আমি নুসরাত বলছি
- শেখ রবজেল হোসেন ২০-০৪-২০২৪

মা... আমি নুসরাত জাহান রাফি বলছি,
হ্যাঁ মা,তোমার আদরের নুসরাত জাহান রাফি মা।
মা... তোমার তোমার খুব কষ্ট হয়, তাই না মা?
আমার জন্মের রাতে তুমি অনেক কেঁদেছিলে।
আমি মেয়ে হয়ে জন্মেছিলাম সে জন্য?
নাকি আমার মুখটা দেখে অতি আনন্দে কেঁদেছিলে?
একজন নারী তার সন্তানের অস্তিত্ব তিলতিল করে সযত্নে লালন করে নিজের আঙিনায়,
তারপর একদিন চরম প্রসব বেদনায় কষ্টের পরিসমাপ্তি ঘটায়।
সন্তান, হোক সে সাদা বা কালো ; ছেলে বা মেয়ে তাতে মায়ের কোন কষ্ট থাকে না,
তুমিও তেমনি আমার মুখ দেখে অনেক খুশী হয়েছিলে।
কিন্তু তখনও জানতে না একদিন আবার তোমাকে কাঁদিয়ে আমি চলে যাবো,
তোমার আগেই পৃথিবীর মায়া আমাকে বিদায় জানাবে।
আমাকে তো তোমার মতই একজন আদর্শ নারী করে গড়তে চেয়েছিলে মা,
তাইতো বোরখা পরিয়ে হেজাবে ঢেকে পাঠিয়েছিলে ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসায়।
সেখানেই তো ছিলো বাবার মত প্রিন্সিপাল সিরাজুদ্দৌলা,
যার কাছে দিয়েছিলে আমাকে আদর্শ নারীর শিক্ষা নিতে।
আর সেই-ই কিনা খুবলে খেতে চেয়েছিলো আমার শরীরটা !
কি করে তার ওই ঘৃন্য প্রস্তাবে আমি সাড়া দিই বলো?
আমিতো এই হালফ্যাশনের যুগেও বোরখা আবৃত একজন আদর্শ নারী হতে চেয়েছিলাম।
আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম শত হায়েনাদের নৃশংস থাবা থেকে,
তাইতো ওদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলাম।
কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না।
মা.. তুমি আমাকে একটু ধরো,আমি হাঁপিয়ে উঠেছি;
চারতলার ছাদে উঠেই বুকটা ধড়ফড় করছিলো,
ওরা নাকি আমার বান্ধবী নিশাতকে এখানেই মারছিলো।
নিশাতের বিপদের কথা শুনে আমি স্থির থাকতে পারিনি,
আমার বান্ধবী নিশাতকে ওরা মেরে ফেলবে আর আমি চুপ করে থাকতে পারি?
কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি আসলে ওরা আমাকে মিথ্যে বলে ছাদের উপরে নিয়ে এসেছিলো,
আসলে নিশাতের কিছুই হয়নি।
আমার মতো দুটো মেয়েও ছিলো ওখানে,
আর একজন আমার ভাইয়ের মত কোরআনের হাফেজও ছিলো।
ওরা সবাই মিলে আমারই হেজাব খুলে আমার হাতদুটো বাঁধলো মা,
মা, আমি তোমার নুসরাত জাহান রাফি মা।
আমি একটা মেয়ে নিজেকে বাঁচাতে ওদের দশ বারো জনের সাথে কি পারি?
কি করে পারি বলো?আমিতো পুরুষের চোখে নরম মাংসের লোভাতুর নারী।
আর ওরা দশেরও অধিক পচা রক্ত মাংসের মিশ্রণে সব অমানুষ,
একটা মেয়েকে মারতে একসাথে এতগুলো নরকের কীট।
বড় অন্যায় করেছে ওরা ওদের মাতৃজঠরের সাথে,
হয়তো ওদের পূনর্জন্ম হলে ওদের জন্মদাত্রীও ওদের ভ্রুণ নিতে চাইবে না।
তার চেয়ে আজীবন বন্ধ্যাত্বই ভালো মনে করবে।
ওই অমানুষগুলো মিলে হায়েনা সিরাজুদ্দৌলার হুকুম তামিল করলো,
লুকিয়ে রাখা কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিলো তোমার আদরের নুসরাতের শরীরে।
ওরা ছিঁড়ে খুঁড়ে খেতে পারেনি আমার শরীরটাকে,
তাইতো হিংসায় জ্বলে পুড়ে আমাকেও জ্বালিয়ে দিলো সে আগুনে।
ভালোই হয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে বাঁচাতে পারেনি,
বেঁচে থাকলে হাজারো পুরুষের লোভাতুর দৃষ্টি আমাকে পুড়িয়ে মারতো আজীবন।
মা তোমার অনেক কষ্ট হয় আমার জন্য, তাই না?
যদি আবার আমার জন্ম হয় তবে তোমার কোলে মেয়ে হয়ে আসতে চাই না মা,
আমি আর তোমাকে কাঁদাতে চাইনা।
দেখবো সিরাজুদ্দৌলার মত নরপশুরা কিভাবে বাঁচে?
নারী দেহের অভাবে ওরা পুরুষদেরও নষ্ট করতে ছাড়ে না।
আমি আসবো সিরাজুদ্দৌলার গর্ভে আর কারও শুক্রায়ণে,
তখন বুঝবে সেদিন, ওকে জন্ম দিতে ওর মায়ের কেমন কষ্ট হয়েছিলো।
যেদিন ওরা পিতৃজঠর হতে নিষিক্ত হয়েছিলো ওদের মায়ের জঠরে,
ওদের মা কতোটা কষ্ট সহ্য করে ওদের গর্ভে ধারণ করেছিলো তা ওরা বুঝবে।
আমি নুসরাত জাহান রাফি মা,
তোমার নুসরাত; পড়তাম ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসায়।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।