চোখ বিষয়ক গুচ্ছকবিতা
- আহমেদ তানভীর - কাঠকয়লার আঁচড় ২৮-০৩-২০২৪
(প্রেমচারা)
ভোর-জানালার রোদশিখার মতো
তোমার চাহনি বুক ভেদ করে চলে যায়-
এপাশ ওপাশ। এ বড় মধুর দহন...
আমার আমি তোমাতেই বিলীন!
তোমার চোখের ধারালো ছুরিতে
ব্যবচ্ছেদ হবার সুযোগ পেলে
ব্যবহারিক ক্লাসে জেগে থাকবো উদ্ভিদচারা হয়ে...
(চোখের স্বরলিপি)
ঝরাপাতা-গানে আর ভেজাবো না মন,
তোমার গানেই মন বড় উচাটন!
তোমার পলকে রাঙা হয়ে আসে বৈশাখী বিকেল
এলোমেলো হয় রবীন্দ্র স্বরলিপি...
ভেতরের কালবৈশাখী বলে ওঠে-
‘হারমোনিয়ামের রিডে আঙুল রেখে
আমার চোখে চোখ রেখো না,
বড় বেশি ওলট-পালট হয়ে যায়
আমার ভেতরের সা-রে-গা-মা...’
(বেহুলা-চোখে লখিন্দর-সাঁতার)
সর্পরাজের রক্তচোখ কিংবা দেবী মনসার শাপ শাপান্ত
আর ঝড় তোলে না গহিনঘরে!
ভেলায় ভাসতে শিখে গেছি আমি
তুমি পাশে থাকো, থাকুক তোমার যুগলচোখ
বেহালার সুরে উজান বাইতে গিয়ে
আচমকা মনে হলো-
এক চিলতে সিঁদুরের অভাবে শুভদৃষ্টিটা হলো না আজও
চোখে চোখ রেখে হলো না বলা-
‘বেহুলা আমার বেহুলা, আমিই লখিন্দর তোমার...’
(অনন্ত ঘুমপিপাসা)
অনন্ত ঘুমপিপাসায় কাতর হয়েও
রঙিন ঝাড়বাতি জ্বলতে দেখি তোমার চোখে...
স্বপ্নের আঁচলে মোড়ানো চপল চাহনির তীর
বুক বিদ্ধ করে যায় অবিরাম...
এক পলক স্বপ্নচোখের বিনিময়ে
কিনে নিয়েছ আমার ঘুমচোখ
নিদ্রাহীনতার উজানে এখন ডুবসাঁতার
লাভ লোকসানের পরোয়া করি না বলেই
আচমকা ইচ্ছে হয়-
তোমার যুগলচোখে ভালোবাসার দোকান খুলে বসি...
(জোড়াচোখের সংসার)
ধুলোওড়া বাতাসে হেঁটে যেতে যেতে
চোখে পড়ে জোড়াচোখের সতেজ সংসার
যেন এক চিলতে রূপালি আকাশ
চাইলেই বাদামি চিল হয়ে মেলা যাবে ডানা
ছুঁয়ে ফেলা যাবে বৈশাখী মেঘের উঠোনবাড়ি
তোমার এক পলকের সঞ্চিত উত্তাপে
হাঁটতে পারবো আদিগন্ত...
অযথাই শূন্যতা দিও না আমায়
তোমার চোখের গভীরে
নীল অপরাজিতাও তো নীরবে ঘুমোতে চায়...
(চিত্রিত জলজোছনা)
নিজস্ব ঠিকানা নেই বলে
কেবল একটা চিঠির প্রতীক্ষায়
হাহাকার ওঠে ভেতরঘরে
চিঠির ভাঁজে ঘুমন্ত গোলাপ-পাপড়ির ঠোঁটে
চোখ রাখলেই আচমকা ভেঙে যায় ঘুম
নীল বেদনার সহযাত্রী হয়ে ওঠে
ভেজা বালিশ কিংবা মলিন বিছানা
অদৃশ্য স্বপ্নচিঠির ছায়া
এখনও ঝুলে আছে চোখের কার্ণিশে...
তোমার চোখ-সীমান্তে খানিক ঠাঁই পেলে
আসবে নীলখাম আসবে স্বপ্নফানুস
এই কাঙালের নামে
জলজ চিঠির বুক জুড়ে চিত্রিত জলজোছনা
ঠিকানা- তোমার চপল চোখের গভীর মোহনা...!
(শেষ দৃষ্টি)
কপালতলার অদৃশ্য পালঙ্কে
আয়েশি ভঙ্গিমায় শুয়ে আছে তোমার যুগলচোখ... আহা
অথচ কী অসময়ে বেড়ে চলেছে আমার কপালের বলিরেখা,
অনুরাগের সংজ্ঞা শিখতে তোমার দহনে পুড়েছে দু’চোখ
ভেতরে অনন্ত অন্ধতা...
ধবল বসনে খাটিয়ায় উঠে গেলে আমার দেহ
শেষবারের মতো দিয়ে যেও তোমার দৃষ্টির শেষ স্ফুলিঙ্গ...!
মন্তব্যসমূহ
এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।