প্লেগারিস্ট
- আজমাইল - অ-নামিকা ২৫-০৪-২০২৪

প্লেগারিস্ট আমি প্লেগারিস্ট,
ছিলুম না কবি কখনো,
অকবি হয়ে রয়ে যাব আমি....
তোমার নামে শুধু বাঁচতে চাই।
জানি না কী আমি লিখি,
আদৌ কি কোনো কবিতা হয় নাকি?
ভাবনার জগতে হতে পারি না নিমজ্জিত,
অবচেতন মনে যা কিছু জন্মায়, তাই লিখি,
পরে যখন মিলায়, মনে হয় যেন প্লেজ্যারিজম।
তোমার জন্য আমার যে অনুভূতি....
তাই কবিতায় ঠাঁই পাই।
আকাশে আষাঢ়ে মেঘ দেখে,
গগণে শামুখোলের ঘরে ফেরা দেখে,
শুকনো কোনো কুসুমের যন্ত্রণা দেখে,
গোধূলিতে সূর্যের রক্তিম আভা দেখে,
গাঁয়ের পুকুরপাড়ে পুরাতন বটগাছখানা দেখে,
পুকুরে শিশুদের জলক্রীড়া করা দেখে,
তোমায় নিয়ে লিখে ফেলি।
মনে শান্তিরাশি ভিড় করে, দুঃখরাশি নিশ্চিহ্ন;
কখনো বা অভিধানে চোখ মেলি নতুন শব্দের সন্ধানে।
রাতে বৃত কবিদের লেখা না পড়লে ঘুম হয় না,
নেরুদা-রবি-নজরুল-জীবনানন্দ-কীটস....
আহা কী মধুর ভাষায় লিখেছেন তাঁরা।
প্লেজ্যারিজমের সঠিক অর্থ এখনও বুঝলাম না,
তাই আজ যা-কিছু লিখি, সবই মনে হয় অর্থহীন,-
কেজি দরেও বিক্রি হবে না।
আমার লেখা পড়ে যাঁরা মোরে কবি বলে ডাকে,
শুধু মনে হয়, কেন ডাকে মোরে তাঁরা কবি বলে?
যা-কিছু লিখি হয়ত তা কবিতা নয়, কবিতার মতন।
কী বিশেষণেই বা তোমায় ডাকব, সেটাও তো কোনো কবিপ্রদত্ত।
তবে তুমি আমায় কবি নয়, প্লেগারিস্ট বলেই ডেকো,
নাহলে কুম্ভিলক বলেই ডেকো, হে হৃদয়বাসিনী।
বাংলায় ডেকো, আমার ভালো লাগবে।
হয়ত তো তুমি জানো না বা জানতেই চাও না,
এখন বরেণ্যদের লেখা পড়তেও লাগে ভয়...
কী জানি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই নিরাশ হয়ে,
কুম্ভিলতার দায়ে নিন্দুকের কোপে পড়ব নাকি?
আমি তো কখনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না,
সেই ছোটোবেলায় সখারা আমায় নিয়ে
কত মজাই না করেছে, 'শখের কবি' লিখেছিনু তাই।
'কুম্ভিলক' বিশেষণে যদি কখনও কেউ ডাকে,
কী করেই বা তখন বলব, ' নিন্দুকেরাই আমার যশের মূল।'
যে-কথাই আজ বুনি কবিতা ফসলের লোভে,
মনে হয়, এই বুঝি হয়ে গেয়ে গেনু কুম্ভিল।
হায়! যদি লেখা ছেড়ে দিই,-
তুমিহীন হয়ে কতদিন তবে বাঁচব?
আমি হয়ে যাব জীবন্মৃত,
নতুবা ভদ্রগোছের অভদ্র কোনো হীন জানোয়ার!
দুঃখের জোয়ারে জীবনের তরী যখন ডুবুডুবু,
সৃজনী সুখের ভাঁটায় তখন পাই ফিরে আমি প্রাণ।
আকাশের চাঁদ জানে, জানে প্রভাতের সূর্য,
আমি তো লিখি মনের ব্যথা,
লিখি কান-ঝালাপালা-করা কথা।
খোদার কাছে দিবানক্ত এই দুয়াই চাই আমি,
দুনিয়া হতে নাও উঠিয়ে, কুম্ভিল হয়ে বাঁচতে চাই না।
মাঝসাগরে ডুবে যদি মৃতপ্রায়, কবিতাজাহাজে উঠে যদি বাঁচে প্রাণ, তবে কি মরেই যাব?
নিন্দুকেরা খুশিমনে হেসে হেসে তো বলবেই, ' হ্যাঁ।'
জীবনাম্বরে যতদিন প্রাণভানু উদিত হবে,
ততদিন তো লিখতেই হবে একটু সুখের আশায়!
যদি কুম্ভিল বা প্লেগারিস্ট বলে ঘটাও আশার লয়,
তবে মোর জীবনদিঘির প্রাণকমল ছিঁড়ে ফেল।
আমি শেষ হয়ে যেতে চাই।
নিরস জীবনে বেঁচে থাকার কী মূল্য তবে...
যদি কবিতা লিখে বেঁচে থাকার রসদই না পাই?
হায় রে সমাজের দূষিত মাছি ভনভন শুধু করে!
আমি সম্মান চাই না কোনো, সুখের নেশায় শখের লেখা শুধু লিখি...
মনপসারিনীদের যত কপটতা আমার লেখায় লিখি,
কখনো প্রকৃতির রূপে হারিয়ে গিয়ে ভণিতা করি,
স্বপ্নলোকের কোনো নারীও বাদ যায় না,
কল্পলোকে ভিড় করে আসা কোনো বরেণ্য
কবির ত্যজ্য বাক্যও হয়ত আমার লেখায় ঠাঁই পায়।
কারেই বা বিশ্বাস করি,
কেউ বলে, বরেণ্যদের লেখা পড়েই জন্মে
কবিতা, হাত পাকা হয়।
কেউ আবার বলে, সাবধান! এখন ডিজিট্যাল যুগ,
কুম্ভিলতার দায়ে যেতে হতে পারে কভু জেলে থুরি সংশোধনাগারে।

... (সংক্ষেপিত)
... সেখ আজমাইল
... গলাতুন, মন্তেশ্বর, পূর্ব বর্ধমান
.... ১৫/০৪/২০২০
.... দুপুর ২:৪৩

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।