আঁধার মানব এবং সন্ধাবালা
- আমিনুল ইসলাম ১৮-০৫-২০২৪

অতঃপর একদিন চাঁদটা খসে পড়লো
জ্বলন্ত মরুভূমিতে!
আকাশ ছেঁদিয়ে পালিয়ে গেল
মিটি তারার বাতিগুলো!
উল্কাদের দৌড়ঝাঁপ,মঙ্গলের চন্দ্রস্নান,
শুকতারার হাসি সবই চলে গেল রূপকথার
দখলে!
আঁধারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে
জোনাকিরাও চলে গেলো
পৃথিবীর মায়া ছেড়ে!
ভোরের সাথে অভিমান করে
টগবগে সূর্যটাও সমুদ্রের ক্ষুধাতুর পেটে
নিজেকে সঁপে দিল!
.
কেউ একজন বললো আমিই নাকি পৃথিবীর
শেষতম মানব!
এক পৃথিবী নিকষকালো আঁধারের একমাত্র
উত্তরাধিকারী!
আঁধারে সাঁতরে বেড়াই,আঁধার খাই,
আবার আঁধার শুষেই জীবনের স্বাদ খুঁজি!
.
এখানে আমার কোন সঙ্গী নেই!
কোন 'তুই' নেই,'তুমি' নেই,
'তোমরা' বলে কেউ নেই!
সারাক্ষণ পালা দিয়ে হুতুম পেঁচারা
আমাকে আমাকে ভয় দেখাতে আসে!
ওরাই আমার আঁধারের সঙ্গী,
ওদের অগ্নিচোখের ভয়াল থাবায়
মাঝে মধ্যে নিজের বিলীয়মান
অস্তিত্বের গন্ধ পাই!
.
এই নিষ্ঠুর আঁধারে ঝিঁঝিঁদের চোখ
জুড়ানো সুর নেই,রাতের নীরবতা নেই,
ঘুম পাড়ানোর মাসিও
সেই কবেই মরে গেছে!
পাতি শিয়ালের হুঁক্কা হুঁয়া ডাকটাও
কেমন ভয়ংকর লাগে!
মৃত্যুর মশাল হাতে কোনভাবে বেঁচে
থাকার চেষ্টায় আছি!
.
কালরাতে হঠাৎ একটা নরম হাতের পরশে
ঘুমটা ভেঙে গেল।
চোখ মেলে দেখি মাথার উপরে ঝুলন্ত
যৌবনের চাঁদ!
আকাশের পেট ছিঁড়ে গড়িয়ে পড়ছে
লাখো-কোটি তারাবাতি!
কয়েকটা নীল জোনাকি খবর নিয়ে এলো
কাল ভোরে নাকি পুব আকাশ লাল হবে!
এতো আয়োজন দেখে বুঝেই গেলাম আমার
সন্ধাবালা এসেছে!
.
বিধ্বস্ত দেহ টা এলিয়ে দিলাম
একটা গজারির গোড়াতে।
একটা চাঁদের পরীর হাতের মুঠোই আমার
তর্জনী আটকে আছে!
গোলাপি ত্বক,চিক্কণ ঠোঁটের বাঁ পাশেই
একফোঁটা কালো তিল!
পাতলা পাতির একজোড়া
কবিতার চোখ,এক চিলতে উঠোনের নিচে
সরু আইলের মতো দু'টি আইব্রু!
.
রুপোলী জ্যোৎস্নায় পরীটাকে চাঁদের
মেয়ের মতোই লাগছিল!
আমি দু'চোখের পাতা দিয়ে এক চুমুক রূপ
খেয়ে তৃষ্ণা মিটালাম!
ক্লান্তিতে ওর মিষ্টি নাকের ডগা থেকে
মুক্তার দানা ঝরছিল!
আমি তাতে একটা হেচকা টান দিয়ে একটু
দুষ্টু হয়ে বললাম
"এই মেয়ে,কপোলে একটা কালো টিপ
পড়ে আসতে পারলেনা? জানোনা চাঁদের
পাশে একটা তারা থাকে?"
ওর লজ্জারাঙা হাসিতে পাগল হওয়ার
আগেই নিজেকে সেই কৃষ্ণগহ্বরে
আবিষ্কার করলাম!

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।