মা, দ্যাখো!

আমি আজ বড্ড হাঁপিয়ে গেছি,মা!
বেলা ফুরোবার আগেই
কেমন এক ক্লান্ত-শ্রান্ত-জীর্ণতা আমায় কুঁকড়ে খাচ্ছে,
মা, আমি আজ বড্ড বেশি হাঁপিয়ে গেছি।
নতুন জুতোর স্বপ্নে-
পথ চলতে চলতে আমার পথটাই ফুরিয়ে গেছে;
চকচকে একজোড়া নতুন জুতো এলেও
আমার হাঁটার পথটাই যে ফুরিয়ে গেছে!
আমি আজ বড্ড হাঁপিয়ে গেছি,মা।
বাস্তবতার কষাঘাতে আমার দু'পা ছিন্নভিন্ন
শরীর থেকে রক্ত পড়ে টুপ টুপ, চুপ চুপ, সারাপথ একাকার;
আমি আজ বড্ড হাঁপিয়ে গেছি মা।
মা, তোমার ছেলে বড় হবার আগেই
তার দিন-দুনিয়া ছোট হয়ে যাচ্ছে;
কোথাও খানিক ভাবনাহীনতা নেই,
না বলা হাজারো কথামালা জমে গিয়ে
আজ আমার তনুতে প্রতিনিয়ত'ই লক্ষবার বিস্ফোরণ ঘটায় মা;
মা, আমি সেই স্প্লিন্টারের আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছি মা!
মা, আমি আজ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি,মা!
মা, পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে নেই?
মা দ্যাখো, আমি তো কান্না করতে ভুলে গেছি।
মা, এই যে আমার শরীর পোড়ে,আমি তবু হাসি;উৎকট গন্ধ ছড়ায়,
মা, আমি আজ বড্ড হাঁপিয়ে গেছি।
মা, তুমি কোথায়?
মা, তোমার কী আর দুদণ্ড অবসর হবে না? যেমন অবসর হতো সেই ছোট্ট আমির জন্য? শত ব্যস্ততাতেও আমি'ই মানিক-রতন।
মা, তোমার ছোট্ট ছেলেটা বড় হতে গিয়ে আজ বড্ড হাঁপিয়ে উঠেছে।
মা, তোমার ছেলেটার থেকে পুরো জগৎই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
মা দ্যাখো, তোমার দ্বারে আজ ভিখারির বেশে, বড় হয়ে যাওয়া তোমার সেই ছোট্ট খোকা!
মা, সন্তানের জন্য নাকি মায়ের কোল সবসময়ই খালি থাকে!
মা, এই আমি তোমার দ্বারে;
তোমার কোমল,স্নিগ্ধ , মমতাময়ী বাহুডোরে ধরা দেবার প্রার্থনায়,
মা, তোমার ছেলে আজ বড্ড হাঁপিয়ে গেছে;
আজ সে বড্ড ক্লান্ত-শ্রান্ত-বিধ্বস্ত!
মা, তোমার ছেলের এত্তো এত্তো কথা!
শোনার জন্য একটা কোথাও কেউ নেই।
মা, তোমার ছেলে বাস্তবতার কষাঘাতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে,
মা,তোমার ছেলেটার বেলা বুঝি এই ফুরোলো!
মা, তোমার ছেলে স্প্লিন্টারের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে আজ মুমূর্ষু;
মা, আজ তোমার ছেলে তোমার দিদারের ভিখ মাগে,
মা, মা,মা, মাগো, তোমার ছেলে আজ বড্ড হাঁপিয়ে গেছে।
মা.....!
---

- 'মা,দ্যাখো' !
- সামি আল সাকিব
- ০৩/০২/২০২০