কবি হবার বিস্তর প্রত্যাশা
- মিটু সর্দার ২০-০৪-২০২৪

কবি হবার বিস্তর প্রত্যাশা নিয়ে
একটি কবিতা লিখতে গিয়েছিলাম সমুদ্রের ধারে
সমুদ্রের তরঙ্গে শুনেছি জাহাজ ডুবি মানুষের চিৎকার
এই সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে যুগযুগ ধরে যাদের জীবনহানি হয়েছে।
একটি কবিতা লিখতে গিয়েছিলাম বক্তৃতার মঞ্চে
সেখানেও দ্যাখি মানুষ মারার চিকন ফন্দি
ক্ষমতা লাভের অপকৌশল, চেয়ারের ধস্তাধস্তি।
ফিরে এসে হাঁটতে থাকি হেমন্তের ফসলের মাঠে
নীলাম্বরী আকাশ, নির্মল বাতাস, সোনালী ফসলের মাঠ --
বালিহাঁসের ঝাঁক, শঙ্খচিলের হাঁক --
পাশে ঘনকাল খোলা চুলে --
পাখির নীড়ের মতো চোখ নিয়ে বনলতা ছিলোনা বলে
সেইদিনও একটি কবিতা লিখতে পারিনি।
পশুপাখি, কীটপতঙ্গের জীবনের কথা
একটি কবিতায় লিখতে গিয়েছিলাম সবুজে ঘেরা অরণ্যে
হিংস্র জানোয়ারের হুংকারে কেঁপে উঠেছিলো হৃদয়
ডায়েরিটা বগলের নিচে চেপে
যখন ফিরতে থাকি রাস্তাটা মেপে
আকাশের এক টুকরো মেঘ
আমাকে উপহাসের সুরে বলতে লাগলো
তোমার এই জীবনে আর কবিতা লিখা হবেনা
কবিরা নির্ভীক, দুর্দমনীয়, অদম্য, অপ্রতিরোধ্য।
কোন এক পড়ন্ত বিকেলে
আমি যখন রেললাইনের পাশের বস্তি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম
কতোগুলো ক্ষুধার্ত মুখ দৌড়ে এসে বলল --
কবি,তোমার কবিতায় আমাদের ক্ষুধার্তের কথা,
অধিকারের কথা একটু লিখো
নিষিদ্ধ পল্লী থেকে সমাজের কথিত বেশ্যা ডেকে বললো
কবি, যদি পারো আমাদের কথাও একটু লিখো।
আমি তাদের মলিন মুখের দিকে --
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে লিখতে শুরু করলাম
অবৈধ আয়ে গড়েছো ইমারত
ভাবোনি নিথর চাহনির ধুসর মুখগুলোর কথা।
ক্ষমতায় গিয়ে ভুলেছো প্রতিশ্রুতি
দ্যাখোনি নিম্নবিত্তদের দিনাতিপাতের গতি।
আর কতোকাল চলবে এ খেলা --
কখন ভাসবে তোমাদের ক্ষমতার এ ভেলা।
চোখ ফেটে গড়ায় অশ্রু, যখন দ্যাখি চোখে
কেউ লইনা টেনে তাদের নির্দয় বুকে।
তাকিয়ে দ্যাখো তুরস্কে ,ধ্বসে গিয়েছে ইমারত
এখনো সময় আছে, হৃদয় কিছুটা করো মেরামত।
প্রত্যাবর্তন করো প্রভুর সৃষ্ট,রাসূলের দ্যাখানো পথে
আর কতোকাল চলবে পাপিষ্ঠ ইবলিসের রথে।
একটি মানুষও যদি ভুখা এবং চিকিৎসাহীন থাকে
ধুসর থাকে তাদের মুখ, জন্মভূমির মৃত্তিকার কসম
আর দেবোনা তোদের ভোট,অনেক করেছিস্ লুট।
বেশ্যাদের মুখ দ্যাখলে হয়না তোমাদের যাত্রা
তোমাদের কারনেই আজকের সমাজে তারা ফাতরা।
কতো কেঁদে কেঁদে ভিজিয়েছে শাড়ীর আঁচল
সুস্থ জীবনযাত্রা তোমরা করে দিয়েছো অচল।
গহীন রাতে তোমরা যখন কামড়ে ধর তাদের গাল
অতিকষ্টে নীরব কান্নায় ভিজে চোখের ছাল।
এই যখন লিখেছিলাম কবিতায় --
ওঁরা তেড়ে আসে;
ফিরিয়ে নিতে বলে কবিতার বিষয়বস্তু --
আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে --
নিষিদ্ধ করবে আমার এ কবিতা।
আমি শুনেছি -
সত্যের জন্য কবি নজরুল জেল খেটে ছিলেন
হেমলক বিষে হত্যা করেছিলেন সক্রেটিসকে
আমিও এই কবিতার জন্য --
হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলবো --
শেষ নিঃশ্বাসটাতে-ও তাদের কথাই বলবো।

সৌদি আরব
০৮/০২/২০২৩ইং

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।