আগুন
- ACHINTYA SARKAR/অচিন্ত্য সরকার[পাষাণভেদী] ২৩-০৪-২০২৪

আগুন
অচিন্ত্য সরকার

শুনেছি,করোনা ভাইরাস নাকি বেশি উষ্ণতায় বাঁচে না।
আগুনের কাছে আবার কে জব্দ হয় না!বাপ ঠাকুরদারা
বলতো,‘আগুন হলো সর্বভূক,সব পাপ,তাপ,রোগ জীবানু
পুড়িয়ে এক্কেবারে ছাই করে দেয়।‘এই তো দেখছো না,
করোনায় মরে যাওয়া লাশ গুলো,কেও যখন ছুঁতে
চাইছে না,তোমরা কত কিছু পরে,নিজেদের সুরক্ষিত
করে,তবে আগুনের মধ্যে ফেলে দিচ্ছো।কই,আগুন
তো একবারও ছোঁবে না বলে না।এক্কেবারে আপন
করে নেয় নিজের বুকে দহন সুখে,যেমন শুকনো বাসি
রুটিগুলো আপন করে আমাদের পেট,তৃপ্তি সুখে,
প্রতিদিন অবেলা। করোনা আগুনের কাছে জব্দ,তা
না হলে,ওই একই আগুন দিয়ে,তোমরা খাবার বানাতে
পারতেকি দু’বেলা?পারতে না তো,কেনো পারছো জানো,
কারণ আগুন নিজে সংক্রমিত হয় না,তাই আমরাও
সংক্রমিত হতাম না।কারণ আমরা তো আগুনের সাথে
বাঁচি প্রতিক্ষণ-খনির গর্ভে আগুনের সাথে আমাদের
ঘর,কারখানায় আগুন আর আগুনে গ্যাস আমাদের
খেলার সাথি,তোমাদের ঠান্ডা গাড়িগুলো আমরা তো
গনগনে আগুন দিয়ে গড়ি।নিরা কামার কে দেখেছো?
হাতে পায়ে তার আগুনে পোড়া অসংখ্য ফোসকা,
তবু,সেই আগুন নিয়েই রাতে দিনে তার যত কারবার।
আর এত শত ফিরিস্তিরই বা কি দরকার?আমাদের
পেট গুলো তো এক একটা জলন্ত আগুনের চুল্লি।
আমরা তা দিব্বি সহ্য করে বেঁচে আছি যুগ যুগান্তর,
তাই,করোনার ভয় আমাদের কাছে নিতান্ত অবান্তর।

এবারও তোমরা নিজেরা বাঁচতে, তোমাদের নিজেদের
দুর্বলতা ঢাকতে আমাদের ঢাল করেছো।দেখলে না,
কীটনাশকেও আমরা মরিনি,হাজার হাজার মাইল
পথ পায়ে হেঁটেও আমাদের অপুষ্ট বউরা পেটের বাচ্চাদের
দিব্বি রক্ষে করেছে।তোমাদের বাচ্চাদের মতো নাদুস নুদুস,
ভারি সারি ওজনের নয় বটে,কিন্তু ওরা তো ওদের মার
চিটে পেটের আগুন খেয়ে,জন্ম গলির আঁধার ঠেলে
বেরিয়েছে,এক একটা আগুন শিশু।পেটের আগুনে
ওদের মা’দের বুকের দুধ শুকিয়েছে,কিন্তু ওরা মরিনি,
জন্ম থেকে আগুন হজম করতে শিখেছে,বাপ মায়ের
মতো।তাই আমরা করোনায় মরবো না,
আমাদের বাচ্চারাও মরবে না।

কিন্তু,তোমাদের ভয় নেই বাবু,আমরা লকডাউন মানবো,
কেননা,আমরা যে জন্ম জন্মান্তর আগুন সহ্য করতে
শিখেছি,বারুদ হতে পারিনি।অশ্রু সুখের মোমবাতি হয়েছি,
দেশলাই কাঠি নয়।তা যদি হতাম,ভাবো তো,যখন
তোমাদের লক্ষ লক্ষ লিটার পেট্রোল বোঝাই গাড়ির
চাকা আমাদের পিষে দিলো,তখন কি হতো?সেক্ষেত্রে
অবশ্য,তোমরা বারুদ খুঁজতে কোটি কোটি ডলার
ব্যয় করে কতো প্রযুক্তি কাজে লাগাতে –কিন্তু এতো
গুলো আগুন ভর্তি পেট তোমাদের নজরেই এল না!
কেননা,তোমরা জানো,সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া টুকু
দু’চারটে টুইটেই সামলে নেওয়া যাবে,অনাস্থা আসারই
সম্ভবনা নেই,সরকার পতন তো অনেক দূরের কথা।
আর গ্যাস আম্বলে ভোগা মাথা গরম সেকেলে কিছু কবি,
লেখে যদি দু’চারটে কথা,কি এসে যায়,সে তোমরা
প্রকাশই করতে দেবে না।তবে হ্যাঁ,টিভিতে বুদ্ধিজীবী
বাবুরা কেও কেও বলছেন বটে, ‘রেল লাইন টা তো আর
ঘুমানোর জয়গা নয়।‘কিন্তু বাবু,সেটা তোমাদের জন্য নয়,
নরম বিছানায়, উষ্ণ আদরেও কি তোমাদের বিশেষ ঘুম হয়?
তবে,আমরা রেল লাইনেও বেশ ঘুমোতে পারি,
আমাদের ভয় দেখিয়ো না মহামারি,অতিমারি।
আমাদের পাতা লাইনে আমরা একটু ঘুমতে পারবো কি না,
তাও তোমরা ঠিক করবে? তোমরা যা করতে পারো,
করো,ক’টা আগুন নেভাবে?
সব আগুন নেভালে তোমাদের ঘরে হাঁড়ি চড়বে তো?

তাই শেষ কথা বলি শোন,তোমাদের লক্ষ টাকায় কেনা
সুখ আমাদের আগুন পেটে সইবে না,তাই চাই না
ও সব।এক কাজ করো,লাইনে পড়ে থাকা আমাদের
শুকনো রুটি গুলো কুড়িয়ে নাও,আমাদের বাচ্চা গুলোকে
গেলাও,আগুন টা জ্বেলে রাখো তোমাদের দরকারে।
করোনায় যদি মরো,তবে বউ বাচ্চা কেও ছোঁবে না যে,
আমাদের পেটের আগুনই এগিয়ে যাবে তোমাদের সৎকারে,
আর যদি বাঁচো,তোমাদের ঘরে যাতে হাড়ি চড়ে সাড়ম্বরে।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

M2_mohi
১২-০৫-২০২০ ১২:২৬ মিঃ

নিষ্ঠুর, অমানবিক ।