রক্তমাখা ডায়েরি
- মিটু সর্দার ২০-০৪-২০২৪

তুমি এখনো বিশ্বাস করো পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কোন শব্দ নেই
এই ভালোবাসাটা তোমার কাছে নাকি একটা গোলকধাঁধার মতো।
রক্তে লিখা ডায়েরি খানা আজ-ও মানুষকে দ্যাখিয়ে বলো
সে একদিন আমাকে বলেছিল " আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে বাসর সাজাবে না, মেহেদীতে হাত রাঙাবে না"
আরও বলেছিল " আমাকে ছাড়া এই পৃথিবীতে সে এক মিনিটের জন্য নিঃশ্বাস নিতে পারবে না, দম বন্ধ হয়ে আসবে, আমি নাকি তার নিঃশ্বাস নেওয়ার ফুরফুরে অক্সিজেন"।
কোথায় তার রক্তে লিখা সেই কথাগুলো
আমি তো আজ-ও ডায়েরি বুকে জড়িয়ে কাঁদি
আমি চলে আসার পর সে এই পৃথিবীতে ছয়ত্রিশ কোটি বারো লক্ষ আটত্রিশ হাজার চারশো সেকেন্ড নিঃশ্বাস নিয়েছে, তিন মাসের মাথায় মেহেদীতে হাত রাঙিয়েছে, বাসর সাজিয়েছে।
আমি চোখ বন্ধ করে জঙ্গলের জানোয়ারকে বিশ্বাস করে নিতে পারি
কখনো কোন মানুষকে বিশ্বাস করতে পারিনা
প্রতারণার বিষের প্রতিক্রিয়া স্বরুপ লোহিত রক্ত নিসৃত হয় হৃদয় থেকে।
আসলে দুনিয়াটাই আজব, আজব স্রস্টার খেলা
যে যাকে মনেপ্রাণে চায়, স্রস্টা তার চাওয়ায় ঢালে ছাঁই
ছাঁইছুঁই আঁকড়িয়ে বেঁচে থাকাটা যে কতো কষ্টের
বেদনার, বিরহের তা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী জানে।
সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসার উপর আমার এখন সন্দেহ হয়
স্বার্থ ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে ভালোবাসে না, মায়ের ভালোবাসার পেছনেও এক অদৃশ্য স্বার্থ লুকিয়ে থাকে যা আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে কখনোই দ্যাখতে পাইনা, স্বার্থ ছাড়া কেউ কারও সাথে সময় পার করে না।
আমি কখনো ভাবিনি ভালোবাসা নামক মরীচিকা আমাকে কুঁড়েকুঁড়ে খাবে
যন্ত্রণা নামের এক বিশাল পাহাড় আমার বুকের উপর বসতি গড়বে, অগ্নি লাভার মতো বুকের ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসবে।
সে আমার জন্য হাত পুড়িয়ে ছিলো ভালোবাসার গভীরতা দ্যাখাতে
এখন মনে হয় খুব ভালো করে মনে হয় এই হাত পুড়ানোটা ছিলো তার নিছক অভিনয়, আমাকে মায়ার জালে আঁটকে রাখার অভিনয়।
সে ছিলো এক দক্ষ পরিপক্ব জুয়ারি
সিগারেটের প্রতি তার যেমন নেশা ছিলো ঠিক তেমনি ভালোবাসা নিয়ে জুয়া খেলাটাও তার নেশা ছিলো।
আজ আর তাঁরারা জ্বলে না আমার হৃদাকাশে
পুরো আকাশ নিথর নিরব স্তব্ধ, অমাবস্যা অন্ধকার রাতের মতো, তার অশুভ ছায়া দ্যাখতে পাই ক্ষানিকটা দূরে, হঠাৎ ছমছমিয়ে উঠে গা।
এই পৃথিবীতে ভালোবাসা মিথ্যে, একটা অলীক মায়া
যৌবনে যদি হৃদয়ের চোখে ভালোবাসার রঙ্গিন সানগ্লাসটা না থাকতো তাহলে হয়তো আকাশ ছুঁতে পারতাম, তাঁরাদের সাথে সখ্যতা গড়তে পারতাম।
তার মিথ্যে ভালোবাসার জালে নিজেকে জড়িয়ে গোবরের গই এর মতো নিজেকে পুড়িয়ে নিয়েছি
সাঁতার না জেনে হাবুডুবু খেয়েছি ভালোবাসার দরিয়ায়।
এখন ভালোবাসার শব্দটা শুনলেই ভয় লাগে
ভিতর থেকে একটা ঝড় বেড়িয়ে এসে উড়িয়ে দিতে চায় এই শব্দটাকে।
তার রক্তমাখা ডায়েরিটা দ্যাখার পর আমার আর কাউকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না, কাউকে না।
সে লিখেছিলো "আমি নাকি তার ফুসফুস"
ফুসফুস ছাড়া একটি মানুষ একযুগ বেঁচে থাকতে পারে পৃথিবীতে
আমি যখন তার ভালোবাসার কবিতাগুলো পড়ি ইচ্ছে হয় একবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করতে "এতোটাই যদি ভালোবাসতে আমায় তাহলে সেই দিন ছেড়ে এসেছিলাম কেন"?
একবার মুখোমুখি দাড়িয়ে বলতে ইচ্ছে হয় " তোমার মুখে ভালোবাসা শব্দটি বেমানান, তুমি তোমার কবিতায় ভালোবাসা শব্দটি ব্যবহার করে আমার কাছে আর ঘৃণিত করোনা"।
একবার মুখোমুখি দাড়িয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দ্যাখিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় আমার প্রতি তার অবহেলা, অবজ্ঞা, নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা গুলো।
আমি তাকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় " দূরে সরে যাওয়ার জন্য গাধার পিঠ বোঝায় কারণের দরকার হয়না, একটু অবহেলাই যথেষ্ট"।

সৌদি আরব
২৯ মার্চ ২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।