স্বাধীন বাংলা
- মোঃ আবুল ফরহাদ ভূঁইয়া ২৫-০৪-২০২৪

অর্ধশত বছর পরে এসেছে কবি,
লিখতে বসেছে আজ পুরনো কথা ।
দুচোখে দেখেছে কত নির্মম ছবি,
কলমের আঁখিজল ভাসিয়েছে খাতা ।

এ মাটির ক্রন্দনে কেঁপেছে আকাশ,
বাতাসে গন্ধ ছিল তাজা রক্তের;
বিপন্ন জীবনের রুদ্ধশ্বাস
হারিয়ে ফেলেছে নিজ অস্তিত্বের ।

মাথা তুলে দাঁড়ানোর নেই কি সাহস ?
যেই মুখ খুলবে সে যাবে কারাগার,
মুখ বুজে দেখে কবি করে আফসোস
লাশে লাশে হয়ে গেছে লাশের ভাগাড় !

অগ্নি ফুলকি উড়ে ওই দূর গাঁয়ে
ভয়ে ভয়ে কেঁপে উঠে নত হয়ে শির ।
বন্ধু এসে বলেছে মঞ্চে দাঁড়িয়ে,
ভয়ে কেন নত হও আগামীর বীর ?

জনতার মাঝে এক সংগ্রামী নেতা সে
নাম তার জনতার শেখ মুজিবুর,
তর্জনী আঙুল আজ সামনে উচিয়েছে
কণ্ঠে ভেসে আসে সংগ্রামী সুর ।


বল আজ উঠবো জেগে মারবে যত
নিজের শিকল নিজ হাতে খুলে নিবো,
দু’শতক বৎসরে সীমাহীন ক্ষত
সময় এসেছে আজ সব রুখে দেবো ।



হিসেব কষেছি আজ সংখ্যা অঢেল
নিজের ঘরের বাতি জ্বালাবো এবার,
বহুদিন দেখিয়েছ দু জাতীর খেল
এবার করবো সবে এক চিৎকার ।

আমাদের কিছু নেই সাহস ছাড়া
জ্বলেছি অনেক তাই অর্জন এটাই,
বহুদূর যাবো তাই নিয়েছি ভাড়া
নিজের লড়াই এবার লড়বো একাই ।

জ্বলে, জ্বলে সূর্যটা দিচ্ছে আজ আলো
না জ্বললে আঁধারেতে ডুবে যেত ধরা ।
আজ জ্বালাবো মোরা, জ্বালো-জ্বালো-জ্বালো
এ মাটির কণাও হবে না হাত ছাড়া ।


বাড়িঘর সব ফেলে বেড়িয়েছে পথে
একাকী জীবনে তবু নয় কেউ একা ।
অচেনা অজানা কত থাকে একসাথে
নতুন নতুন কত মানুষের দেখা ।


স্বামী হারা শোকে কেউ কাঁদে ঘর কোনে,
সন্তান হারিয়েছে ঘুম নেই চোখে ।
বিবস্ত্র লজ্জার কথা কে বা শোনে
মূর্তি স্বরূপ ছাপ এসে গেছে মুখে ।

খাবার অভাবে পড়ে আছে কঙ্কাল,
অবশ হয়েছে শরীর আর পা-হাত ।
এমন মৃত্যু আজ নয়তো অকাল
জালিমেরা দেখে বলে, 'বাহ! ক্যায়া বাত! '


সেলিমের বউটার কপাল পুড়েছে
নববধূ ঘরে তার সে যে ময়দানে,
যুদ্ধ যুদ্ধ বলে মিছিল এসেছে
খই ভাঁজা শব্দ ভেসে আসে কানে ।

আতঙ্ক কুমারীর! মৃত্যুই শ্রেয়
ভাই-পিতা গত তার বহুদিন আগে,
বাঁচাতে পারে তারে নেই আর কেহ
ঘরে ঝুলে শান্তি জীবনের ত্যাগে ।

পুতুল খেলার মতো মেতেছে মৃত্যু খেলা
বিজয় ছিনিয়ে ঘরে ফিরতে হবে,
স্বজনের মুখখানা দেখছেনা কত বেলা
যুদ্ধ ছেড়ে কে ঘরে ফিরেছে কবে?


অতীতের দুঃখ ভেবে, অনাগত সুখ ভেবে
ধ্বংস হবে ধ্বংস জালিমের রাজ্য
অনেক সয়েছি তবে, ছুটিতে পাঠাতে হবে
পশ্চিমা কালো ছায়া আজ পরিত্যাজ্য

বহিঃশত্রু যদি হয় হিংসাত্মক
আমরাও হয়ে উঠি বিদ্রোহী আরও,
নিজের ঘরেই যদি বিভীষণ থাকে
শান্তি শৃঙ্খলা কি থাকে কভু কারো ?

এদেশের খেয়ে, পড়ে, এদেশে থেকে
বাংলা বিরোধী হয়ে ছিল কিছু লোক,
এদের জন্য আজও মুখখানি ঢেকে
মাঝে মাঝে করি কিছু হারানোর শোক ।

কষ্টে পেয়েছি এই মহান বিজয়,
এখনো মিশে আছে কিছু চাটুকার;
ঘুষ আর তোষামোদে সামাজিক অবক্ষয়,
এদের বিরুদ্ধে হও সোচ্চার ।

ঘোষণা হবে যেদিন দুর্নীতি নেই
ঘুষের দুয়ারে আজ পড়েছে তালা,
সেদিন তাকাবে কবি ফের আকাশেই
আকাশ জুড়ে দেখবে ‘স্বাধীন বাংলা’।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।