জারজ
- কে এম সাজ্জাদ হোসেন শাকিল - অপ্রকাশিত ২৮-০৩-২০২৪
জন্মগতভাবে আমার উপাধি জারজ।
আমি জানি না কার গর্ভে আমি ছিলাম?
জানি না কে আমার পিতা?
এই ও জানি না
কোনও ধর্ষিতা মায়ের সন্তান কি না!
জানি না কোন যৌনাঙ্গের ঘর্ষণে ক্রোমোজমের বীজ আমি!
জানি না আমার জন্মপরিচয়।।
জন্ম দিয়ে ছুঁড়ে ফ্যালেছ নর্দমার পাশে...
নাহয় ফ্যালেছ নদীর ধারে।
সভ্যতার উচ্ছিষ্ট হিসেবে দেখেছ
কালের পর কাল।
বাঁকা ঠোঁটে অট্টহাসি হাসির
ধিক্কার দিয়েছ "জারজ" বলে..
আমাকে খেতে দ্যাওনি,
কাকের মুখ থেকে খাবার ছিনিয়ে ক্ষুধা নিভিয়েছি।
মায়ের দুগ্ধ জোটেনি।
মায়ের ভালোবাসা আমি পাইনি- পেয়েছি "জারজ" উপাধি।
শ্লোগান আর মিছিলে "জারজ" বলে ভারী হয়েছে পরিবেশ।
আমার জন্য কোনো সংবিধানে আইন পাস আছে কি?
ধর্ম আমাকে অবৈধ বলেছে...
"মানুষ" আমায় হাসির খোড়াক বানিয়েছে।
দোষটা কোথায় আমার??
হে মানবাধিকার, কোথায় আমার অধিকার।।
বিদ্যাপীঠ আমাকে গ্রহণ করবে?
করনি তো।
এতিমখানা আমায় জায়গা দেবে?
দাওনি তো।।
আমি থাকতে পারিনি পালক সন্তান হয়ে-
তবে আমার মা কই?
কোথায় আমার বাবা?
আমার মা কি সংসার করছে ঐ পাড়ার কোনো চাকুরিজীবী স্বামীর?
বাবা?
- সংগমে দোতলা বাড়ির নারীর সাথে?
আর আমি মাটি খেয়ে ওদের অবজ্ঞায়..
আমি মানুষ!
আমি মানুষ? আমার তো মনে হয় না-
আট বছর বয়সে নর্দমার পোকামাকড়ের কামড়ে আমার ক্ষত হয়েছে দেহ।
আজ আমার আটাশ বছর,
আমার মাকে খুঁজতে গিয়ে আমি জানতে পারি
আমার বাবা লম্পট প্রেমিক।
আমি সেই ভ্রূণ যে কেড়ে নিয়েছে আমার সামাজিক স্বীকৃতি।
মাঝে কনডম সেলে আঁটকে যদি থাকত এ জীবন... জীবনের মায়াজাল যদি না পেতো এ দেহ।
পৃথিবীর কোনও পুরুষ কি জানে?
- মানববিস্তারে জরায়ু দায়িত্বে নিয়োজিত
নারীর ভাঁজে ভাঁজে, না পাওয়ার রং?
এসব আমি ভাবছি আমার মায়ের কবরের পাশে।
আমি জারজ সন্তান। ।
আমাদের কষ্ট ক্ষোভ অভিমান
সামাজিক "স্বীকৃত মানুষ" কিভাবে বুঝে?
যেখানে,
রাষ্ট বোঝে না,
সভ্যতা বোঝে না!!
আছি এখন দিব্যি
ম্যানহোলের পাশে -
উঁচু ফ্লাইওভারের ছায়াতলে।
কোন এক রেললাইন জংশনে নেশার ঘোরে।
কোন এক অবারিত প্রান্তজুড়ে।
মন্তব্যসমূহ
এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।
মন্তব্য যোগ করুন
কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।