এক সন্ধ্যায়...
- নওশীন শিকদার ২০-০৫-২০২৪

ভালো না লাগা সন্ধ্যাবেলায় তোমার জন্য আকাশ সাজে মেঘে।
তবু বৃষ্টি নামেনা...
হারিয়ে থাকো তুমি এই ব্যস্ত শহরেরই প্রান্তর ছুঁয়ে।
চায়ের কাপে আড্ডা জমেনা সবসময়,
বিন্দু বিন্দু ঘাম কপালের টিপ ভিজিয়ে দেয়,
নোনতা করে দেয় সময়গুলো।
কিছু মূহুর্ত তো শুধুই নির্বাক...
শুধুই থমকে থাকা।
হয়তো ছাদের কার্নিশে জমে থাকা গত রাতের বৃষ্টির জলে স্মৃতি জমে,
লেগে রয় কিছু অব্যক্ত অনুভূতি শ্যাওলার মত করে
কংক্রিটের এই শহরে।
যখনই আকাশে সন্ধ্যাতারা উঁকি দেয় ,
আমি জানলা খুলে দিই দুহাতে...
বাতাসে ধূলোর গন্ধ আর
পাশের রাস্তার আলুচপ পেঁয়াজুর গন্ধ ছাপিয়ে
মিষ্টি কোনো ফুলের ঘ্রাণ আমাকে হারিয়ে দেয়,
কিজানি কী ফুল!
বুকটা ধ্বক্ করে ওঠে!
সবকিছু জানা উচিতও নয়,
কিন্তু আশেপাশে কোনো ফুলের গাছ আমার চোখে পড়েনা।
গুমোট একটা পরিবেশ,
রিকশার টুংটাং শব্দ...
গলির পথ ধরে হেঁটে যাওয়া একলা যুবকের ছায়া
অথবা বাদামবুট কিনতে ব্যস্ত কোনো প্রেমিক যুগল...
সবই আমার চোখে পড়ে।
শুধু চোখ এড়িয়ে যায় বনসাইয়ের মতন জীবনটাক বোঝাপড়ার সত্য।
বনসাই তো দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু...
একটা কিন্তু আছে বনসাইয়ে,
কিন্তুটা একেকজনের কাছে একেকরকম।
তারপরও বৃষ্টি নামেনা,
আমি চাঁদ খুঁজি,
খুঁজি পূর্নিমার আলো।
আজ নাকি বৌদ্ধ পূর্নিমা।
চাঁদ মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে ,কিন্তু
থেমে নেই ফানুস ওড়ানোর উৎসবমুখর দৃশ্যগুলো।
কিছুক্ষণ আগের আকাশের সাথে এখনের আকাশ মেলাতে পারছিনা...
কত ফানুস! কত আলো! কত স্বপ্ন! কত আশা!
আকাশ ভরে রেখেছে,
অন্ধকারেরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে....
তবুও তোমার আকাশ আজ বয়ামবন্দী।
আমি যদি ফানুস হই,
তখন তোমার আকাশের বয়াম কি চুরচুর করে ভাঙবে?
আমি কিন্তু যেনতেন ফানুস হবনা,
হব বিশেষ এক ফানুস,
যে মাটিতে নামবে না...
উড়তে উড়তে আকাশেই হারিয়ে যাবে।
যেমন করে ছুটন্ত উল্কা পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করার আগেই ছাই হয়ে যায়!
আকাশ থেকে রাস্তার দিকে আবারও মনযোগী হই,
চুড়ি ফিতার রঙিন আবেগ কিনতে গিয়ে থেমে যাই,
বুঝিবা বৃষ্টি আসছে।
কিন্তু না...
আমার অনুমান মিথ্যা করে দেয় ওই আকাশ।
বাড়িতে ফিরে ক্লান্তিগুলো স্নানের জলে সঁপে দিয়ে
আমার ঘরে দুয়ার বন্ধ করে তোমার ছবিতে চোখ বোলাই,
ইশ্, চোখ বোলাতে নিয়ে দেখি লোডশেডিংয়ে আলো নিভে গেল!
বৈদ্যুতিক চার্জারটা নষ্ট,
মোম জ্বালাতেও ইচ্ছে হয়না।
আমি বরং ছাদে এসে দাড়াই,
ছাদের পেছনদিকে বিশাল একটা মেঘ দেখা যাচ্ছে...
খড়ের গাদার মত না,
কালো কোকিল রঙা কোনো নরম গদির মতন সেই মেঘ।
আমার বড় ইচ্ছে হয় ওই মেঘের গদিতে ঘুমোতে,
এদিকে সিঁড়িতে আলকাতরার মতন অন্ধকার।
কার যেন ছায়া তবুও দেখতে পাই...
আমার ওসব জানতে কৌতূহল নেই,
বেশী কৌতূহল শান্তি বিনষ্ট করে।
আচ্ছা আমিতো ভুলেই গিয়েছিলা
তোমার জন্য বৃষ্টি নামাও বৃথা...
এখন যে তুমি বড্ড বাস্তবিক,
বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে তোমার হবেনা।
আরে আরে!
সিড়ি বেয়ে উঠে এসেছে দুধসাদা এক বেড়াল,
আর আমি ভাবলাম...!
বেড়ালটা আমার পায়ের কাছ ঘেঁষে চলে গেল ছাদের উত্তর পূর্ব কোনে। ব
রাতটা দুলছে কারো হ্যামিলনি বাঁশিতে,
ঝাঁকে ঝাঁকে বাতাস
এখন আমার নাতিদীর্ঘ চুল এলোমেলো করে যাচ্ছে।
আমার পায়ে হাতে আলতার রং কেমন যেন কালচে দেখাচ্ছে!
আলতা দিয়েছিলাম কেন সেটাও মনে পড়েনা,
এমন ভুলোমনা হলে কি চলে?
টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হলো...
আমার চোখ বন্ধ করে থাকতেই ভালো লাগছে,
এক দুই তিন...
ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি আমার কপালে কাঁধে চিবুকে।
কিন্তু একি!
মেঘেরা কি আমার সাথে মান অভিমানের সম্পর্ক গড়েছে,
এই এলো এই গেল অনিকেত বৃষ্টি!
বৃষ্টিকে বলি-
" বৃষ্টি তুমি ঝমঝমিয়ে এসো,
এমন করে দেখা দিয়ে হারিয়ে যেওনা,অথবা
আমার চোখের জলের মতন বেহায়াও হয়োনা যেন..."

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।