ধার করা আয়না
- রশিদ হারুন ১৯-০৪-২০২৪

সেদিন আমার বয়স ঠিক বাইশ বরাবর
পহেলা আগষ্ট ,উনিশো চুরানব্বই সাল হবে
হোষ্টেলে থাকি , পড়ি মাস্টার্সে,
সকাল বেলা ক্লাসে যাবার সময় হয়ে গেছে
চুল আচঁড়াতে গিয়ে টেবিলে রাখা
ছোট আয়নাটা খুজেঁ পাচ্ছিলাম না,
রুমমেট শাহেদকে আয়নাটার কথা জিজ্ঞাসা করতেই বললো,
ও দেখেনি , আমি চাইলেই
ওর আয়নাটা নিতে পারি
এটা নাকি আমার জন্মদিনের উপহার
মনে করে রেখে দিতে পারি।


তারপর খুশি মনে ওর আয়নাটা
আমার টেবিলে রেখে দিলাম,
ওর আয়নায় নিজেকে খুবই স্মার্ট লাগলো,
মনে হলো দামী আয়না,
তাই সব কিছু এমন পরিস্কার দেখা যায়,
তারপর থেকে আয়নাটা
খুব যত্ন রেখে দিয়েছিলাম।


প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই
আয়নার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকি,
নিজেকেই কেমন যেন খুব ভালো লেগে যায়
খুব সুখি সুখি মনে হয়,
আয়নাটার দিকে তাকালেই
মনের ভিতরে কোন কষ্ট থাকে না।


যখন ক্যাম্পাসে হেটে যাই
মনে হয় যেন সবাই
আমার দিকেই তাকিয়ে আছে ,
ক্যাম্পাসের যে মেয়েটিকে দেখলেই
আমার বুকের ভিতর ছটফটানি শুরু হতো,
যেই মেয়ে আমার দিকে
কখনো ফিরেও তাকায়নি,
আজকল সেই মেয়েটি
অনায়াসে আমাকে দেখতে থাকে,
আমার এখন আর বুকের ছটফটানি হয়না,
অবলীলায় হেটে যাই
ওর দিকে একবারও না তাকিয়ে।


কেমন একটা ভাব
চলে এসেছে আমার ভেতর
কোন কিছু পাত্তা না দেওয়ার মধ্যে
অদ্ভুত আনন্দ পাই মনে,
তারপর শিক্ষক, বন্ধুবান্দব
সবাইকে অবহেলা করে আনন্দ পাই।


একদিন সকালে নিজেকে
দেখছি আর ভাবছি
আমি আগের চেয়েও
অনেক সুন্দর আর স্মার্ট হয়েছি,
হঠাৎ হাত ফসকে আয়নাটা
পরে ভেংগে গেলো
খুবই কষ্ট পেলাম,
মনে হলো সমস্ত
ভালোলাগা,সুখ যেন ভেংগে গেলো।


সেদিনই বিকেলেই আরেকটা
আয়না কিনে আনলাম
রুমে টেবিলে আয়নাটা রাখতে গিয়ে
হঠাৎ ভয় পেয়ে গেলাম,
এ কাকে দেখা যাচ্ছে আয়নায়.
চোখের নিচে না ঘুমানো কালো দাগ,
একজন পুরোপুরি অসুখি
মানুষের চেহারা আয়নায়,
আমি ভয়ে আর আয়নার দিকে
তাকাতে পারলাম না।


পরদিন ক্যাম্পাসে মনে হলো
কেউ য়েন আমার দিকে তাকিয়েও দেথেনা,
সেই মেয়েটির আশেপাশে
অনেকবার ঘুরোঘুরি করলাম
ভুল করেও আমার দিকে
একবারও তাকালোনা।


“শাহেদ তুই কেনো তোর আয়নাটা
আমাকে দিয়েছিলি,
তারপর থেকে আমি আর কখনো
আমাকে ফিরে পাইনি,”
ধার করা আয়নায়
নিজেকে দেখতে নেই বন্ধু,
ভুল মানুষের ছবি দেখায় ,
এটা যে, ভুল মানুষের ছবি
তাও বুঝতে চলে যায় অনেক সময়,
অনেকের চলে যায় এক জীবন।
————————————
রশিদ হারুন
২৩/০১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।