দুরত্ব
- শেখ রবজেল হোসেন ১৯-০৪-২০২৪

অনামিকা..
কেমন আছো তুমি?
শুনেছি বছর দুয়েক হলো তোমার স্বামী চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে,
তোমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে একেবারে চিরতরে।
তোমার বাবা কি পারেনি ওকে ধরে রাখতে?
তোমার বাবারতো অনেক ধন সম্পত্তি আর অনেক ক্ষমতা ছিলো।
প্রাচুর্যের অহংকারে তোমাকে আমার সাথে মিশতে দেয়নি,
খুব গরীব ছিলাম বলে তোমাদের বৈঠকখানা অবধি যাওয়ার সুযোগ হতো আমার।
একসাথে পড়তাম বলেই ওইটুকু যেতে পারতাম,
তা না হলে,তোমাদের বাড়ির আশেপাশে আমাকে দেখলে চোর ভেবে তাড়া দিয়ে বসতো।
খালি পায়ে আর ময়লা পুরোনো পোশাকে আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে তোমার বাবার খুব কষ্ট হতো,
তুমি আমাকে স্কুল থেকে মাঝে মাঝে বাড়ি নিয়ে গিয়ে নারকেলের নাড়ু খাওয়াতে।
তোমার বাবার রক্তচক্ষু দেখে খুবই ভয় হতো আমার,
তুমি আমার হাত ধরে টানতে তোমার মায়ের কাছে নেয়ার জন্য।
আমার পা চলতো না তোমার বাবার মুখটা মনে হলে,
অবশেষে টেনেটুনে বৈঠকখানা অবধিই নিতে পারতে।
তোমার বাবা কখনোই আমাকে ভেতরে যাবার অনুমতি দেয়নি,
বড়জোড় বৈঠকখানায় চৌকিটার এক কোণে বসতে দিতো।
দরজার ফাঁক দিয়ে কতো দেখেছি তুমি জিলেপি খাচ্ছো,
জিলেপির মচমচে আওয়াজটা কানে এলেই মুখটা রসে ভিজে যেতো।
আমার জন্যও দুটো জিলেপি নিয়ে বাইরে আসতে চাইতে,
আমারও ভীষণ পছন্দ ছিলো গরম গরম গুড়ের জিলেপি।
তোমাকে আটকে দিতো তোমার মা,
জানো এখন আমি আর জিলেপি খাই না;
ডাক্তার বারন করেছে।
পরে যখন তুমি বাইরে আসতে,
তখন তোমার জামার ভিতর লুকিয়ে দুটো শুকনো নাড়ু নিয়ে আসতে।
তুমি আমাকে কখনোই বুঝতে দিতে না,
তোমার হাতেও তখন শুকনো নাড়ুই থাকতো।
তোমাকে ভীষণ পছন্দ হতো আমার,
কিন্তু বলার সাহস হয়নি কখনও,
তুমিও আমাকে ভালবাসতে তা তোমার বিয়ের আগের দিনই জানতে পারলাম।
তুমি সে সময় বাড়ির সবার সাথে অনেক যুদ্ধ করেছিলে আমাকে বিয়ে করতে,
আমি কখনোই ভাবিনি তুমি আমাকে ভালবাসতে পারো।
বিয়ের আগের দিন বিকেলে তুমি আমাকে বলেছিলে,"কমল তুমি আমাকে বিয়ে করো",
আমি তখন কিছুই বলতে পারিনি।
তোমাকে বিয়ে করার সাহস কখনোই হয়নি আমার,
তুমি আমার কোন উত্তর না পেয়ে দু'চোখে অবিরত বর্ষা ঝরালে।
তারপর আমি আমার পথে,
তুমিও তোমার পথে চলে গেলে।
পরদিন লাল বেনারসী পরে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছো,
আমিও তার অল্প কিছুদিন পরই বাড়ি ছোড়েছিলাম।
এরপর দেখতে দেখতে কেটে গেছে বারোটি বছর,
এই বারোটি বছর ধরে তোমার চলে যাওয়া আমাকে কাঁদিয়েছে।
একদিন যে অর্থ সম্পদের দাম্ভিকতায় তোমার বাবা আমাকে তাড়াতো,
আজ সে অর্থ সম্পদ আমার পায়ের নীচে গড়াগড়ি খায়।
ওদিকে তোমার বাবার সব সম্পদ ব্যবসায় খুইয়েছে,
তোমার তো বাবা পাক্কা হিসেবী ছিলো বলেই তোমাকে বড় ঘরে বিয়ে দিয়েছিলো।
আজ নিঃশেষ হয়ে গেছে তোমার বাবার আত্ম অহামিকা,
তুমিও আজ বিধবার বেশে পরিত্যাক্ত হয়ে পিত্রালয়ে।
জানি, আজ আর তোমার বাবা তোমাকে ফেরাবে না আমার কাছ থেকে,
জানি, এখন তোমাদের অন্দরমহল আমার জন্য উন্মুক্ত।
শুধু আমি আজ অপেক্ষায় নেই তোমার।
আমিও বিয়ে করেছি;দুটো সন্তানও আছে আমার,
জানো? ছোটোটা মেয়ে হয়েছে ঠিক তোমার মত দেখতে।
ওর নাম রেখেছি অনামিকা,
তবে ও অহংকারী বাবার মেয়ে না।
ও বেড়ে উঠবে কাদামাটির সোঁদা গন্ধে ঠিক আমারই মতো,
আমি ওকে বুঝতে দেবো না ভালবাসায় ধনী গরীবের ভেদাভেদ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।