিয়ালি গানের সুরে হাল ধরবো।
ভেসে যাবো দুর হতে আরও দুরে, শুধু আমি একা;
কেউ খুঁজবেনা আমায়,কেউ খুঁজবেনা কখনও।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।