ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর---বলাকা
০৬-০৬-২০২৩

ওরে  নবীন, ওরে আমার কাঁচা,
     ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,
     আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।
রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে
আজকে যে যা বলে বলুক তোরে,
সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ ক'রে
     পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।
     আয় দুরন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।
 
খাঁচাখানা দুলছে মৃদু হাওয়ায়;
     আর তো কিছুই নড়ে না রে
     ওদের ঘরে, ওদের ঘরের দাওয়ায়।
ওই যে প্রবীণ, ওই যে পরম পাকা,
চক্ষুকর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা,
ঝিমায় যেন চিত্রপটে আঁকা
     অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায়।
     আয় জীবন্ত, আয় রে আমার কাঁচা।
 
বাহিরপানে তাকায় না যে কেউ,
     দেখে না যে বাণ ডেকেছে
     জোয়ার-জলে উঠছে প্রবল ঢেউ।
চলতে ওরা চায় না মাটির ছেলে
মাটির 'পরে চরণ ফেলে ফেলে,
আছে অচল আসনখানা মেলে
     যে যার আপন উচ্চ বাঁশের মাচায়,
     আয় অশান্ত, আয় রে আমার কাঁচা।
 
তোরে হেথায় করবে সবাই মানা।
     হঠাৎ আলো দেখবে যখন
     ভাববে এ কী বিষম কাণ্ডখানা।
সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে,
শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে,
সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে
     লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়।
     আয় প্রচণ্ড, আয় রে আমার কাঁচা।
 
শিকল-দেবীর ওই যে পূজাবেদী
     চিরকাল কি রইবে খাড়া।
     পাগলামি তুই আয় রে দুয়ার ভেদি।
ঝড়ের মাতন, বিজয়-কেতন নেড়ে
অট্টহাস্যে আকাশখানা ফেড়ে,
ভোলানাথের ঝোলাঝুলি ঝেড়ে
     ভুলগুলো সব আন্‌ রে বাছা-বাছা।
     আয় প্রমত্ত, আয় রে আমার কাঁচা।
 
আন্‌ রে টেনে বাঁধা-পথের শেষে।
     বিবাগী কর্‌ অবাধপানে,
     পথ কেটে যাই অজানাদের দেশে।
আপদ আছে, জানি অঘাত আছে,
তাই জেনে তো বক্ষে পরান নাচে,
ঘুচিয়ে দে ভাই পুঁথি-পোড়োর কাছে
     পথে চলার বিধিবিধান যাচা।
     আয় প্রমুক্ত, আয় রে আমার কাঁচা।
 
চিরযুবা তুই যে চিরজীবী,
     জীর্ণ জরা ঝরিয়ে দিয়ে
     প্রাণ অফুরান ছড়িয়ে দেদার দিবি।
সবুজ নেশায় ভোর করেছি ধরা,
ঝড়ের মেঘে তোরি তড়িৎ ভরা,
বসন্তেরে পরাস আকুল-করা
     আপন গলার বকুল-মাল্যগাছা,
     আয় রে অমর, আয় রে আমার কাঁচা।
 
 
  শান্তিনিকেতন, ১৫ বৈশাখ, ১৩২১

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 1টি মন্তব্য এসেছে।

মোঃআব্দুল্লাহ্ আল মামুন
২৭-০১-২০১৭ ১৯:০৪ মিঃ

কবির এই কবিতাটি সবচাইতে ভাল লাগে।।
এখানে তরুণদের তিনি এগিয়ে যেতে বলেছেন।।।সুন্দর ভাব প্রকাশ করেছেন তিনি