স্মৃতি কাতরতা
- মোঃ রায়হান কাজী - জীবন থেকে নেওয়া ২৫-০৪-২০২৪

স্মৃতি কাতরতা
মোঃ রায়হান কাজী
===================
আজও মনে পরে সেদিনের কথা,
মমতাময়ী কন্ঠে যখন ডাকতো দাদু আমাকে।
আমিও যেতাম ছুটে এক দৌড়ে তার কাছে।
যখনি যেতাম তার কাছাকাছি,
স্নেহ বন্ধনে জড়িয়া ধরতেন আমার গাঁ খানি।
কারণে অকারণে মা যখন বকতো আমাকে,
দাদুর কোলে গিয়ে মুখ লোকাতাম,
ধূসররঙের কাপড়ের নিচে।
তিনি যখন খেতে বসতেন থালা নিয়ে,
আদুরী বিড়ালছানা বসতো তার পাশ ঘিরে।
মেও মেও শব্দে মুখরিত করতো,
পুরোটা ঘরের আনাচে কানাচে।
দাদুও তাকে খাওয়াতেন মন-প্রাণ উজাড় করে।
যখনি আসতো শীতের হিমেল হাওয়া।
তার সাথে আকড়ে রাখতেন বিড়ালটিকে,
শিমুল তুলার তৈরি লেপের আবরণ দিয়ে।
যখন যেতাম দাদুর কাছাকাছি,
বিড়ালটি ও আমার কাছে আসতো অনায়াসে।
যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে,
আমার মনের মাঝখানে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে।
আমিও বসে থাকি মন খারাপ করে।
এভাবেই যখন কাটছিলো সাতদিন,
হঠাৎই শুনলাম সকালবেলা ,
দাদু আর নেই এ দুনিয়াতে।
কান্নায় ভারি হয়ে উঠলো পরিবেশ।
আমিও পাশে আনমনে দাঁড়িয়ে,
চোখ থেকে পানি পড়ছিল গড়িয়ে নিজের অজান্তে।
কিছুক্ষন পরে জড়হলো সবলোকজন আমাদের বাড়িতে।
ঘর থেকে বের করে রাখে নিথর দেহটা আমগাছটার নিছে।
কেউবা ছুটাছুটি করে, বড়োই পাতার গরম জল করবে বলে।
চালতা গাছের নিছে আয়োজন করে,
দাদুকে শেষ স্নান করাবে বলে।
স্নান করানো শেষ হলে,
মসজিদ থেকে আনা খাটিয়াতে রাখে সযতনে,
তাকে সাজাতে থাকে সাদা কাপড় আর সুরমা দিয়ে।
আমিও চেয়ে দেখি শেষবারের মতো অপলক দৃষ্টিতে।
যখন নিয়ে যাবে তাকে আপন বাড়িছাড়ি,
শেষবারের মতন মাতুন ওঠে পুরোটা বাড়ি জুড়ে।
জানাজা শেষে তাকে রেখে আসি না ফেরার দেশে,
কবরে শুয়েদেয় পরম আবেশে।
দাদুর সাথে অদৃশ্য হয়ে যায় বিড়ালটিও,
আমি তাকে খুঁজি সারাটাক্ষন জুড়ে।
খু্ঁজে নাহি পাই,উতলা হয়ে ওঠে মনখানি।
হঠাৎ একদিন দেখি,
দাদু যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল।
বিড়ালটার নিথর দেহখানা সেখানে পড়ে আছে।
আমি ভাবতে থাকি, এ বুঝি মায়ার টান।
এ বুঝি ভালোবাসা, মানুষের প্রতি প্রাণীর।
এ ভালোবাসা মানুষের প্রতি মানুষের কখনো দেখা যায় না।
ভাইয়া নিয়ে মাটি চাপা দেয় বিড়ালটি।
তারপর কেটে যায় কত বছর।
যখনি আসি বাড়িতে,
দাদুকে খোঁজেফিরি কল্পলোকে।
তার আছে যতসব স্মৃতি রেখা,
মনের মাঝে আড়াল করে রাখি সযত্নে।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।