জীবন
- কানিজ ফাতেমা আনিকা ২৯-০৩-২০২৪

গৃহবন্দী জীবনে
চায়ের আড্ডার ভিড় উবে গেছে।
ফুরিয়ে গেছে তাসের আড্ডা।
মা-কাকীমাদের
ছোট্ট ছোট্ট ইতস্তত ফিসফিসানিগুলোও
নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ
এবং কথা থেকে
কথপোকথনের ভবিষ্যৎ
অনেকদিনই ফোন আর
ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে উঠছিলো
তা বলাই বাহুল্য।
এই লকডাউন জীবনে
তা আরো স্পষ্ট
এবং স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে।
এরকম পরিস্থিতিতে সদ্য,
মাঝারি কিংবা অভিজ্ঞ প্রেমিক
প্রেমিকাযুগল কিভাবে প্রেমালাপ চালাচ্ছে
গতকাল সেসবই ভাবছিলাম।
আমি জানিনা
আপনারা সহমত হবেন কিনা
তবে আজকাল পাড়াতুতো
প্রেমের ঘটনা বিরল না হলেও
তার প্রকোপ প্রশমিত হয়েছে।
আমাদের পাড়ায়
এক সুন্দরী দিদি ছিলো।
ব্যক্তিগত আলাপ পরিচয় ছিলোনা।
বারান্দায় বিকেল চারটের সময়
দাঁড়ালেই ওকে দেখা যেত..
কোনোদিন সূর্যমুখী রঙের,
কোনোদিন ঘন সবুজ রঙের
সালোয়ার পরে হাঁটছে।
পাশের ফুলবাবুটির মেয়াদ
কখনোই এক বা দেড়
মাসের বেশি হয়নি।
অনেকখানিই সালোয়ারের
রঙের মতো বদলে যাওয়া
দ্রুত প্রেমিক।
বেশকিছু বছর পর
একদিন দোকানে গেছি
টুকটাক কাজে।
দেখি পাশের গলি থেকে
বেরোচ্ছে দিদি।
গায়ের রঙ আরো খুলে গেছে।
চুল অল্প পাতলা হয়েছে।
সেই ছিমছাম উড়ন্ত গ্যাসবেলুন
ভাবখানা অনেকটাই চুপসে গেছে
কোলের কন্যাটির কারণে সম্ভবত।
দিদি আমাকে চেনেনি।
কোনোদিনই চিনতো না।
কিন্তু আমি চিনতে পেরেছি।
বাচ্চাটির সাথে চোখাচোখি হতে
অল্প হেসেছিলাম।
তখন পাড়ার প্রেমের মধ্যে
একটা আলাদাই থ্রিল ছিলো।
এই বুঝি বাবা'র কাছে
খবর চলে গেলো
- " বুঝলেন দাসবাবু,
আপনার ছেলেকে দেখলাম কাল
মিত্তির বাড়ির ছোট মেয়ের সাথে।
দিনকাল ভালো নয় তো!
একটু নজরে নজরে রাখবেন"
ব্যাস,
কে যে কখন কোথা থেকে
আপনার জন্য এমন দরদ উথলানো
ভালোবাসা রেখে যাচ্ছে
ধরতে পারবেন না!
এমন কত হয়েছে!

