কিচিরমিচির!
- নওশীন শিকদার ২০-০৫-২০২৪

ওইতো কিচিরমিচির করে ওরা ডাকছে...
কী স্পষ্ট কন্ঠস্বর, মনে হয় যেন এইমাত্র টলটলে জলে গলা ভিজিয়েছে!
ভোরের পাখিরা বোধহয় সাগরকন্ঠী হয়...
সাগরের মতন গভীর তাঁদের সংগীতের ঢেউয়ে থাকেনা কোনো ভয়!
ওদের চকিত চাহনি যেন ওদের বয়সের তুলনায় বড় বেশী অভিজ্ঞ,
আকাশের মাত্রাবিহীন সড়কপথ চেনার বিষয়ে ওরা কি ভীষণ বিজ্ঞ।
আজকাল মনে হয় ভোরসকালের গায়ে অজস্র কিচিরমিচির ধ্বনির ছলকে পড়াটা
রীতিমতো বেহেশতি ব্যাপারস্যাপার!
এই শহরের বয়ামসুলভ বন্দীত্বেও ওদের ওই পাগলকরা ডাকাডাকি যেন
সবুজ সৌরভে ভরা পাতাবাহারের ঝাড়!

এখন খুব ভোরেতে পাখি হতে ইচ্ছে হয়...
কিন্তু আমি যে মানুষ,চাইলেই ওদের মতন নিষ্পাপ হতে পারা আমার কর্ম নয়!
ওদেরও কি মানুষ হতে ইচ্ছে করে?
হয়তো এই ইচ্ছেটা ওদের প্রায়ই হয়...
যখন মানুষগুলো ওদের নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে লোহার খাঁচায় বন্দী করে,
যখন মানুষ নামক অমানুষের বুলেটে রক্তাক্ত হয়ে অসহায়ত্বকে স্বীকার করে নিয়ে ওদের মরতে হয়!

হ্যাঁ,আমিও পাখি হবো...
সবুজ পাতার পবিত্র রেহেলে মাথা গুঁজে ঘুমোবো।
আমিও পাখি হবো...
বনফুলের গা ঘেঁষে ,বাদামি মেঘেদের রুমালে বুক ছুঁয়ে ওড়াউড়ি করবো!
রঙধনু থেকে ঠোঁটে করে রঙ এনে নীড়টা সাজাবো...
থাকবেনা মনুষ্য দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভরা কাঁচের সংসার!

পাখি হলে,কোন যানবাহন ছাড়াই বহুদূর আকাশ পাড়ি দিয়ে...
মাঝনদীতে ঠোঁট ডুবিয়ে কয়েক চুমুক জল খেয়ে রোযাদার ব্যক্তির ইফতারের মতন ইতি হবে এক বুক তৃষ্ণার!
আর যদি আহত পাখি হই,নিহত হতে বেশী দেরী লাগবেনা
এই পৃথিবীতে ছোট্ট দেহের ধুকপুকানির দাম আর কয়আনা!

ভোর মুছে গিয়ে সকাল হবার আগ পর্যন্ত শুধুই কিচিরমিচির আর কিচিরমিচির..
এই কিচিরমিচিরে নেই কোনো কৃত্তিম সাউন্ড ইফেক্টের ভীড়।
আড়মোড়া ভেঙে এইতো ওরা জানলায় বসে
পরিচ্ছন্নতা উপহার দিয়ে যায়
নিজেদের ডানা ঝাপটে গ্রীলগুলোর গায়ের ছিঁটেফোঁটা ধূলো উড়িয়ে।
আর আমি...
ভোরের শেষে আকাশপানে আরও একটিবার উঁকি দিই বদ্ধ দালানের জানলায় জড়ানো ভারি পর্দা সরিয়ে,
ওইতো ঝকঝকে আকাশে শুভ্র শঙ্খের মতো টানা টানা মেঘরোদ্দুর...
এখন সারাদিন উড়ে উড়ে পাখিদের রৌদ্রপোড়া ডানায় লেগে রবে আকাশের গন্ধ ঝুরঝুর।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।