তীরনয়না
- নওশীন শিকদার ২০-০৫-২০২৪

সেইরাতে তীরন্দাজ হয়েছিলাম,তাই বলে তীর ছুড়ে ঘায়েল করিনি প্রিয়ন্ত সেই তোমাকে...
সেইরাতে টানা টানা কাজলে সাজিনি,তবু ঘুমের ঘোরে হঠাৎ করে তীরনয়না বলে ডাকলে কেন আমাকে?
অসুস্থ তোমাকে দেখতে যাবার পথে
বৃষ্টি নয় জোৎস্না নয় সাক্ষাৎ অমাবস্যা ঝাঁপিয়ে নামে!
ক্লান্ত তুমি তখন সুনীলের উপন্যাসের পাতায় ভীষণরকম ডুবন্ত,
তোমার জানলার গরাদে কবিতা লিখলেম আঙুলের কয়েক আউন্স ঘামে।
চিংড়ির দোপেঁয়াজার গন্ধের কাছে হেরে যায় আমার কবিতার ঝাঁঝ
আসলে নৈশভোজ করতে গিয়ে ভুলে গিয়েছিলে ছুঁতে
আমার কবিতার সেকেলে স্বাদের কারুকাজ।
সেইরাতে পাটের দোলনায় অন্ধকারের ছমছমে ঘুম ছিল
সেইরাতে বাগানবাড়ির ফটকে জেসমিনের মূহুর্মুহু গন্ধ ছাপিয়ে তোমার ঘামেভেজা চুলের গন্ধ ছিল
শুধু ছিলনা তোমার চাহনিতে অজানাকে জানার অনুরণন।
তারপর পায়ের কাছ ঘেঁষে ছুটে যাওয়া বেড়ালটার মিউ মিউ ডাকও কিন্তু
ভাঙতে পারলনা আমার হাসিতে নৃত্যরত জোনাকপোকার সম্মোহন!
তোমার দেয়া এককালের শুভ্রগোলাপের রং কালো দেখাচ্ছিল,
সেই কালোতে মন বললো
আশ্চর্য সুন্দর কালোগোলাপ হোক আমার গলার হার!
তোমার ঘুমন্ত শরীরে তখন একঝাঁক বাতাস আদর বুলিয়ে যায় আচমকা,
সেই আদরে মন বললো
তোমার নিশ্বাসের পারিপার্শ্বিক সংসর্গ আমার বড্ড দরকার!
তোমার কপালে আমার রক্তমাখা আঙুল নিয়েই হাত বুলিয়েছি
যখন বাচ্চাদের মতন ঘুমিয়ে তুমি।
আমাকেও তখন ঘুম পাড়াতে ব্যাকুল হয় গ্রীষ্মরাতের বাতাস সাদরে!
আসলে হাতে বিঁধেছিল গোলাপ কাঁটা ভিন্নধর্মী আদরে।
আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠলে দেখতে
কৃত্রিম রঙ নয় মাখা আছে একটা কৃষ্ণচূড়াবরণ উড়নচন্ডী কবিতা
আমার ঠোঁটের শহরে!
ওদিকে ছাদের ওপরে একটা দীর্ঘদেহী ছায়ার বিচরণ কার্নিশটা ঘেঁষে
ছায়াটা তো তোমার হতে পারেনা, তুমি যে ঘুমিয়ে!
নাকি ঘুমোবার ভান করে অতোটা সময় ওপর থেকে দেখছিলে নিচতলার এই তীরনয়নাকে ভালোবেসে?
সেইরাতে দুঃখ ছিলনা,ছিল লক্ষ্মীপেঁচার কড়া চাহনি।
সেইরাতে আমার ঘুমোবার ইচ্ছে ছিলনা,তবু...
দু'রাত না ঘুমোনো মস্তিষ্কের অবাধ্য নিউরনেরা আমায় রেহাই দেয়নি!

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।