শিখাদি যেতো কলেজে।
ঘড়ি ধরে এগারোটায়
বাড়ি থেকে বেরোয়।
শিখাদির বাড়ির একটা বাড়ির পরে
সুধীর'দা এসে বসে থাকতেন
বন্ধুর বাড়িতে।
কিছুদূর আলগা হেঁটে
বাকি কলেজ অবধি পথটুকু
নন্দনকানন হয়ে যেত রাতারাতি।
শিখাদি আর সুধীদা'র বিয়ে হয়নি।
শিখাদি ছিলো ব্যানার্জি,
ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে।
অব্রাহ্মণ পরিবারে বিয়ে দিতে
গড়রাজি ছিলেন শিখাদির বাবা।
বিস্তর অশান্তি হয়েছিলো।
কানাঘুষো শুনেছি
বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও
নাকি করেছিলো শিখাদি।
সুধীরদা'র খবর
বসন্তের বাতাসটুকুর মতো
এদিক ওদিক রটে বেরাতো।
সুধীর'দা বিয়ে করেছে!
আর শিখাদির কী হয়েছিলো
জানা হয়নি তারপর...
আবার এরকমও শুনেছি
পাশাপাশি দুই বাড়ির ছেলেই
উল্টোদিকের বাড়ির
বড় মেয়ের প্রেমে
নাকানিচোবানি খাচ্ছে।
এই মেয়ে কার ঘরের বউ হবে
তা নিয়ে দুই বাড়ির মধ্যেই
একটা ঠান্ডা লড়াই
টের পাওয়া যেত।
তো মেয়েটি কাকে পছন্দ করে
সেটা কিছুতেই ঠাউর করা যাচ্ছিলো না।
সে দু'জনকে দেখেই হাসে।
দু'জনের সাথেই পরিমিত কথা বলে।
কিন্তু আলটিমেটলি
মালাটা কার গলায় উঠছে
কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না।
এদিকে এই মেয়েকে কেন্দ্র করে
পাশাপাশি দুই বাড়ির ভেতর
অদৃশ্য এক প্রতিযোগিতা
গজিয়ে উঠছে।
কিন্তু দিন শেষে ফলাফল
একদম অপ্রত্যাশিত।
দু'জনের কাউকেই
বিয়ে করলেন না মেয়েটি।
মেয়েটির বিয়ে হলো
তারই অংকের মাস্টারমশাই
সুবল প্রামাণিকের সাথে।
প্রেম অনেকদিনই চলছিলো আসলে।
কেউ আন্দাজ করেনি
এমনটা হবে।
বিয়ের দিন পাশাপাশি বাড়ির
দুই বন্ধুকেই আমন্ত্রণ
জানানো হয়েছিলো অবশ্য।
এরকম কত কত পাড়াতুতো
মিষ্টি প্রেমের বাতাস
ঘুরে ঘুরে বেড়াতো চারদিকে।
তখন "ফেসবুক", " whatsapp"
এর রমরমা ছিলো না।
একটা ঘরোয়া প্রেম ছিলো।
প্রেম ভাঙা ছিলো।
সবুজ শাড়ি ঝুলিয়ে
ছাদে দেখা হবে কিনা
তার গ্রিন সিগনাল দেওয়া হতো।
অষ্টমীতে হলুদ শাড়ি আর
সাদা পাঞ্জাবির মেলবন্ধন।
তবে হারিয়েও গেছে বহু সম্পর্কই।
কত ছেলেই
আর বিয়ে করেনি সারাজীবন।
কেউ কেউ আবার
চাকরি নিয়ে দূরে বদলি হয়ে গেছে।
কেউ কেউ আবার
চাঁদের দিকে গ্লানিময় চোখ চেয়ে
সারাজীবন শুধু
ভেতরে ভেতরে মরে গেছে।
তাদের শিথিল শীর্ণ চুল,
ফেসে যাওয়া তাঁতের শাড়ি,
ফিকে দুটো ঠোঁটের জোড়াতালি হাসি
এখনও শুনতে পাওয়া যায় পুরনো পাড়ায়...

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 3টি মন্তব্য এসেছে।

almamun1996
২৯-০৫-২০২০ ২২:২৬ মিঃ

সুন্দর, বাহ বাহ

kanizc0
২৯-০৫-২০২০ ২০:১৩ মিঃ

:)

Dojieb
২৯-০৫-২০২০ ১৬:০৮ মিঃ

আমি এই পুরোনো পাড়ার বাসিন্দা কখনো না, তবে হলে বোধহয় মন্দ হতোনা!