বেকার জীবন
- আশরাফুল ইসলাম শিমুল - ইচ্ছেখুশী ২০-০৫-২০২৪

"বছর দুয়েক আগে অনার্স পাশ করেছিলাম
একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে,
সিজিপিএ খুব একটা বেশি না তিন এর উপরে।
এর মধ্যে কতশত চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে যে আবেদন করেছিলাম তাহার হিসাব নেই।
পাঁচ ছয়টা চাকরির কনফার্ম
লেটার ও পেয়েছিলাম
কিন্তুু তাহার বেতন আম আর কলা বেচাকেনার মতো ।
আগে সিগারেট খেতাম না
এখন দিব্বি সিগারেট খাই ,অনেকরাত অবধি
জাগি।
প্রেমিকা আর আগের মত ফোন দেয় না
ফোন দিলেই বলে আর কতদিন চলবে এভাবে ?,
কিছু একটা করো।
তার কথা গুলো রুদ্ধশ্বাসের মতো কানে বাজে
তবুও তাকে দুই একটা কবিতার লাইন
শুনিয়ে দেই।
পরিবারের মানুষগুলো আমার আশায়
বসে থেকে থেকে
বড় ক্লান্ত হয়ে গেছে,
আমায় এখন আর শ্রুতি প্রিতি দেয় না,
আমি বড় বিমূর্তরূপের মানুষ হয়ে গেছি,
আমায় এখন দিব্বি অভিশাপ দেয়,
অভিশপ্ত মানুষের মতো ঘুরে বেড়াই এখানে, ওখানে, সেখানে ।
দুই একটা টিউশনি করাই
হাতে অল্প কয়েকটা টাকা পাই
সিগারেট বিল, মোবাইল বিল, হাত
খরচ দিতেই ফুরিয়ে যায়,
নুন আনতে পান্তা, পান্তা আনতে নুন ফুরানোর মতো ।
বন্ধু বান্ধব আগের মত এখন আমার আমায় সঙ্গ
দিতে ডাকে না,
চায়ের দোকানে দেখা হলে আর
বসতে বলে না,
তারা এখন ভালো চাকরি করে, ভালো বেতন
পায়, তাই তাদের সাথে বসার যোগ্যতয় যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি,
দিন কেটে যাচ্ছে, বয়ে চলেছে সময় খেলাপথ
প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিছুদিন
পরেই বিয়ে।
তার বাবা স্পট জানিয়ে দিয়েছেন কোন
বেকার ছেলের সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিবেন না।
পরিবার ছেড়ে এখন আমি ছোট্ট একটা শহরে থাকি
বন্ধু বান্ধবের গানডি পেরিয়ে আজ ছাব্বিশ
বছরে পা দিয়েছি,
এখন আমি একাকীত্ব মাঝে নিজের
বাস্তবতা খুজি।
এখন আমি প্রাধান্য দিতে শিখেছি নিজের
অনুকাব্য কে,
কবিতা লেখার দারুন সময়, কবিতা লিখি আর
বলি ধুর ছাই, মানুষ বুঝি এমন হয় ?
তবও মূল্যহীন কবিতারা বড় হয়
ডাইরির পাতায় পাতায় ।
চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে এখনো আবেদন করি
চাকরির জন্য কল আপ লেটার ও
আসে কিন্তুু বেতন নগন্য হওয়ায় এখনো উদ্ভ্রান্ত মানুষের মতো ছুটে চলি পৃথিবীর কোলাহলে ।
প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে দুই মাস আগেই,
কিছুদিন আগে ফোন করেছিল, সে এখনো আগের মতই আছে,
ফোন দিয়েই বলে, আমিকে তো হারিয়েছ
নিজেকে হারিয়ে ফেল না ।
যেটা চলে গেছে সেটা ফিরে চেয়, না ,পাবে না
লক্ষ্য খুজে নিতে হবে তোমাকেই
কেউ লক্ষ্য খুজে দিবেনা ।
চুপ করে থেকে থেকে অবুঝ হয়ে যাচ্ছি দিন দিন
সাগরের মতো শীতল
পাহাড়ের মতো স্থির ,
যারা মিশে গেছে কুয়াশায়
নিভে গেছে আধারে ,
চলে গেছে বহুদুরে ,সীমানার ওপারে
তারাইতো আমার আকাশ ছিল,
তারাইতো চলে গেল, কি করবো আমি একলা বয়ে ?
সেদিন ই তার সাথে শেষ কথা,
আর কখনো কোনদিন ফোন করেনি ।
আমি আজ ভীন দেশের পথিক,ভবঘুরে মতো ঘুরে বেড়াই পথে
ঘাটে, শহরের অলিগলির আনাচে কানাচে,
তারপর মাস কয়েক পরে হঠাৎ দাদা ঠাকুরের
সাথে দেখা।
দাদা ঠাকুর অনেক বড় চাকরী করেন
অনেক নাম জস প্রতিপত্তির মালিক তিনি।
আমার সাথে আগে প্রতিদিন চা খেতেন
এখানে দাঁড়িয়ে, এভাবেই চিনি তাঁকে ।

তারপর চা চা খেতে আমার কুশল জানতেই
অকপটে বেড়িয়ে গেল সব কথা ।
দাদা ঠাকুর আমার মুখের দিকে চেয়ে
বলেছিল তুমি অনেক বড় বোকা ।
সেদিনই দাদা ঠাকুরের সাথে বড় শহরে চলে আসি
দাদা ঠাকুরের কম্পানিতে চাকরি করি
ভালো বেতন পাই ।
হতাশা গুলো দিন দিন হারিয়ে যেতে থাকে।
হঠাৎ একদিন বিবর্ণ ঘূর্ণিপাকে
প্রেমিকার সাথে দেখা হয়ে যায়
দেখা হয়ে যায় চিরচেনা বন্ধুবান্ধবের সাথে।
আমরা কেউ থেমে থাকিনা
শুধু থেমে থাকে কিছু কিছু বাস্তবতা ।

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।