নির্যাতন
- রফিকুল আলম - ভালোবাসার নিঃশব্দ কথন ২৯-০৩-২০২৪

নির্যাতন
(১)
আজ থেকে বিশটি বছর আগের
দেখা ঘটনা বলছি
যবে আমার স্বরযন্ত্র ভারী হয়ে এসেছে
রক্ত কণিকা তখন ফাগুনে প্রায় যুবক।
চৈতী দিনের অলস দুপুরে
সামসুজ্জোহা উদ্যানে বসেছিলাম
সবুজ শিশুকুঞ্জের ছায়া তলে।
অদূরেই বসে বাঁশ শিল্পের কাজ করছিল
অনিকেত দেহাতী বধু একজন
ভগ্ন এক দালানের বারান্দায়।
রবির রুক্ষতায় গতরের ঘামে
লেগে গেছে পাতলা কাপড়
অন্তর্বাসহীন নরম দেহে স্কচ টেপের মত।
হঠাৎ দেখি ক্ষিপ্র গতিতে এসে
এক কিম্ভূতকীমাকার পুরুষ
লাঠির আঘাতে জর্জরিত করল তাকে
কৃষক পিটায় যেমন তার কুড়ে বলদটিকে।
দেখলাম ছটফটানি কাটা কবুতরের মত
আগুন হাওয়ায় মিশে গেল
তার সকরুণ আর্ত চীৎকার
সাহায্যে এগিয়ে গেল না কেউ
জানিনা কি ছিল অপরাধ তার।
আমি দেখছিলাম নির্বাক মূর্তির মত
যদিও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল ধমনীতে।
ঘন্টা খানেক পরে অবাক হয়ে দেখি
খাবার দিয়ে পাষন্ডকে পাশে বসে
চালাচ্ছে বিজনি নির্বিকার চিত্তে।

নির্যাতন
(২)
এখন আমি পৌঢ়
হাঁটছিলাম রাজধানীর গ্রীণ রোড ধরে
মধ্য ভাদরের চামড়া শুকানো রোদে
অসহনীয় গরমের মাঝে।
সুরম্য এক প্রসাদের দ্বিতল থেকে
হঠাৎ শুনতে পেলাম এক রমণীর
হৃদয় জ্বালানো কান্না আর আর্ত চীৎকার।
থেমে গেল পথ চলা
মনে পড়ে গেল
বিশটি বছর আগের কাহিনী।
কান্নার চীৎকারে এসেছে অনেকে
কিন্তু বন্ধ আধুনিক খিড়কি।
শুনলাম বিদূষী রমণী
যৌবনের কোঠা পেরিয়েছে অনেক আগেই
হয়েছে তিনটি সন্তানের জননী
অনিচ্ছার জলে ডুব দিয়ে।
মনের রাজ সিংহাসন শূণ্য
অনিচ্ছায় হয়েছে শুধু শয্যা সঙ্গীনি
কাবিননামায় দস্তখত দিয়ে।
জানিনা কি অপরাধ ছিল তার
তিনটি দিন কেটেছে বিষন্নতায় আমার।
কোন তফাৎ বুঝিনি গ্রাম্য মূর্খ স্বামী আর
আধুনিক শিক্ষিত শহুরী স্বামীর মাঝে।
তফাৎ শুধু এখানে-----------
একজন প্রকাশ্যে আর অন্যজন
বন্ধ ঘরে করলো ঘৃনিত কাজটি।
যাদের স্নিগ্ধ সৌরভের পরশে
রুক্ষ পুরুষকে করলো সুমার্জিত
তারা আর কতকাল সইবে এমন নির্যাতন
কারণে অকারণে নড় কথায়।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।