হাস্নাহেনা
- মোঃ আব্দুর রহমান ১৮-০৪-২০২৪

পুরান ঢাকায়,
তার সাথে দেখা হয়েছিল
এক অদ্ভুত ক্ষণে
বাইরে তখন বইছে হাওয়া এলোমেলো
পুড়ছে দোকান, রাস্তা, বাড়ি; কিন্তু মনে
ডাহুক ডাকার মতো, কী যেন চমকালো!

কী যেন চমকালো,
হয়তো আগুন, হয়তো অন্য কোন আলো।

পুরান ঢাকায়
বংশালে,
তখন জ্বলছে আগুন এ গলি ও গলি
মারামারি দুপক্ষের, আগুন আগুন খেল
রাজনৈতিক বা অন্য কোন স্বার্থের বলি,
আটকে পড়া গলির মাঝে আমরা কয়েকজন
আতঙ্কে উদ্বেল।
তখনই সে রিক্সা থেকে লাফালো,যেন,
বিজলি থেকে ছুটে আসা এক প্রস্থ আলো

বুকের ভিতর ডাহুক ডাকার মতো
কী যেন চমকালো!

দিগ্বিদিক ছুটছি তখন, আমরা ক'জন আটকে পড়া
তখন হঠাৎ সদর খোলা পেয়ে, অচেনা এক বাড়ি,
উঠে গেলাম আমি, সিঁড়ির কয়েক ধাপ
পেছন ফিরে চেয়ে,
দেখি,অন্য সবাই ছুটে গেছে অন্য অন্য দিক
শুধু আতঙ্কে নীল এক মুখ, সেই বিজলী ছোটা আলো
সিঁড়ির কয়েক ধাপ নিচে
দেখেই, আমার বুকের ভিতর ডাহুক ডাকার মতো
কী যেন চমকালো!

বংশালে,
অচেনা এক বাড়ি
অচেনা বাড়ির সিঁড়ি
আমরা দুজন বসে আছি
কয়েক ধাপ ব্যবধান,
বাইরে তখনো জ্বলছে আগুন, পুড়ছে ঘর
বইছে হাওয়া এলোমেলো
আর আমি সমস্ত সময় জুড়ে
এক অন্য আঁচে পুড়ে,
ইতস্তত থেমে
কয়েকধাপ নেমে
বললাম তাকে, " ভয় পেয়েছো নাকি, আগুন খেলা দেখে?"
বললো না সে কিছুই
তাকিয়ে রইলো আমার দিকে কিছুক্ষণ
চোখের ভিতর বিস্ময় চিহ্ন এঁকে।
আরো অন্যাণ্য অনেক প্রশ্ন শেষে
একবার; কী যেন সে বললো মৃদু হেসে
শুনতে পায়নি তবু মন অন্য রকম ভালো

বুকের ভিতর ডাহুক ডাকার মতো
কী যেন চমকালো!

তারপর সময় গড়ালো,
আগুন নিভলো
দু'পক্ষই মারামারিতে ক্লান্ত হয়ে
হয়তো ঘুমাতে চলে গেল
বংশালকে নির্ঘুম রেখে,
এলোমেলো বাতাসের মতো, আমাদের
এলোমেলো কথাও শেষ হয়ে এলো,
বাইরে তখন যুদ্ধ শেষের নিস্তব্ধতা
আমাদের বিদায়ের ক্ষণ ঘোষণা করছে;
তখনই, কেবল তখনই মনে হল
আগুন জ্বলুক আবার, যুদ্ধ হোক
পুরান ঢাকায়
বংশালের এ গলিতে,
আজ বিশ্বযুদ্ধ হোক।

সে চলে যাওয়ার জন্য
উঠে দাড়ালো,
আমি তখন বললাম, আবার কোনদিন কি আমাদের এমন কাকতালীয় ভাবে দেখা হতে পারে না?
বাসে? রিক্সায়? ফুটপাতে?
বৈশাখে, ফাগুনে অথবা আষাঢ়ের ঝমঝম বৃষ্টিতে?
চায়ের দোকানে? বই মেলায়?
অথবা কাকতালীয় নয়, পরিকল্পিত ভাবে
টিএসসিতে? কার্জনে? ফুলার রোডে?
একদিন, কোন একদিন?

সে হেসে বললো- আমিতো দিনের যাত্রী নই,
আমি রাতের তাঁরা।
বলতে পারো চাঁদও
অথবা চাঁদ তাঁরা কিছুই নই, ছোট্ট জোনাকি
আমার সুখে
আমার দুখেও
সবার জন্য আলো জ্বেলে রাখি।

আমি দাড়িয়ে রইলাম, সে চলে যাচ্ছে,
চলে যাচ্ছে পায়ে পায়ে,
হঠাৎ আমার মনে হলো, তার নামটাই তো শোনা হয়নি!
উচ্চকণ্ঠে বললাম- নামটাতো বলে যাও, কখনো,
যদি কখনো, বৃষ্টি বা রোদে দাড়িয়ে থাকতে দেখি,
কি নামে ডাকবো তোমায়?

সে রাস্তার ভিড়ে মিলিয়ে যাওয়ার আগে বললো-
"আমি হাস্নাহেনা,
দিনে ফুটে থাকি, রাতেই গন্ধ ছড়াই"

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।