স্মৃতি
- কানিজ ফাতেমা আনিকা ১৯-০৪-২০২৪

মানুষ যে সংসারে থাকে
সেই সংসারের বিছানার চাদরটাও
মানুষটির আপন হয়ে যায়।
যে চায়ের কাপে রোজ চা খায়
সেটিও পাল্টাতে চায় না।
যে শাড়িটা
হাজারবার পরা হয়ে গেছে
সেটাও প্রাণে ধরে
বাসন ওয়ালিকে দিতে পারেনা।
বাবাকে দেখতাম ঘরের
কিচ্ছু ফেলতো চাইতো না।
পুরনো আলমারির ভেতর
কয়েকশো বছরের ইতিহাস
লুরঝুড়ে হয়ে আছে
তাও ধুলো ঘেঁটে
নাড়িয়ে চারিয়ে দেখতো।
এবং মাঝে মাঝেই প্রাচীন
হরপ্পা মহেঞ্জোদারো
আবিষ্কারের মতো হয়তো
খুঁজে পেয়েছে
পুরোনো ফটো অ্যালবাম
কোনো কৌটোয় হয়তো
গোল করে করে কাটা
পুরনো তামার পয়সা।
কোনটায় একটা ছোট্ট ডায়েরি
দাদুর মাসকাবাড়ি বাজারের।
সব দেখে আবার যেই কে
সেই রেখে দিতো।
কিন্তু আমি জানি
বাবা সম্পত্তির প্রতি
আসক্ত নয়।
বাবা স্মৃতির প্রতি আসক্ত।
জীবনের প্রতি মায়াপ্রবণ।
আর মা'কে দেখতাম
ছোটবেলার গল্প বলতে।
বাড়ির গল্প,
মায়ের,বাবার,দাদাদের।
মায়ের চোখটা
বয়ামে রাখা আচারের দিকে
ছুটে যাচ্ছে।
বেঁচে থাকার প্রতি।
অথচ মা'য়ের বাপের বাড়ি
অনেক দিন হারিয়ে গেছে।
তবু বারবার
বারবার মনে করতে চাইতো।
কারণ আমরা যতদিন মনে রাখি
ততদিন বিশ্বাস করি
সব আছে।
কোথাও না কোথাও।
একটা ছেলেকে চিনি
যে একটা চিঠি
একমাস অবধি পড়েনি।
সে বারবার
তাকে রাখা চিঠিটাকে
কাঁচের বাইরে থেকে দেখেছে
আর ভেবেছে আছে।
জমানো আছে।
পড়ে ফেললেই যেন
খরচ হয়ে যাবে ম্যাজিকটা।
আমার ঘরে একটা
কাচের শোকেসের ভেতর
কাঁচের তাজমহল আছে
দু'বছর ধরে।
ওটা আমি কোননগর থেকে
ব্যাঙ্গালোর তারপর সিঙ্গাপুর
নিয়ে এসেছি।
ছুঁই না।
আছে এইটুকু জানি।
যে দিয়েছে সেটা
তাঁর দেওয়া প্রথম আর শেষ স্মৃতি।
কোনো মানুষকে,
দেশকে উপড়াতে গেলে
মন'কে উপড়াতে হয় আগে।
বিশ্বাস যতদিন থাকে
ততদিন সব থাকে।
সেই মানুষটা,
জায়গাটা না থাকলেও থাকে।
বুকের খুব ভেতরে
আমরা জড়ো করি
এসব রূপকথা।
লালন করি।
এই রূপকথা সত্যিকারের।
যেখানে আত্মা থাকে,
সেখানে সব সম্ভব!

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 2টি মন্তব্য এসেছে।

Dojieb
৩১-০৫-২০২০ ২২:১৩ মিঃ

কোনো কোনো মানুষ থাকে, সংসারের কোনোকিছুই তাকে আপন করতে পারেনা। নিজের শ্বাসপ্রশ্বাসও অচেনা মনে হয়, অজানা মনে হয়।

M2_mohi
১৭-০৫-২০২০ ১৩:৫৮ মিঃ

পড়ে মন আন্দোলিত হল।